ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

ভূমিবিরোধে নালিশের জায়গা নেই

শরিফ রুবেল

আগস্ট ৮, ২০২২, ১২:৫৮ এএম

ভূমিবিরোধে নালিশের জায়গা নেই

জায়গা জমি নিয়ে অন্তহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। যে ভোগান্তির শুরু আছে শেষ নেই। জমির কাগজ আছে, দখল নেই। কারো আবার দখল আছে, কাগজ নেই। কেউ স্বত্বের মামলার রায় ডিগ্রি পেয়েও পাচ্ছেন না দখল।

প্রতিকার চেয়ে যুগের পর যুগ ভূমি অফিস ও আদালতে ঘুরে কাজ হচ্ছে না। সমাধান পাবেন কোথায়। যেন নালিশেরও জায়গা নেই। সালিশ করারও মানুষ নেই। যারা আছে তাদেরও ভিত্তি নেই। যেন জমিজমা সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই।

তাৎক্ষণিক প্রতিকারেরও ব্যবস্থা নেই। যদিও প্রতিকার হয়, সেটা পেতেও পার হচ্ছে যুগের পর যুগ। এমনকি মালিকানা প্রমাণে সহিহ কাগজপত্রেরও যেন কোনো মূল্য নেই। প্রাধান্য পাচ্ছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ তত্ত্ব। ভূমিদস্যুদের কাছে পরাস্ত হচ্ছেন অসহায়রা। অনেকের সঠিক কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বেদখল হচ্ছে বসতভিটা। ফলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ভূমি-অপরাধ। ঘটছে খুন-খারাবি।

বিচারাঙ্গনে বাড়ছে মামলার স্তূপ। আর অতিরিক্ত মামলা চাপে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে সরকারকে। ভুগছে বিচার বিভাগ। প্রকৃতপক্ষে জমি জবর দখলের সরাসরি কোনো শাস্তি বিধান দণ্ডবিধিতে নেই। নেই ভূমির প্রকৃত মালিকের প্রাথমিক নালিশ করার জায়গাও।

বিদ্যমান ব্যবস্থানুযায়ী, দরিদ্র, নিরীহ ব্যক্তির জমি জবরদখল হলে থানায় ছুটে যান। কিন্তু জমির মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান থানা। দেওয়ানি আদালতই ভূমি মামলার একমাত্র সমাধান হওয়ায় বিপাকে ভুক্তভোগীরা। শেষ নেই ভোগান্তির।

সম্প্রতি সময়ে জোর করে জমি দখলের ঘটনা বেড়েছে। তেমনি বেড়েছি ভূমিকেন্দ্রিক ফৌজদারি অপরাধ। অনেকে বসতভিটা হারিয়ে হচ্ছেন বাস্তুচ্যুত।

সারা দেশে ভূমিদস্যুরা পরিকল্পিতভাবে জাল কাগজ তৈরি, ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জমি জবরদখল করছেন। এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। মানছেন না গ্রাম আদালতের সালিশ। চলে যাচ্ছেন দেওয়ানি আদালতে। জবরদখলদারিত্বের পক্ষে ‘স্থিতি আদেশ’ এনে দখলস্বত্ব বজায় রাখছেন।

পক্ষে আনা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল, সেই আপিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট, হাইকোর্টের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর রিভিউ— এসব করে জীবন পার হয়ে যায় ভুক্তভোগীর। ভূমির দখল হারানো ব্যক্তি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। গেরস্থ থেকে বাড়িঘর বিক্রি করে ভিক্ষুক হচ্ছেন। অনেকে ন্যায়বিচারের সুফলও দেখে যেতে পারেন না।

এমনই একজন আলাউদ্দিন। নিজ বসতবাড়ি নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে বিরোধে জড়িয়েছিলেন। তার বসতভিড়ার মালিকানা দাবি করে দখলে নিতে পাঁয়তারা চালায় প্রতিবেশী হামিদ সিকদার।

প্রতিবেশী হামিদ সিকদার ক্ষমতাবান হওয়ায় পেশিশক্তি ও জাল দলিল ব্যবহার করে তার তিন পুরুষের ভোগদখলকৃত জমি অর্ধেকটা দখলও করে নেয়। উপায়ান্ত না পেয়ে মাদারীপুর সহকারী জেলা জজ আদালতের সরণাপন্ন হন। কিন্তু সেখানেও বাধে বিপত্তি। আদালতেও বিবাদী অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে একপ্রকার নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন।

১৯৮৮ সাল থেকে নিম্ন আদালতে ১০ বছর মামলা চালিয়ে অবশেষে পরাজিত হন আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিনের ছেলের দাবি রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে রায় উল্টে দেয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতে পরাজিত হয়েও হার মানেনি তিনি, জমি ফিরে পেতে আপিল করেন উচ্চ আদালতে। হাইকোর্টে তিন বছর মামলা চালিয়ে ২০০১ সালে অপূর্ণ আশা নিয়েই মারা যান আলাউদ্দিন। তার মৃত্যু পরবর্তী মামলার হাল ধরেন ছেলে নুরুল ইসলাম।

এর পর থেকে আজ অবদি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করছেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু এখনো এ মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায়ই তুলতে পারেননি। একপ্রকার গোলক ধাঁধায় পড়ে রয়েছেন নুরুল ইসলাম। বসতভিটা হারিয়ে আক্ষেপ করছেন, ফিরে পাবেন সেই আশাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। নুরুল ইসলামও তার জীবদ্দশায় এই মামলার নিষ্পত্তি দেখে যেতে পারবেন কি-না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিন মামলা চালাচ্ছেন ১৮ বছর ধরে।

মামলার বর্তমান বাদী নুরুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, বাবা অনেক টাকা খরচ করেছেন এই জমি উদ্ধারের জন্য। এখন আমিও করে যাচ্ছি। বাবাসহ আমি অন্তত ৬০ বার এ মামলার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক ডজনেরও বেশি বার এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত কিংবা পাল্টা স্থগিত হয়েছে। আলাউদ্দিন একটি সত্য ঘটনার দৃষ্টান্ত মাত্র।

এ ধরনের ঘটনা সারা দেশে লাখ লাখ ঘটছে। কাগজ আছে-দখল নেই। দখল আছে তো কাগজ নেই। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় বিরোধ। হচ্ছে খুনোখুনি। যুগ যুগ ধরে চলছে মামলাও। শত শত বছর আগে প্রণীত ব্রিটিশ আইনের আওতায় চলছে এসব মামলা। মামলার ‘শুরু’ আছে তো ‘শেষ’ নেই।

জানা যায়, সারা দেশের আদালতগুলোতে ফৌজদারিসহ নানা অপরাধে যত মামলা আছে, তার ৮০ শতাংশই ভূমি নিয়ে। খুন-খারাবির মতো ভয়ানক ঘটনাও ঘটছে ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে। ফলে দীর্ঘদিনে এই মামলার জটও এখন মহাজটে পরিণত হয়েছে। জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া, দেওয়ানি আদালত থাকলেও তার এক-চতুর্থাংশে বিচারক না থাকা, দেওয়ানি আদালতে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম চলা, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বাদী-বিবাদীর মৃত্যু ও আদালতে আসতে সাক্ষীদের অনীহাও মামলা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ভূমি-প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা ভূমিদস্যুদের সুবিধার্থে ভূমি-মালিকানার একটি সংজ্ঞা দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। তথাকথিত এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ভূমিমালিকানার পক্ষে তিনটি বিষয় আবশ্যক— ১. দলিল; ২. দাখিলা এবং ৩ দখলস্বত্ব। এ অনুযায়ী দলিল ও দাখিলা সত্ত্বেও কেবল দখল না থাকলে জমির মালিক জমির মালিকানা হারাবে। অর্থাৎ অপরের অধিকার হরণকারী, লোভী, চতুর, ক্ষমতাধর ভূমিদস্যুই পাবেন মালিকানা। কারণ পেশিশক্তি বলে অন্যের জমি দখল করতে সক্ষম। সে ক্ষেত্রে ভূমি-প্রশাসনের চূড়ান্ত সেবাটি নিবেদিত কেবল ভূমিদস্যুর কল্যাণে। অন্যায়-অবিচারের শিকার দখলচ্যুত ভূমি মালিক ভূমি-প্রশাসনের কার্যত কোনো পরিষেবাই পাচ্ছেন না।

দখলচ্যুত নালিশ জানাবে কোথায় : ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে চুরির শাস্তি রয়েছে তিন থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড। ডাকাতির শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড। অথচ জমি জবরদখলের সরাসরি কোনো শাস্তি দণ্ডবিধিতে নেই। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ভূমির প্রকৃত মালিকের প্রাথমিক নালিশ করার কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি। বিদ্যমান ব্যবস্থানুযায়ী, দরিদ্র, নিরীহ ব্যক্তির জমি জবরদখল হলে থানায় ছুটে যান। থানা বলে দেয়, এটি জমিজমার বিষয়। দেওয়ানি মামলা।

তিনি হয়তো ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি) অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা এসি (ল্যান্ড) যাওয়ার পরামর্শ দেন। এসি (ল্যান্ড) বলেন, জমির দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়-আদালতে যান। দেওয়ানি মামলা নিয়ে আদালতে গেলে আইনজীবীর ফি, মামলা পরিচালনা ব্যয়, শারীরিক সুস্থতা, সক্ষমতা ও ধৈর্যের বিষয়। দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেশের বিচার ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা। জাল-জালিয়াতি, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রভাবশালী দখলদার পক্ষ জটিলতা সৃষ্টি করে মামলাকে ২৫-৩০ বছরের ফাঁদে ফেলে দিতে পারেন অনায়াসেই। বিপরীতে দুর্বল, দরিদ্র ভূমি মালিক ক্লান্ত হয়ে পড়েন দেওয়ানি মামলার শুরুতেই। আদালতে তার পক্ষে মামলা যুগ যুগ ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

ঝুলছে ১৪ লাখ মামলা, সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জট : সর্বশেষ ২০২০ সালের সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৭টি। আপিল বিভাগে ১৫ হাজার ৫৩৩টি ও ফৌজদারি সাত হাজার ৮৯৮টি। হাইকোর্ট বিভাগে ৯৭ হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৮টি। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ভূমি আপিল বোর্ড, নিম্ন আদালত, ঢাকাসহ সারা দেশের ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা তিন লাখ তিন হাজার ৩৫টি। করোনার কারণে দুই বছর মামলার তালিকা হালনাগাদ করতে পারেনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

তবে গেল জুন মাসে সারা দেশে বিচারিক আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার  পরিসংখ্যান চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে প্রতিটি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৪২টি জেলায় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আইন মন্ত্রণালয়। বাকি ২২টি জেলাকে ভাগ করে সেগুলো ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একীভূত করা হয়।

তবে একীভূত জেলাগুলোর অধিবাসীরা দূরত্বের কারণে ৪২ জেলার সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে আগ্রহী হননি। তারা নিজ জেলার আদালত ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসগুলোতে ভূমিবিরোধ-সংক্রান্ত মামলা করেছে।

উচ্চ আদালতের এক প্রতিবেদনে এই ২২ জেলায় সার্ভে ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলা পাওয়া যায়নি। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে গত দেড় দশকে আদালতের সংখ্যাও তিনগুণ করেছে সরকার। তার পরও ভূমিসংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না।  

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভূমিবিরোধ মামলার বিচার সংকট দীর্ঘদিনের, এটি সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি।

আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত এর সমাধান খুঁজে বের করা। ভূমির মামলা তিন-চার যুগও পার হয়ে যায় তবুও মামলার ফলাফল পাওয়া যায় না— এটি জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। মামলা ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হওয়ায় মামলার জট কমছে না।

কারণে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। একটি নতুন দেওয়ানি মামলা হাইকোর্টের বেঞ্চে নেয়া হলে দেখা যায়, তালিকায় আসতেই ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে মামলাটি আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। কার্যতালিকায় ওঠাতেই লেগে যায় দু’-তিন বছর।’  

Link copied!