ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

আবাসিক হোটেল দুর্বৃত্তদের আখড়া

নুর মোহাম্মদ মিঠু

আগস্ট ৬, ২০২২, ১২:৩৯ এএম

আবাসিক হোটেল দুর্বৃত্তদের আখড়া

দিন দিন অনিরাপদ ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে দেশের আবাসিক হোটেলগুলো। এর নেপথ্যের কারণ— হোটেল মালিক-ম্যানেজার ও কর্মচারী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে মাদক সেবন, দেহব্যবসা থেকে শুরু করে খুন-খারাবিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই, যা সংগঠিত হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাও এখন পার্ক ছেড়ে উঠছে আবাসিক হোটেলে। অনৈতিক কাজের অভিযোগে আটকও হচ্ছে পুলিশের হাতে।

আর এসবের সুযোগও করে দিচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষই। যার বিনিময়ে ঘণ্টা চুক্তিতে উচ্চমূল্য পাচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য এখন আর নির্দেশনা থাকলেও আবাসিক হোটেলগুলোতে আগত বোর্ডারদের তথ্যও নথিভুক্ত করা হচ্ছে না রেজিস্ট্রারে।

এতে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। দীর্ঘসূত্রতারও সৃষ্টি হচ্ছে ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়ায়। এমনই জটিলতায় পড়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকার বৈশাখী আবাসিক হোটেলের একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে দীর্ঘ পাঁচ বছর সময় লেগেছে পুলিশের।

গত ২৭ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এ মামলার রহস্য উন্মোচন করে। পিবিআই জানায়, ওই হোটেলে মেয়েদের এনে অনৈতিক কাজ করানো হতো এবং হোটেল কর্মচারীরাও জোরপূর্বক মেয়েদের সাথে অনৈতিক কাজ করত।

২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ২৫ বছর বয়সি অজ্ঞাত এক নারীর সাথে হোটেল কর্মীরা জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করতে চাইলে বাধা দেয়ায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ড্রামে ভরে হোটেলের স্টোর রুমে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা।

পাঁচ বছর পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হলেও জানা যায়নি ওই নারীর পরিচয়। গেল ৭ জুলাইও কক্সবাজারে নির্জন রিসোর্ট নামে আবাসিক হোটেলে এক তরুণী খুনের ঘটনা ঘটে।

লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানায়, তরুণীর দুই হাত ওড়না দিয়ে বাঁধা ছিল। স্বামী পরিচয়ে ওই তরুণীর সাথে হোটেলে ওঠা ব্যক্তিই তাকে খুন করে পালিয়েছে। অথচ হোটেল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, হোটেলের নিবন্ধন খাতায় তাদের নাম ও পরিচয় নথিভুক্ত করা হয়নি। ঘটনার পর থেকেই স্বামী পরিচয় দেয়া ব্যক্তি পলাতক থাকায় জানা যায়নি তরুণীর পরিচয়ও।

এছাড়া রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে আবাসিক হোটেলগুলোতে। ১ আগস্ট সোমবার বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীরুল ইসলাম। পরদিনই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।

তানভীর বরগুনা বামনার কোলাগাছি এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। যদিও এখন পর্যন্ত তার বগুড়ায় আসার কারণই জানা যায়নি। জানা যায়নি, এটি আসলে হত্যা নাকি আত্মহত্যা।

তবে অনেকেই ধারণা করছেন, এর নেপথ্যে প্রেমঘটিত কোনো কারণ থাকতে পারে। ১৯ জুলাই পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রোজ গার্ডেন নামে একটি আবাসিক হোটেল থেকে সাদিকা ইসলাম ওরফে রিচি (১৮) নামে এক তরুণীরও ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রায়হান (২০) নামে এক যুবকের সাথে রোজ গার্ডেনে উঠেছিলেন ওই তরুণী।

এই ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষ নিহত তরুণীর ঠিকানা জানাতে পারলেও অধিকাংশ হোটেলই এসবের তোয়াক্কা করছে না। বরং কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের ঘণ্টাপ্রতি মূল্য ধরে হোটেল কক্ষ ভাড়া দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

শুধু তাই নয়— এমন সুযোগের তথ্য গোপনে মার্কেটিংও করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। সম্প্রতি বেশ কটি জেলায় পুলিশ এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালালে মেলে সত্যতাও। পুলিশের অভিযানে অনৈতিক কাজে জড়িত অবস্থায় ধরাও পড়ছে শিক্ষার্থীসহ গৃহবধূরাও। গৃহবধূদের বেশির ভাগই পরকীয়ায় আসক্ত। এভা

বে শিক্ষার্থী ও গৃহবধূদেরও আবাসিক হোটেলে তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই রুম পাওয়ার বিষয়টি সহজ হওয়ার সাথে সাথে যেমন অনৈতিক কাজ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, তেমনি এর প্রভাবে খুন-খারাবিও বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ— এমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করছে।

সম্প্রতি পাবনা শহরের ইভনিং টাচ হোটেলে অভিযান চালিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় হাতেনাতে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

জেলা ডিবির ওসি আনোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন,  এ শহরের বেশির ভাগ হোটেলেই ঘণ্টাপ্রতি উচ্চমূল্যে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দিয়ে চলছে এসব ব্যবসা। এতে খুব সহজেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা।

তারা জোড়ায় জোড়ায় হোটেলে প্রবেশ করছে। পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকারাও সহজেই আসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কয়েক মাস আগে ইভনিং টাচ আবাসিক হোটেল-২ তেও অভিযান চালিয়ে বেশ কজন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, আবাসিক হোটেলগুলো অনৈতিক কাজের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। এর আগেও (১৩ জুলাই) পাবনার অভিজাত আবাসিক হোটেল ড্রিম প্যালেস থেকে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গৃহবধূসহ ১১ জনকে আটক করা হয়।

একই অভিযোগে ২৯ জুন বগুড়ার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৩৮ জনকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১৫ জন নারী ২৩ জন পুরুষ। রয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও। শহরের সাথমাথা, মাটিডালি, চারমাথা ও তিনমাথা এলাকায় ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

৬ মে কুমিল্লার আলেখারচর এলাকায় বৈশাখী আবাসিক হোটেলেও অভিযান চালিয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ তরুণ-তরুণীকে আটক করে পুলিশ।

আটকরা হলেন— শাহনাজ বেগম, ফারহানা আক্তার, রুজিনা আক্তার, তাসলিমা আক্তার, বাজিল আক্তার, বিবি রহিমা খাতুন শিল্পী, সুমা বেগম, ফাতেমা আক্তার জেসী, রোমানা আক্তার, সোহেল, ইউনুস, জয়নাল, সুমন চন্দ্র ভৌমিক, দুলাল, সাদ্দাম ও পলাশ। পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই কুমিল্লার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছিল।

এমন তথ্যেই অভিযান চালানো হয়। এর আগে ফরিদপুর শহরেও একই অভিযোগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনা করে আট জনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার গোয়ালচামট রাসেল শিশুপার্ক সংলগ্ন হোটেল নিউ গার্ডেনসিটি থেকে তাদের আটক করা হয়। নিউ গার্ডেনসিটি আবাসিক হোটেলের মালিক, ম্যানেজার, কর্মচারীরা স্বাভাবিক রুম ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে রুম ভাড়া দিয়ে নারী-পুরুষের দৈহিক মেলামেশাসহ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেহ ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই আবাসিক হোটেলের পরিচালনাকারী মিলন মোল্লা ও জিল্লুর রহমানের প্রকাশ্য মদদ ও ইন্ধনে হোটেল ম্যানেজার মাজেদ, ইকরাম, শহিদ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে হোটেলের রুম ভাড়া দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপসহ পতিতাবৃত্তি পরিচালনা করে আসছে।

পুলিশ বলছে, ২০০৮ সালের মার্চ মাস থেকে আবাসিক হোটেলের বোর্ডারদের নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। অপরাধ সংঘটনের পর পালিয়ে গেলে অপরাধীকে শনাক্ত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও বোর্ডারদের ছবিও তুলে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।

মোবাইল ফোন নম্বর সঠিক কি-না তা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করে নিতে বলা হয়। পূরণ করা তথ্য ফরমের ফটোকপি প্রতিদিন স্থানীয় থানায় পাঠানোর নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা মানছেন না হোটেল মালিকরা।

তবে হোটেল মালিকরা বলছেন, নিয়মিত চাঁদা দিয়েই হোটেল ব্যবসা চালাতে হয়। তাই হোটেল মালিকরা বাড়তি ঝামেলায় যেতে চান না। চাঁদাসহ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই কোথাও কোথাও হয়তো অনৈতিক কাজের সুযোগ দিচ্ছে বলেও অনুমান করছেন হোটেল মালিকদের কেউ কেউ।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হোটেলগুলোতে অপরাধ ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।

Link copied!