ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুতে উদ্বেগ

এম এইচ তানভীর

এম এইচ তানভীর

আগস্ট ২৩, ২০২২, ০১:৩২ এএম

পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুতে উদ্বেগ

উদ্বেগজনক বেড়েই চলেছে পুলিশি হেফাজতে আসামির মৃত্যু কিংবা রিমান্ডের নামে নির্যাতনের ঘটনা। সম্প্রতি আইন ও সালিশকেন্দ্রের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।

প্রতিবেদন প্রকাশের দুই দিন পর রাজধানীর মতিঝিল বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে মারা যায় ইয়াবা মামলার এক আসামি। ওই ঘটনা অনেকটাই আড়ালে থাকলেও হাতিরঝিল থানায় চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার সুমনের মৃত্যু ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এর জেরে থানা ঘেরাও-বিক্ষোভও করেন স্বজনরা। যদিও দিন শেষে সুমনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের। শুধু তাই নয়— প্রথম দফায় লাশ হস্তান্তরের সময়ও পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে দেয়া হয় শর্ত। ঘটনার দিন মৃত্যুর তথ্যও গোপন রাখার চেষ্টা করে পুলিশ। থানায় দায়িত্বরত একজন কনস্টেবল পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে দেয়া হবে না জানিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শও দেয়।

সে সময় সুমনের স্বজনদের কাছ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে নাশতাও পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কনস্টেবল। অথচ পরিবারকে জানানো হয়নি সুমন আত্মহত্যা করেছে। শুধু সুমনই নয়, হেফাজতে মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনাতেই পুলিশের রহস্যজনক আচরণের বিষয়টিও দেখা গেছে। এদিকে এসব মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মানবাধিকারকর্মীসহ সচেতন মহল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকনাফে সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা কমলেও উদ্বেগজনকহ বেড়ে গেছে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু। 

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গুম-খুন অর্থাৎ আয়নাঘরের ইস্যুটি নিয়ে যখন দেশের মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সে সময়ই আবার পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যা স্পষ্টতই উদ্বেগের কারণ।

পুলিশি হেফাজতে শুধু মৃত্যুই নয়, পঙ্গুত্বও বরণ করতে হচ্ছে অনেককেই। তথ্যমতে, গ্রেপ্তারের পর যাদের কাছে পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে, সে টাকা দিতে না পারা ব্যক্তিদের ওপরই নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এতেই ঘটছে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ববরণের ঘটনা। হাতিরঝিল থানায় এমনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সুমন; অভিযোগ পরিবারের। সুমনের পরিবার জানায়, গ্রেপ্তারের পর তার কাছে পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।

এছাড়া অনেক সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের ইঙ্গিতেও পুলিশ নির্যাতন করে বলে চাউড় রয়েছে। তবে এসব ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। এ নিয়েও চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সুমনের মৃত্যুর একদিন আগে মতিঝিল গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা ছিদ্দিক আহমেদের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)।

শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, গত বুধবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার ছিদ্দিককে সিএমএম কোর্টে নেয়ার পথে তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে পরে তাকে আবার কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুনরায় পেটে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাতে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এখানেই শেষ নয়, গত ২০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরে চেক জালিয়াতি মামলায় গ্রেপ্তারের পর আবদুল কুদ্দুস নামে এক ফার্মেসি ব্যবসায়ীরও মৃত্যু হয় পুলিশি হেফাজতে। তার পরিবার জানায়, সন্ধ্যারাতে কুদ্দুসকে সুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অসুস্থ হলে পুলিশই হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসক সেসময়ই তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে মরদেহ তড়িঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা চালায় পুলিশ। যদিও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ প্রচেষ্টা থেমে যায়।

গত ৭ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানা পুলিশের হেফাজতেও মৃত্যু হয় হিমাংশু বর্মণ নামে এক ব্যক্তির। ওই ব্যক্তির স্ত্রী ছবিতা রানীর মৃত্যুর পর সন্দেহের বশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাকে থানায় নেয় পুলিশ। এর তিন ঘণ্টা পরই থানা হাজতে মারা যান তিনি। পুলিশ এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বললেও স্বজনদের দাবি প্রচণ্ড মারধরের কারণেই হাজতখানায় হিমাংশু বর্মণ মারা যান।

এসব ঘটনা নিয়ে আইন ও সালিশকেন্দ্রের (আসক) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের আগেই ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন দুজন। গ্রেপ্তার দেখানোর আগে শারীরিক নির্যাতনে র্যাবের হেফাজতে একজন ও পুলিশের হাতে দুজন, গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতনে পুলিশের হেফাজতে তিনজন নিহত হন। সাত মাসে র্যাবের হেফাজতে হার্ট অ্যাটাকে একজন, পুলিশের হেফাজতে অসুস্থতায় দুজনের মৃত্যু হয়।

সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শারীরিক নির্যাতনে ছয়জন, হার্ট অ্যাটাকে একজন ও গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে একজন নিহত হন। ২০২০ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিহত হন ১১ জন। গ্রেপ্তারের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে মারা যান ১৩ জন।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নুর খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ক্রসফায়ারে হত্যা, গুমের ঘটনাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি’। সাম্প্রতিকালে গুম নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ উদ্বেগ জানিয়েছে। এরই মধ্যে হেফাজতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বন্ধ করা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশ নির্যাতন করে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না। এসব ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কর্মকর্তাদের উচিত দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া। মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। অন্যথায় রাষ্ট্রকে একটা সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।’

হেফাজতের মৃত্যুর শিকার অধিকাংশ ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন হলেও মেলে না প্রতিকার। পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলারও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচারও হয় না। এর নেপথ্যেও রয়েছে পুলিশ। এসব মামলার তদন্তভারও দেয়া হয় পুলিশকেই। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় না। কেবল অতি চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনায় কতিপয় জড়িত পুলিশ সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাও একেবারেই নগণ্য।

হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের দাবি, রিমান্ডে নেয়া আসামিদের যে ধরনের নির্যাতন করা হয় তার মধ্যে বাদুড় ধোলাই, গিটা নির্যাতন, ওয়াটার থেরাপি, উলঙ্গ করে নির্যাতন, সারাদিন না খাইয়ে রাখা, টানা নির্যাতন, বাতাস নির্যাতন, বোতল ও ডিম থেরাপি, সেলাই নির্যাতন ও ডিসকো ড্যান্স থেরাপি উল্লেখযোগ্য।

আসামিদের হাত-পায়ের প্রতিটি জয়েন্টে লাঠিপেটা করার নাম গিটা নির্যাতন। এ নির্যাতনের ফলে হাড়-মাংস থেতলে যায়। তবে বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। চিৎ করে মেঝেতে ফেলে হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা বা কাপড় ঢুকিয়ে পানি ঢেলে মারধর করাকে বলা হয় ওয়াটার থেরাপি। নাকে-মুখে পানি দিতে থাকলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। দুটি উঁচু টেবিলের মাঝখানে দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানোকে বলা হয় বাদুড় ধোলাই। এ রকমের নির্যাতন করলে আসামি জ্ঞান হারায়। গরম বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ডিম মলদ্বারে ঢুকিয়ে নির্যাতন করাকে বলা হয় ডিম থেরাপি। হাত-পায়ে অবিরাম ইলেকট্রিক শক দেয়াকে বলা হয় ডিসকো ড্যান্স থেরাপি। হাত-পায়ের নখে মোটা সুই ঢুকানোকে বলা হয় সেলাই নির্যাতন।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তাওহীদুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যু নতুন নয়। এসব ঘটনায় পুলিশ নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করে, অপরদিকে ভুক্তভোগীরা পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে। একজন আসামি গ্রেপ্তারের পর কোর্টে চালান করার আগ পর্যন্ত তাদের জীবনের নিরাপত্তা, খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু পুলিশ এখানে আসামির পরিবারের সাথে একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করে। আসামিকে ভালো রাখা হবে বা ছেড়ে দেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে টাকা দাবি করে। এরপর যখন আসামির জীবন অনিশ্চিত হয় তখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ঘটনাগুলোর গভীর তদন্ত দরকার। দোষ খুঁজে পেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা পুলিশ জনগণের বন্ধুর পরিবর্তে শত্রুতে রূপান্তিত হবে।’

পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজির (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) ফোন নম্বর পরিবর্তন হওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সাবেক দুজন আইজিপির সাথেও যোগাযোগ করা হলে তাদের দুজনই ব্যস্ত থাকায় তাদের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

 

Link copied!