ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

অব্যবস্থাপনায় ডুবছে বিমান

মুছা মল্লিক

মুছা মল্লিক

জুন ২৯, ২০২২, ০৬:১৫ এএম

অব্যবস্থাপনায় ডুবছে বিমান

ক্রমশ বাড়ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনিয়ম। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়া, বাকিতে ফুয়েল কিনে অর্থ পরিশোধ করতে গড়িমসি, উড়োজাহাজ লিজ নেয়া থেকে মেরামত, কর্মী নিয়োগ থেকে টিকিট বিক্রি; সবখানেই এখন অনিয়মের ছাপ। এছাড়া উড়োজাহাজ সংরক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সংকটের পাশাপাশি যাত্রীসেবা নিয়েও রয়েছে বিস্তৃত অব্যবস্থাপনা। 

গত তিন অর্থবছরেই প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার ৬৫ কোটি টাকার বেশি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণও পেয়েছে অডিট অধিদপ্তর। আকাশপথে লাল-সবুজের পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় এই শান্তির নীড়ই হয়ে উঠেছে অশান্তির কারণ। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিমানে দক্ষ জনবল নিয়োগ ও কাজের সচ্ছতা নিশ্চিত করতে না পারলে এ সমস্যা সামনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। 

সমপ্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট নিয়োগের অনিয়ম খতিয়ে দেখে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যাপ্টেন হিসেবে বোয়িং ৭৭৭ ও বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ঘণ্টা ফ্লাই করার অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

তবে, বিমানে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের নির্ধারিত ফ্লাইং আওয়ারের অভিজ্ঞতা নেই। কেউ কেউ ক্যাপ্টেন হিসেবে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। আবার কেউ আগের এয়ারলাইন্স থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। কারও কারও বয়স আবার ৬০ এর অধিক। 

অন্যদিকে, নিয়োগ পাওয়া ফার্স্ট অফিসারদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

এদিকে বিমানের অনিয়ম নিয়ে সমপ্রতি বেসরকারি এভিয়েশন অপারেটরদের সংগঠন এওএবি মহাসচিব মফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও শিল্প উপদেষ্টা বরাবর। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়— ভর্তুকি দিয়ে টিকিটের দাম কমিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিমান। 

একই সাথে জেট ফুয়েল কেনাসহ বিভিন্ন সরকারি চার্জ পরিশোধের বিষয়েও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভিযোগ এনেও প্রতিকার চেয়েছে সংগঠনটি। বিমানের প্রায় প্রতিটি শাখায় অনিয়মের আঁতুড়ঘরে রূপ নিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ভাবমর্যাদাও। বিমানের নানা অনিয়মের খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হলো—

পাইলট নিয়োগে অনিয়ম : নির্ধারিত শর্তপূরণ ব্যতীত বিতর্কিত ও অনভিজ্ঞ ১৪ ব্যক্তিকে পাইলট ও কো-পাইলট নিয়োগ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স  কর্তৃপক্ষ। নিয়োগকৃতদের মধ্যে আট ক্যাপ্টেন (পাইলট) এবং ছয় কো-পাইলট (ফাস্ট অফিসার)। সমপ্রতি বিমানের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের চুক্তিভিক্তিক এ নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের অনেকের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। যে কারণে ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বহর। বর্তমানে বিমানের মোটা অংকের অর্থ ব্যয়ে ব্যাংককে থাই এয়ারওয়েজের ট্রেনিং সেন্টারে সিমুলেটর ট্রেনিং করছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে।

ভর্তুকি দিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সে চাপ : বর্তমানে বিমান বিভিন্ন রুটের টিকিটের দাম কমিয়ে ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানের এই অপকৌশল দেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে দাঁড়াতে দেয়নি। দেশে মোট আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স বিভিন্ন সময় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও শেষ পর্যন্ত কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিমানের চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ছিল দুই হাজার ৮৫০ টাকা। আর জিএমজির ভাড়া ছিল চার হাজার টাকা। তবে বিমান তাদের ভাড়া কমিয়ে দুই হাজার ৩০০ টাকা করে ফেলে। এক সময় যখন দুবাই রুটে জিএমজি অধিকসংখ্যক যাত্রী বহন করা শুরু করে সে সময় বিমান তাদের ভাড়া ৪৭৫ ডলার থেকে নামিয়ে ৩৫০ ডলার  করে ফেলে। এর পরপরই জিএমজি   তাদের অপারেশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

লাগামহীন বকেয়া : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন ফি ও পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে জ্বালানি কেনা বাবদ বিমানের বকেয়া ছাড়িয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। দীর্ঘদিন বকেয়া ফেলে রাখায় মাশুল বেড়ে টাকার অঙ্কও বেড়েছে। করোনা ভাইরাসে এমনিতেই বিপর্যস্ত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তার ওপর চেপে বসেছে দেনার বোঝা। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে মাশুল দিতে ব্যর্থ হলে দিতে হয় ৭২ শতাংশ সারচার্জ। বেবিচকের টাকা দীর্ঘদিন পরিশোধ না করায় চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে বিমানের সারচার্জ।

যাত্রীসেবায় অনিয়ম : গত ১৭ জুন সন্ধ্যায় যশোর বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় আসার কথা বিমানের বিজি-৪৬৮ ফ্লাইটের। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকার অভিযোগ করে প্রায় চার ঘণ্টার বেশি বিলম্ব করা হয় ফ্লাইটটি। অথচ একই সময়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভো এয়ারের একাধিক ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে গন্তব্য পৌঁছায়। জানা যায়, সেদিন বিজি-৪৬৮ ফ্লাইটের ওই বিমানটিতে ফুয়েলেরও সংকট ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বিমানটি ল্যান্ড করতে না পারলে ফুয়েল সংকটের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও ছিল। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ ছাড়া বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলেও পর্যাপ্ত যাচিত তথ্য প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান। বিমানের এমন অনিয়ম দৈনন্দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে  যাত্রীসেবার মান।

ভ্রমণ ও খাবার ভাতায় অনিয়ম : বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ভ্রমণ ও খাবার ভাতাও দেয়া হয় এশিয়ার যেকোনো এয়ারলাইন্সের চেয়ে বেশি হারে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ অনিয়মের ফলে দুই বছরে বিমানের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। 

কর্মী নিয়োগে অনিয়ম : অনিয়মের শিকড় ছড়িয়েছে কর্মী নিয়োগেও। ২৪৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয় কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। মানা হয়নি জেলা কোটা এবং বয়সসীমাও।

আয়কর পরিশধে নয়ছয় : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর পরিশোধ নিয়েও নয়ছয় করেছে বিমান। প্রতিষ্ঠানের আয়ের টাকায় পরিশোধ হচ্ছে এসব কর। অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এভাবেই দুই বছরে নিজ কর্মীদের আয়কর দিতে বিমান খরচ করেছে দুই কোটি টাকার বেশি।

লিজ বাণিজ্য : ইজিপ্ট এয়ারের কাছ থেকে বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই ও রুট ঠিক না করেই চারটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান। এরপর শুধুই লোকসানের খতিয়ান। এর মধ্যে একটি উড়োজাহাজ প্রথম ৯ মাস না চললেও গুনতে হয় ভাড়ার টাকা। এরপর চুক্তি অনুযায়ী আগের অবস্থায় ফেরত দিতে গিয়েও যন্ত্রাংশ প্রাপ্তির জটিলতার নামে দুটো বিমান বসে থাকে প্রায় আড়াই বছর। অথচ সি চেক বা মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের এ কাজ শেষ করার কথা ছিল ১৩ দিনেই। এ ক্ষেত্রে বাড়তি প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার ডলার জরিমানার বিধান থাকলেও বিমান তুলতে পারেনি এক টাকাও। উল্টো ইজিপ্ট এয়ারকে চুক্তির বাইরে গিয়ে দেয়া হয় কারিগরি ক্ষতিপূরণ। এ সব কিছু মিলিয়ে বিমানের ক্ষতি হয় ৬৫৫ কোটি টাকার বেশি। শুধু লিজ বাণিজ্যই নয়, বিমানের অনিয়মের ডালপালা ছড়িয়েছে মেরামত, কর্মী নিয়োগ থেকে টিকিট বিক্রি— সব কিছুতেই।

দেনা রেখেই লাভের হিসাব : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি । বিমান বলছে, গত দুই বছরে তারা বেবিচকের কোনো ধরনের চার্জ বকেয়া রাখেনি। পরিশোধ করেছে জেট ফুয়েলের (পদ্মা অয়েল) সব খরচ। তবে, এর আগের বকেয়া পরিশোধের পরিকল্পনা নেই তাদের। অন্যদিকে বেবিচক বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাছে তাদের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা আটকে রেখেছে বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি। বিপুল অঙ্কের এই দেনা পরিশোধের চিন্তা ছাড়াই টানা দ্বিতীয় বছরের মতো লাভ দেখিয়েছে বিমান। 

বিমানের সার্বিক অনিয়মের কারণ ও সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে— এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (অতিরিক্ত সচিব) ড. আবু সালেহ? মোস্তফা কামালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও  সম্ভব হয়নি।

Link copied!