ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড

রেদওয়ানুল হক

আগস্ট ১১, ২০২২, ১২:২৮ এএম

প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড

আন্তর্জাতিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দামে প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। যা দেশীয় মুদ্রা টাকার মান কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীর সব খাতে প্রভাব বিস্তার করছে।

অন্য দিকে শিক্ষা-চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যেতে মানুষ ডলার পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে প্রয়োজন মিটাচ্ছে। এতে সংকট আরও বাড়ছে।

এর মধ্যেই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে কিছু কিছুও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। ফল স্বরূপ গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ২৫ টাকা বেশি দামে ১২০ টাকায় খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে।

দেশের ইতিহাসে এর আগে এ ঘটনা কখনো ঘটেনি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা চলছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর আমার সংবাদকে বলেন, ‘ডলারের বর্ধিতমূল্য অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে আমাদের জন্য উপকারী।

যেমন— আমদানি কমে যাবে ও রপ্তানি আয় বাড়বে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতিসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি।

এছাড়া পরিবহন ব্যয় থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সব জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

মানি এক্সচেঞ্জে নজরদারি ও শাস্তি, পুলিশের অভিযান, দামে কারসাজির অভিযোগে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেয়া— কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

গত ২৭ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের দর উঠেছিল ১১২ টাকা। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির পর কয়েক দিন সেখান থেকে কিছুটা কমে ১০৮ টাকায় স্থির থাকে। কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে আবার শুরু হয় ঊর্ধ্বগতি।

গত সোমবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর সেদিনও ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। পরদিন তা আরও ৩০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৯৫ পয়সা। এরপর দিন খোলাবাজারে আবার লাফ দেয় ডলার। এক দিনে বাড়ে চার টাকা ৪০ পয়সা।

খোলাবাজার ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীব্র সংকট রয়েছে ডলারের। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকরাও কম আসছেন। এ কারণে ডলারের সরবরাহ কম।

মতিঝিলে মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কিনতে আসা রফিক বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবো। প্রতি ডলার ১২০ টাকা চাচ্ছে। ব্যাংকরেট ৯৫ টাকা বললে মানিচেঞ্জাররা বলে, ওসব বলে লাভ নেই। আমাদের যে রেটে দিতে পারব সেটা বলেছি।’

তিনি বলেন, এতে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকে গিয়েও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো বলছে ডলার নেই।’

মানিচেঞ্জার মালিকরা বলছেন, অবৈধদের দাপটে কোণঠাসা বৈধ ব্যবসায়ীরা। বৈধ মানিচেঞ্জারের দৈনন্দিন কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হয়। যথাযথ কাগজপত্র দেখে বিক্রি করতে হয়।  কিন্তু লাইসেন্সহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছুই লাগে না। তাই টিকে থাকতে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তবে অনেক মানিচেঞ্জার এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের বাইরে গ্রাহকের কাছ থেকে ডলার কেনাবেচা করে। এ ধরনের লেনদেনও অবৈধ। এছাড়া মানিচেঞ্জারের বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ের অবৈধ লেনদেনে কোনো কাগজপত্র লাগে না।

মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন সিকদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘অবৈধ মানিচেঞ্জারগুলোর কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। তাদের উচ্চ রেটের কারণে বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করতে পারছে না। এ ছাড়া শেয়ারবাজার ও সঞ্চয়পত্রবিমুখ মানুষ ডলার মার্কেটে বিনিয়োগ করছে তাই সংকট দেখা দিয়েছে।’

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরে ডলার মিলছে না ব্যাংকেও। ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেও দর অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়।

এরপর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। তখন ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ও খোলাবাজারের দরের মধ্যে পার্থক্য ছিল খুবই কম। বরং গোটা বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে দর ধরে রাখতে চেষ্টা করেছে।

তবে মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্য, জ্বালানি, শিল্পের উপকরণের দর বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। আর দাম বাড়তে থাকায় এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে অবৈধভাবে মজুতও করার তথ্য মিলছে।

খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যদের সাথে নিয়ে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পাশাপাশি অবৈধভাবে ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ফলে ডলারের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে সব চেষ্টাই এখন নিষ্ফল।

তবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ‘মনিটারি পলিসি যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। এই মুহূর্তে টাকার মান নিয়ে শক্তভাবে কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা করছে না।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অগভীর (শ্যালো) উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে যেকোনো ধাক্কা অল্প সময়ে বড় প্রভাব ফেলে। তাই আমাদেরকে মনিটারি পলিসি যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি শক্ত হাতে ধরে রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমদানি-রপ্তানি সমতায় নিয়ে আসাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি। এছাড়া কারসাজি চক্রের লাগাম টানতে নজরদারি ও শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ডলার মার্কেট নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
 

Link copied!