ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

মিলগেটে অহেতুক উত্তাপ

রেদওয়ানুল হক

আগস্ট ৯, ২০২২, ০১:১৭ এএম

মিলগেটে অহেতুক উত্তাপ

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আগে উত্তাপ ছড়িয়েছে চালের বাজারে। নতুন অজুহাত পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। তবে অহেতুক দাম বাড়ানোর অভিযোগ মিলারদের বিরুদ্ধে। পরিবহন খরচের ঝামেলা না থাকলেও তাৎক্ষণিক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বড় মিলমালিকরা। কোনো কারণ ছাড়াই বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বাড়িয়েছে মিলগুলো।

আড়তদাররা বলছেন, ট্রাক ভাড়া চার-পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। এতে বস্তাপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু মিলে দাম বাড়ার তো কোনো কারণ নেই।

অন্য দিকে, আড়ত মিল ছাপিয়ে ইতোমধ্যে খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাল বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা এলাকার বিসমিল্লাহ আড়তের মালিক সুজন আমার সংবাদকে বলেন, ‘মিলগুলো অহেতুক চালের দাম বাড়াচ্ছে। যে চাল তিন হাজার ২০০ টাকায় কিনেছি রশিদ মিল থেকে— আজ তা ১০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। অন্য মিলগুলোর অবস্থা আরও খারাপ, তারা ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। এই প্রতিবেদকের সামনে কয়েকটি মিলে কল করেন সুজন।

তাতে দেখা যায়, আকিজ মিল তিন হাজার ৪০০-৫০০ দাম চাচ্ছে, তীর তিন হাজার ৩৫৫ দাম চেয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে (অর্থাৎ দাম আরও বাড়াবে), দাদা সালাম তিন হাজার ২৫০ টাকা দাম চেয়ে সরবরাহ বন্ধ রেখেছে, মোজাম্মেল ও এরফান দাম চাচ্ছে তিন হাজার ৪০০ টাকা। তবে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ জানাননি এসব মিলের কর্তাব্যক্তিরা।

এছাড়া ১৭ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া বেড়ে ২২-২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি পরিবহন খরচ ও বর্ধিত দাম মিলে ৪০০-৫০০ টাকা বেড়েছে। কেজিতে বেড়েছে আট থেকে ১০ টাকা। এ চাল যখন খুচরা বাজারে যাবে তখন কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বাড়বে।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে তদারকি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

পরিবহন খরচ না থাকলেও মিলগেটে কেন দাম বাড়ছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা মিলমালিকদের সাথে কথা বলব। কথা বলবেন নাকি অ্যাকশনে যাবেন?

এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে সমস্যা জানতে চাইব। সদুত্তর দিতে না পারলে অ্যাকশনে যাবো।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে চালের উৎপাদন ও আমদানির বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী চালের কোনো সংকট নেই, তবুও চালের দামে কোনো হিসাবই মিলছে না।

সংশ্লিষ্টরা বর্তমান বাজারমূল্যকে ভুতুরে দাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ দেশে চালের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে। এরপর আমদানিও হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার আমদানি খরচও ৫০ শতাংশ কমেছে। সরকারি গুদামে মজুতও আছে পর্যাপ্ত। সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বাজারে চালের সরবরাহও স্বাভাবিক।

তারপরও ভড়া মৌসুমে চালের দাম অস্বাভাবিক। সাধারণত মৌসুম এলে দাম কমে সেখানে উল্টো বাড়ছে। সিন্ডিকেট চক্র ও কর্পোরেট গ্রুপগুলো বাজার কারসাজি করছে বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও সক্ষমতা না থাকায় সিন্ডিকেটের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না।

অপর দিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্তারা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই দায়মুক্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটকে থামানো না গেলে মৌসুম শেষ হতেই আরও বড় ধাক্কা আসতে পারে চালের বাজারে।

সম্প্রতি কোন পণ্য আমদানিতে কেমন খরচ হয়েছে সে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর গম আমদানি ব্যয় ১৭ শতাংশ বেড়ে ২১৪ কোটি ডলার হয়েছে। তবে চালে ৫০ শতাংশ কমে ৪৩ কোটি ডলারে নেমেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, দেশে চালের মাথাপিছু চাহিদা ১৫২ কেজি। সর্বশেষ জনশুমারির-২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যা  ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। তাতে চালের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় দুই কোটি ৫১ লাখ চার হাজার ১০৯ টন।

এর সঙ্গে বীজ ও অপচয় এবং পশুখাদ্য বাবদ ১৫ শতাংশ যোগ করে মোট চালের প্রয়োজন দাঁড়ায় দুই কোটি ৮৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭২৬ টন। বিপরীতে এর চেয় বেশি পরিমাণ চাল দেশে উৎপাদন হয়। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুসারে ২০২০-২১ সালে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছে তিন কোটি ৮৬ লাখ টন। এর আগের বছর উৎপাদিত হয়েছিল তিন কোটি ৬৬ লাখ টন।

২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব এখনো চূড়ান্ত না হলেও দেশে আমন ও বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। অন্য দিকে, সিলেট ও হাওড় অঞ্চলে বন্যায় কিছু ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে উৎপাদিত চালের পরিমাণ চার কোটি টনের কাছাকাছি থাকবে। অর্থাৎ দেশে চালের মোট চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ চাল উৎপাদন হচ্ছে।

এরপরও দেশে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে প্রায় আট লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ টন চাল আমদানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৫০ লাখ টন।

কোনো কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। খোলাসা করে বলতে গেলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান, আমদানির অনুমতি, শুল্ক হ্রাসসহ সরকার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। চার দফায় এ পর্যন্ত ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। তারপরও রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৮ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি বস্তা চাল তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা। কয়েকদিন আগে এর দাম ছিল ৬৩ থেকে ৭০ টাকা। অন্য দিকে, কেজিতে চার টাকা বেড়ে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকায়।

আর এক বস্তা চাল তিন হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ জাতীয় চাল কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার  টাকায়। মোটা চালের দামও বেড়েছে। এ মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে অবশ্য চালের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। টিসিবির সোমবারের বাজারদরের তালিকা বলছে, রাজধানীর বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝারি ধরনের চাল ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তে শুরু করেছে। দাম স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে আরও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। একই সাথে শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। ১২ আগস্ট পর্যন্ত এলসি খোলার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আরও পাঁচ লাখ টন এলসি খোলা হবে বলে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থাৎ সরবরাহ চেইন ভালো আছে। কিন্তু সংকট কাটছে না। বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৭ লাখ টন। তবুও এ বছর ভরা মৌসুমে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। দাম স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর চালের বাজারে মাসব্যাপী যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে।

এরপর চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৬২ শতাংশ থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩০ জুন থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবুও দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি কর্পোরেট গ্রুপগুলোর অতি মুনাফার লোভ দায়ী বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, সরকারি হিসাবে দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু তেল ও অন্যান্য পণ্যের মতো চালের বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা অধিকার বাজারে অভিযান চালিয়েছে। তাতে দেখা যায়, পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী ও মিলমালিক সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। তবে কর্পোরেট গ্রুপগুলো দাম বৃদ্ধিতে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে।

Link copied!