Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪,

বিএনপির সামনে ১৭তম ঈদ!

আবদুর রহিম

জুলাই ৫, ২০২২, ০১:২৭ এএম


বিএনপির সামনে ১৭তম ঈদ!

২০১৪ সালে একটি ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ঈদের পর আন্দোলন করবে বিএনপি। পুলিশ বাহিনী, কিংবা সরকারি দলের নেতারা যদি অস্ত্র দিয়েও বাধা দেয় তার পাল্টা জবাব দেয়া হবে। 

নতুন বার্তা দিয়ে সেদিন এ-ও জানিয়েছিলেন, অতীতের আন্দোলনে ত্রুটি ছিল তাই সফল হওয়া যায়নি, ঈদের পর নেতৃত্বের যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামা হবে। 

এই ঘোষণার পর ১৬টি ঈদ পার, তবুও বিএনপিকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। বরং এর মাঝে দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। তার মুক্তির আন্দোলনেও কিছু করতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। মাত্র কয়েকটি দোয়া মাহফিল, প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন ও কয়েকটি জেলা সমাবেশ করেছে। সরকারের মানবিক সিদ্ধান্তে বর্তমানে তিনি শর্তে মুক্তিতে রয়েছেন। 

আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একাধিকবার বলেছেন, আন্দোলনের জন্য সরকার বিএনপিকে উসকানি দিচ্ছে, সরকার চায় বিএনপি জ্বালাও পোড়াও করুক কিন্তু বিএনপি সেটি বুঝতে পেরেছে। তাই জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে যাবে না। 

গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে সরকারকে হঠাবে। কৌশল গ্রহণ করবে। এমন ভাষ্যর মধ্যে দিয়ে     সামনে ১৭তম ঈদ পালন করবে দলটি। এ নিয়ে দলে এবং নেট দুনিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

দলটির নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৩ বছরে বিএনপি আন্দোলনের শত শত ইস্যু পেয়েছে একটিও কাজে লাগাতে পারেনি, মূলত সূত্র ছাড়া সমাধান খুঁজছে দলটি। 

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বহু বাড়ির মালিক— সেগুলো রক্ষার চিন্তা আগে আসে বলে কোনো কার্যত সিদ্ধান্তে আসা যায় না। 

এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে  তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির ঈদের পর আন্দোলন ১৩ বছর শুনে আসছেন কিন্তু কাজে দেখেননি। 

এ নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, স্বৈরতান্ত্রিক দলের সাথে লড়াই করা একটু কষ্ট। তাই সময় লাগছে। যুক্তি দিয়ে এ-ও বলছে, আইয়ুব খানকে সরাতে ১০ বছর সময় লেগেছে এবং এরশাদকে সরাতেও আট বছর সময় লেগেছে— এই সরকারকেও সরাতে পারবে। 

তৃণমূল নেতাকর্মীরা আন্দোলন চান। মাঠে নামতে চান। এরপরও কেন সম্ভব হচ্ছে না— এ বিষয়ে কয়েকজন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী জানিয়েছেন, দলটির যে নীতি নির্ধারণী ফোরাম রয়েছে স্থায়ী কমিটি তা অকার্যকর। তারা কোনো অদৃশ্য ইশারায় কার্যত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অনেকেই অসুস্থ। বয়স বেড়েছে। চাঙ্গা মনোবলের তারুণ্যভরা কেউ নেই সিদ্ধান্ত নেয়ার। 

আবার কেউ ব্যাংকার, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ হাউজিং নিয়ে ব্যস্ত। বড় নেতারা এককেজন অর্ধশত বাড়িক মালিক। সেগুলো রক্ষার চিন্তায় খালেদা জিয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। 

ফেনী জেলার ইসমাইল হোসেন নামের মাঠপর্যায়ের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কাদের, তোফায়েল, আমু, মতিয়া, মজিবুল হক, মহিউদ্দিন আলমগীর, মায়ার মতো রাজপথে নির্যাতন সহ্য করার শক্তি বিএনপির খুব কম নেতারই আছে। 

ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ও আন্দোলনের কথা এলে ত্যাগ, নির্যাতন, নেতৃত্ব— ওগুলোও মাথায় রাখতে হয় সে ক্ষেত্রে তো আওয়ামী লীগ ভালোই এগিয়ে। আমাদের বিএনপির নেতৃত্বে লোভ ও দুর্বলতা রয়েছে। কৌশল বলে বলে দূরে আছি। খালেদা জিয়ার জন্যও কিছু করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা কলেজের বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক বলেন, মনে রাখা দরকার কই মাছ সবসময় শুকনো মাটি পাড়ি দেয় না। একটা মৌসুম সময় থাকে। আন্দোলন করার জন্য বিএনপি শতশত ইস্যু পেয়েছে তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। এখন ইস্যু ছাড়া ঘোষণা দিয়ে সরকারকে সরিয়ে ফেলবে— এটা সূত্র ছাড়া অঙ্কের সমাধান খোঁজা মাত্র। 

তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির ঈদের পর আন্দোলন, শীতের পর আন্দোলন, পরীক্ষার পর আন্দোলন, এটি গত ১৩ বছর ধরে শুনে আসছি।  জনগণ তাদের আন্দোলনে কখনো সাড়া দেয়নি। জনগণ তাদের ওপর নানা কারণে বিরাগ। কারণ তারা জনগণের বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে না। জনগণের বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেন না। 

তারা কথা বলে, খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়ার শাস্তি নিয়ে এবং জনগণের ওপর তারা পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করেন। তাদের ব্যর্থ আন্দোলন দেখে  রাজনীতিবিদ হিসেবে আমারও কষ্ট লাগছে। ১৩ বছর ধরে শুনে আসছেন ঈদের পরে বিএনপি আন্দোলন করবে। 

বিএনপির পক্ষে আন্দোলন করা সম্ভব না— তথ্যমন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তো আন্দোলন করেছিল বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের সাথে। আর আমরা (বিএনপি) আন্দোলন করছি আওয়ামী লীগের মতো একটি স্বৈরতান্ত্রিক দলের সাথে। যাদের নিজেদের কোনো সংগঠন নেই। আছে শুধু পুলিশ আর কিছু লাঠিয়াল বাহিনী। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সময় লাগে। 

তিনি আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ও পাকিস্তানের ইতিহাসেও আন্দোলনে সময় লেগেছে। পাকিস্তানের আইয়ুব খানকে সরাতেও ১০ বছর সময় লেগেছে এবং এরশাদকে সরাতেও আট বছর সময় লেগেছে। সুতরাং আমরা আন্দোলনে আছি এবং সফলকাম হবো। জনগণকে নিয়েই সফলকাম হবো।   
 

Link copied!