ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

প্রতারিতরাই এখন প্রতারক

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ৫, ২০২২, ০৭:০৩ এএম

প্রতারিতরাই এখন প্রতারক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৭০০-৮০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ চক্রের সদস্যরা কর্মজীবনের শুরুতে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারণার শিকার হয়। পরে তারা নিজেরাই প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন— চক্রের মূলহোতা মো. মাছুম বিল্লাহ (৩৩), খাইরুল আলম রকি (২০), মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ (২২), মো. মাহমুদুল হাসান (৩২), মাসুদ রানা (২৪) ও এসএম রায়হান (২৪)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, আটটি সিম কার্ড, নগদ পাঁচ হাজার ৫৪০ টাকা, একটি মনিটর, স্ট্যাম্প প্যাড দুটি, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড ব্যানার দুটি, শতাধিক ভর্তি ফরম, দুই শতাধিক সিভি, দুটি চেকবই, পাঁচটি স্ট্যাম্প, দুটি অঙ্গীকারনামা, ভিজিটিং কার্ড, পণ্য তালিকা, মূল্য তালিকা, অর্ধশতাধিক ডিপো ও নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারণার শিকার হয়। এরপর তারা নিজেরাই প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তারা পেশাদার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা সুপরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করত।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার মো. মাছুম বিল্লাহ এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা। সে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিত। তার আইনজীবী পরিচয়ের কারণে ভুক্তভোগীরা তাকে ভয় পেতেন। সে ভুক্তভোগীদের মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করত। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার কারণে সে সুকৌশলে তার প্রতারণাকে বৈধভাবে উপস্থাপন করার জন্য ভুয়া লাইসেন্স তার অফিসে ঝুলিয়ে রাখত এবং তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এবং গভ. রেজিঃ নং সি-১৫৭৭৬৩ উল্লেখ করত।

তার অন্যতম সহযোগী গ্রেপ্তার খাইরুল আলম রকি ও মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ আগে সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি নামসর্বস্ব কোম্পানিতে একইভাবে প্রতারণার কাজ করত। কোম্পানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর তারা মাছুম বিল্লাহর সঙ্গে যোগ দেয়। গ্রেপ্তার খায়রুল আলম রকি অফিসে আসা চাকরিপ্রার্থীদের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাই করে জামানতের টাকা আদায় করত।

গ্রেপ্তার কামরুজ্জামান ডেনিশ, এসএম রায়হান ও মাসুদ রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সারা দেশব্যাপী আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে নিয়ে আসত। গ্রেপ্তার মো. মাহমুদুল হাসান চাকরিপ্রার্থীদের ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র জমা নিত।

র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সরকার অনুমোদিত, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড গভ. রেজি. নং সি-১৫৭৭৬৩ লেখা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করত। যা দেখে চাকরিপ্রার্থীরা সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান বলে মনে করত। এছাড়াও এসএসএফ একটি বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার নাম হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানকে তাদের অঙ্গসংগঠন মনে করত। বিজ্ঞপ্তিতে সিকিউরিটি গার্ড, সহকারী সুপারভাইজার, সুপারভাইজার, সিকিউরিটি ইনচার্জ, মার্কেটিং অফিসার (পুরুষ), মার্কেটিং অফিসার (মহিলা), অফিস সহকারী, লেডি গার্ড, অফিস রিসিপশনস (মহিলা) পদের বিপরীতে উচ্চ বেতন লেখা থাকত।

এছাড়াও আকর্ষণীয় সুযোগ হিসেবে থাকা ফ্রি, খাওয়ার সুব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার ওপর পদোন্নতি, অভিজ্ঞতা না হলেও চলবে, কর্মঠ ও সুদর্শন হতে হবে— এসব লোভনীয় প্রস্তাব উল্লেখ করা থাকত। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দেয়া থাকত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতী, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতারণার দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের অফিস থেকে চাকরিপ্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বলা হতো। প্রতারণার তৃতীয় পর্যায়ে নির্দিষ্ট তারিখে চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে আসার পর তাদের একটি ফরম পূরণ করতে দেয়া হতো। ফরমে সংযুক্তি হিসেবে ছবি, অঙ্গীকারনামা, প্রার্থীর নিজ এবং বাবা ও মায়ের এনআইডির কপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, নাগরিকতার সনদপত্র দিতে হতো।

পরে প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাই করা হতো। এরপর তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং এবং আইডি কার্ড বাবদ সাড়ে ১২ হাজার টাকা জামানত আদায় করা হতো। তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো প্রার্থীর কাছে ওই পরিমাণ টাকা না থাকলে তাদের কাছে যা আছে তাই আদায় করা হতো এবং বাসায় গিয়ে বিকাশের মাধ্যমে বাকি টাকা পরিশোধ করার জন্য বলত চক্রটি। কিন্তু জামানত হিসেবে টাকা গ্রহণের কোনো রশিদ দিত না প্রতারকরা। একটি নির্দিষ্ট তারিখে তাদের কাজে যোগদান করার জন্য বলা হতো।

পরে সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেয়া হবে। কিন্তু কাজে যোগদান করার পর চাকরিপ্রার্থীদের কোনো বেতন দেয়া হতো না।

ভুক্তভোগীরা কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে তারা বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজে লিখিয়ে নেয়া হতো তারা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে এবং কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোনো আর্থিক লেনদেন নেই।

এভাবে অভিযুক্তরা গত ৮ মাসে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন চাকরিপ্রার্থীকে দিয়ে তাদের কোম্পানির নিয়োগ ফরম পূরণ করিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের নামে তারা কোম্পানি পরিচালনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেয়নি।

Link copied!