ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

জলাবদ্ধতা যেন নগরবাসীর নিয়তি

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

জুন ২৩, ২০২২, ০৩:০৯ পিএম

জলাবদ্ধতা যেন নগরবাসীর নিয়তি

হালকা বা ভারী বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সড়কপথ দেখলে মনে হয় যেন নৌপথ। বর্ষা মৌসুমে এ যেন রাজধানীর সাধারণ চিত্র। ঋতুচক্রের আবর্তনে আবারও শুরু হয়েছে বর্ষা। তাই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নগরবাসী। এ থেকে পরিত্রাণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নানা প্রকল্প হাতে নিলেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরীর বাসিন্দারা। 

এদিকে নগরবিদরা জানান, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে জলাশয় ও জলাধারসমূহের পানি ধারণ ক্ষমতার ওপর। কিন্তু রাজধানীর জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় কমে গেছে পানির ধারণক্ষমতা। ফলে বারবার এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে দুই সিটিতেই। এ থেকে মুক্তি পেতে নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনা।  

বিমানবন্দর সড়ক, যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগ, নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর, বারিধারা রোড, শান্তিনগর, মালিবাগ, মতিঝিল, মিরপুর-১ ও ২, মাজার রোড, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। হালকা বৃষ্টিতেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। বৃষ্টির ফলে সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বৃষ্টি থামার পর তিন-চার ঘণ্টা পরও রাজধানীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকে। সড়ক থেকে পানি সরতে বহু সময় লাগছে।

এসময় যান চলাচল ও সাধারণ মানুষ বহু ভোগান্তিতে পড়েন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের। এছাড়াও কয়েকটি এলাকার নিম্ন আয়ের বসতগুলোয় পানি থাকায় তারাও পড়েন চরম ভোগান্তিতে।    

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে পাঁচ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯ হাজার ৫৫৬ একর জলাশয়ের মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে তিন হাজার ৪৮৩ একর।

এভাবে খাল, জলাশয় থেকে শুরু করে পুকুর পর্যন্ত প্রভাবশালী দখলদারদের কারণেই বিলীন হচ্ছে বেশি। গত ২২ মে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে আশকোনার জলাশয়সহ ঢাকার সব জলাধার ভরাট বন্ধে আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দেয় ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।  

রাজধানীর বারিধারা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ড শহীদ হারেজ সড়কে বস্তি এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান ও যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগ এলাকার বাসিন্দা কানন দেবনাথসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা জানান, হালকা বৃষ্টি হলেই নর্দ্দা-বারিধারা সড়কে পানি জমে যায়। বৃষ্টি হলেই মিরহাজিরবাগ-কাজীপাড়া সড়কে নিয়মিত পানি জমে। এ অবস্থা বহু বছর ধরেই চলছে। ড্রেনের গভীরতা কম। 

তাছাড়া আশেপাশের অনেক ডোবা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বিভিন্ন এলাকার বস্তির ঘরগুলোতে পানি ওঠে। এছাড়া মিরপুরের বিভিন্ন সড়কসহ রাজধানীর বহু সড়কে বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাদের একটাই মত, বৃষ্টির সময় ড্রেনের পানি সরতে না পারায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। 

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, প্রতিটি এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ উন্মুক্ত স্থান রাখতে হয়। বৃষ্টি হলে সেখানে গিয়ে পানি জমবে। কিন্তু সেসব স্থান ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খোলা স্থান না থাকায় বৃষ্টির পানি সেখানে যেতে পারছে না। ফলে হালকা বা ভারী বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।

আমাদের যে ড্রেনগুলো আছে, সেগুলোর পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা নেই বললেই চলে। জলাবদ্ধতা কমাতে সিটি কর্পোরেশন কাজ করলেও যে জলাবদ্ধতা কমবে তা নয়, বরং যে খালগুলো রয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি খালগুলোর কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। একটি 

নগরীর মধ্যে তিনটি বিষয়ে ভারসাম্য থাকতে হবে : সবুজ এলাকা, কংক্রিট এলাকা এবং জলাশয় এলাকা। সবুজ এলাকা থাকতে হবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। জলাশয় থাকতে হবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। ঢাকা শহরে ৩০ বছর আগেও যে পরিমাণ সবুজ এলাকা ছিল, উন্নয়নের কারণে পুরো শহরজুড়েই কংক্রিটে আচ্ছাদিত এলাকা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বিলীন হচ্ছে সবুজ এলাকা ও জলাশয়।

ঢাকায় এমন অনেক ওয়ার্ড রয়েছে যেখানে ৯০ ভাগ বা তারও বেশি এলাকা কংক্রিট আচ্ছাদিত। জলাশয় বা সবুজ কিছুই অবশিষ্ট নেই। যার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাজধানী ও তার আশেপাশে যেসব জলাশয় ছিল, তার একটি বড় অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।   

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, হরেক রকমের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার আমাদের মন্ত্রী-মেয়ররা দিয়েছিলেন, সেটার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এবং এবার অতিবৃষ্টি হওয়ার যে আগাম সংবাদ রয়েছে, তার কারণে এ বর্ষায় ঢাকা নগরী জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হবে।

তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেমন— পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও গণপরিসর হিসেবে যা বাস্তবায়ন করবেন, সেটি যতক্ষণ না হচ্ছে এবং ব্লু নেটওয়ার্ক নদীর সাথে যতক্ষণ সংযোজিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা  নেই। 

যদি জলাবদ্ধতার বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে দেখতে হয়, তবে ব্লু নেটওয়ার্কের পাশাপাশি চিহ্নিত জলাধারগুলো ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলো দ্রুততম সময়ে কঠোর মানসিকতায় পুনরুদ্ধার করে তাকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ দুটো কাজের পাশাপাশি জনগণকে এ কাজে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী সময়ে এসবের সংরক্ষণ ও পরিচালন নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজগুলো না করে যতই মাঝে মাঝে ময়লা সরানো ও কর্মতৎপরতা দেখানো হোক, তাতে কিছুটা স্বস্তি এলেও স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

Link copied!