Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫,

তিতাসের দুই লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

মহিউদ্দিন রাব্বানি

আগস্ট ১৯, ২০২২, ০১:৪৬ এএম


তিতাসের দুই লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন


অবৈধ ও বকেয়াজনিত কারণে ছয় মাসে চার জেলায় সোয়া দুই লাখ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে অভিযান চালানো হয়েছে ১৬৪টি। পাইপলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ২২০ দশমিক ৬৩ কিলোমিটারের সমান।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই লাখ ২৩ হাজার ৩২৯টি সংযোগ ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। চলমান তীব্র গ্যাস সংকটে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগের কারণে বৈধ গ্রাহকরা পর্যন্ত গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও তিতাস বোর্ডে পরিচালক প্রকৌ. মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে তিতাস জানুয়ারি থেকে ভালোভাবে অভিযানে নামে।

অবৈধ ও বকেয়াজনিত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বৈধ গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে তিতাসের গত ছয় মাসের অভিযানের ফল পাবে গ্রাহকরা। মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্যাস ব্যবহরে কোনো অন্যায় প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আপনার আশপাশে কোনো অবৈধ সংযোগ থাকলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। অবৈধ সংযোগ বেশি হলে পুরো এলাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে। গ্যাস চুরি অভিযোগে ইতোমধ্যে তিতাসের ১২ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজরে গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে ছয় ডলারের গ্যাস এখন ৪০ ডলার হয়ে গেছে।
চলমান তীব্র গ্যাস সংকটে গ্যাস চুরি বন্ধ করা গেলে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি অনেক কমে যাবে। আমরা ৪০ শতাংশ সিস্টেম লস থেকে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নিয়ে এসেছি। ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের এই সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযানে অন্তত ১৮০টি কলকারখানা বন্ধ করেছে।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আপনার আশেপাশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকলে তথ্য দিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করুন।

রাজধানীসহ এর আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবৈধ গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে তিতাস গ্যাস। অবৈধভাবে স্থাপিত গ্যাস পাইপলাইন অপসারণের লক্ষ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।

তিতাস সূত্র জানায়, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন এলাকায় গত এক যুগে শত শত কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসলাইন পড়েছে। বিভিন্ন সময় জ্বালানি বিভাগ এবং ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালালেও দৃশ্যমান সফলতা অর্জন করতে পারেনি।

একদিকে, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে অন্যদিকে নতুন করে আবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। এ যেন ইঁদুর দোড়! সাধারণ মানুষের পাইপলাইনের গ্যাসের সুবিধা পাওয়ার আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে গড়ে তুলেছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেট এতটা শক্তিশালী যে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েই যাচ্ছে। এদের দৌরাত্ম্য যেন শেষ হচ্ছে না। গত মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

এ সময় অভিযানে বাধা দেয় স্থানীয়রা। তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে তিতাসের দুটি গাড়ি ভাঙচুরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। এ সময় তিন শ্রমিক আহত হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রায় সব কটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

Link copied!