ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

গরিবের ঘরে হাহাকার

আবদুর রহিম

আগস্ট ১৩, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম

গরিবের ঘরে হাহাকার

সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে দ্রব্যমূল্য। মধ্যবিত্তরা খাবার কমিয়ে দিয়েছে। সব শ্রেণির মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, সব কিছু মজুত থাকার কথা বললেও সয়াবিনের দাম লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়েছে।

জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেড়ে গেছে গণপরিবহন ভাড়া, ট্রাকভাড়া, রিকশা, সিএনজি ভাড়াও। মানুষের প্রয়োজনীয় যা কিছু রয়েছে সবকিছুতেই প্রভাব পড়েছে। ব্যয় সংকোচন নীতিতে হাঁটছেন সব শ্রেণির মানুষ। খাদ্যতালিকা থেকে অনেকে আমিষ জাতীয় খাবার বাদ দিয়েছেন, ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে অনেককে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে মানুষ এখন দিশাহারা।

চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য সাবান, সোডা এবং টুথপেস্টের মতো পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছেই। এছাড়া বহুগুণে বেড়েছে ঘরের উন্নয়ন সামগ্রীর জিনিসও।

গরিবরা বলছেন, তিনদিনের আয় দিয়েও একদিনের সংসার চলছে না। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এদিকে দ্রবমূল্য শিগগিরই কমবে এরকম কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ, যেকোনো জ্বালানির দাম বাড়লে এর প্রভাব সামষ্টিক অর্থনীতিতে দীর্ঘ ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। 

অর্থাৎ আগামী ৯ মাসের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এসময় দেশে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ।

ফেনীর আনিসুল হক বলেন, ‘সমপ্রতি আমার ঘরে জরুরি একটি কাজের জন্য ইট কিনতে যাই। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হাজারে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এক নাম্বার ইট এগারো হাজারেরটা ১৩ হাজার হয়েছে। বালু প্রতি ফিট ১৫ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়ে গেছে রড সিমেন্টেরও। অল্প একটু কাজ করতে আমার বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ চলে গেছে।’

মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে কলা ২৫ টাকা হালি কিনতাম তার চাইতেও ছোট কলা আজকে কিনছি ৩৫ টাকা হালিতে জুরাইন এলাকায়।’

আল আমিন বলেন, ‘এই রাষ্ট্র এখন ১৬ কোটি জনগণের জন্য নয়, এই রাষ্ট্র হচ্ছে স্রেফ ১১ লাখ সরকারি কর্মচারীর জন্য।’

রুবেল হুসাইন বলেন, ‘আগে বাংলাদেশ ছিলাম ভালোই ছিলাম। এখন সিঙ্গাপুর হয়ে ভরণপোষণ বহনে হিমশিম খাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন ইউরোপ-আমেরিকা না হই, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।’

জানা গেছে, বৈশ্বিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পুরোপুরি বিস্তার করেছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও ডলার সংকটের মুখে গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ডলার রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি প্যাকেট লবণের দাম সাত টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। 

একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চালে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এই চাল কিনতে একজন ভোক্তাকে ৪৮-৫০ টাকা গুনতে হয়েছে। আমিষের প্রধান উৎস ফার্মের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।

প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ৪০-৫০ টাকা কম ছিল। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের  মাছ-মাংস। টমেটোর দাম কেজিতে একলাফে বেড়েছে ৪০ টাকা। টমেটো এখন ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটা মানভেদে ৫০-৫৫ এবং ময়দা ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

এছাড়া সবজির বাজারও চড়া। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজিও ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গড়ে বাজারে ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ২০টির বেশি ভোগ্যপণ্য।

একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। সবমিলিয়ে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস এখন চরমে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে খ্যাত পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, চিনি ও খাবার লবণ গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব পণ্য কিনতে চাপে আছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও।

এ পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে দিশাহারা মানুষ। এ কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও এ মুহূর্তে ভাবা হচ্ছে না। যদিও চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ হার গত ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্যসূচকে গত বছরের একই মাসের চেয়ে বেড়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট।

আর জুলাইয়ে খাদ্যবহির্ভূত সূচকে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ সূচকে এক বছরে বেড়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়া খাদ্যবহির্ভূত সূচকের মধ্যে পড়ে। ফলে এখন এ সূচকে বাড়তি চাপ তৈরি হবে, পাশাপাশি খাদ্যের দামও বাড়বে জ্বালানি তেলের কারণে।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অক্টোবরের দিকে ভোক্তারা আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাবেন। সরকার ভোক্তাদের সহনশীলতার সুযোগ নিচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলো কিন্তু সরকার দাম কমালো না।

ইতোপূর্বে সরকারের যত ভর্তুকি দিতে হয়েছে, সমস্ত পরিশোধের পরও ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এদেশের ভোক্তারা খুবই সহনশীল। সরকার মনে করছে, আমার মুরগি আমি সামনে কাটি, পেছনে কাটি যেভাবেই ইচ্ছা সেভাবেই কাটবো।

Link copied!