ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

অসাধু চক্রে জিম্মি দেশ

জাহিদুল ইসলাম

আগস্ট ২৬, ২০২২, ১২:২৯ এএম

অসাধু চক্রে জিম্মি দেশ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুুহাতে মধ্যবিত্তের নাগালে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়েছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। মূলত উৎপাদন পর্যায়ে না বাড়লেও পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে থাকে। এর প্রভাব খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর পড়লে তারাও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে মাত্র দুই সপ্তাহে ছয় থেকে সাতশ কোটি টাকা নিজেদের পকেটস্থ করেছে চক্রটি।

ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। শুধু ডিম বা মুরগি ব্যবসায়ী নন, কিছু ব্যবসায়ীর কারণে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ, তেল, চার্জিং ফ্যান-লাইটসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

সম্প্রতি পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রিতে পরিমাণে কম দিয়েও মানুষ ঠকাতে দেখা গেছে। আর এখন বাড়িয়েছে চালের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে বারবার নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এসব কারণে কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে এবার কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ব্যবসায়ী সমাজ ও সরকার।

বিশ্বজুড়ে চলমান সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ নিজস্ব কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এই সংকট মোকাবিলায় নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়েএগোচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে অকটেন, ডিজেল ও পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধি পায়। এতে বেড়ে যায় পরিবহন ব্যয়। এই সুযোগে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ৭ আগস্ট ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি খুচরা পর্যায়ে ৪১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগের মাসে এই ডিমের দাম ছিল ৩৯ টাকা। হঠাৎ করেই গত ১৪ আগস্ট ডিমের দাম ৫৩ টাকায় বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমে দাম বাড়ে তিন টাকা। এ হিসাবে এক ডজন ডিমের দাম দাড়ায় ১৫৯ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১২৩ টাকা।

অপরদিকে ৭ আগস্ট যে ব্রয়লার মুরগির দাম খুচরা পর্যায়ে ছিল ১৫৫ টাকা, তা হঠাৎ করেই বেড়ে ১৯৫ টাকায় দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪০-৪৫ টাকা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা প্রায় সাড়ে চার কোটি পিস এবং মুরগির চাহিদা দুই হাজার টন। সে হিসাবে গত ১৫ দিনে সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ৬০০ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ডিম-মুরগির যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা প্রকৃত বৃদ্ধির চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এক সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, একটি তিন টন ট্রাকে ৫১ হাজার ৮৪০টি ডিম পরিবহন করা যায়। ডিমের প্রধান উৎসস্থল ভালুকা-ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে দুই হাজার টাকা।

অর্থাৎ জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রতি ডিমে খরচ বেড়েছে তিন থেকে চার পয়সা। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিটি ডিমের দাম বাড়িয়েছে প্রায় তিন টাকা।

একইভাবে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দেশে প্রতিদিন মুরগির চাহিদা দুই হাজার টন। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যানুসারে প্রতি কেজি মুরগিতে দাম ৭৫-৯০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোথাও এই দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।

এই হিসাবে তারা প্রতিদিন মুনাফা হাতিয়েছে ১৫-১৮ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি কেজিতে ৭৫ টাকা ধরে গত ১৫ দিনে তারা এই বাবদ ২২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। ডিম ও মুরগির মাংসের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পর কঠোর অবস্থান নেয় সরকার।

অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত ১৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে টানা অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দাম বৃদ্ধির পেছনে থাকা সিন্ডিকেটটির অস্তিত্ব টের পায় সংস্থাটি। বেরিয়ে আসে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র। অভিযানকালে দেখা যায়, কোনো প্রকার রশিদ বা কাগজপত্র ছাড়াই ডিম ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এমনকি ডিম ও মুরগি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো মূল্য তালিকাও নেই। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ব্যবসায়ী সমিতিগুলো। পাইকাররা আড়তদারদের থেকে ডিম কিনে ফোনের অপেক্ষায় থাকেন মূল্য নির্ধারণী বার্তা আসা পর্যন্ত। এভাবেই মূল্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকে এসব ব্যবসায়ী সংগঠন।

তবে এসব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেই সঠিক কাগজপত্র ও অনুমোদন। বাণিজ্য সংগঠন না হয়ে বরং সমবায় সমিতির নামে নিয়েছে নিবন্ধন সনদ। এরপর পণ্যের দাম নির্ধারণ ও সরবরাহ লাইনে রাখছে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা। আবার অনেক সময় নিজেরাই বেনামি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির ও অভ্যন্তরীণ কেনাবেচার মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দেয়।

এসবের বাইরে সাধারণ ডিমকে নিজেরাই অর্গানিক সিল মেরে বাজারজাত করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এক পর্যালোচনা দেখা যায়— যখন সাধারণ ডিমের হালি ছিল ১০ টাকা সে সময় অর্গানিক ডিমের হালি ছিল ২৬০ টাকা।

এই হিসেবে বর্তমান বাজার দরে এসব অসাধু ব্যবসায়ী অর্গানিকের নামে ঠিক কি পরিমাণ টাকা হাতিয়েছেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সাধারণত অর্গানিক ডিমের ক্ষেত্রে প্রাণীর আবাসস্থল, খাদ্য, নিয়মিত টিকা ও পরিচর্যা ইত্যাদি পর্যন্ত বিবেচনায় নেয়া হয়।

তবে ডিমের দর বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো ভূমিকা নেই বলেই জানান তারা। বরং কাজী ফার্মস ও প্যারাগনের মতো বড় কর্পোরেট হাউজগুলো এসবের পেছনে রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। কাওরান বাজারের কয়েকজন ডিম ব্যবসায়ী জানান, এই সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এজেন্ট নিয়োগ করে নিলামের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজিতে যুক্ত থাকে। ছোট ব্যবসায়ীরা এসব প্রতিষ্ঠানের দাম নির্ধারণের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এরপর তারা মূল্য নির্ধারণ করেন।

এসব অনিয়ম রোধে গত ১৮-২০ আগস্ট টানা তিন দিন দেশব্যাপী ১২৩ বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় ১৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি ভোক্তা অধিকার থেকে এতদিন কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় না গেলেও এখন থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ডিম-মুরগির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে জড়িত অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

সংগঠনটি জানিয়েছে, যে ব্যবসায়িক সমিতিগুলো দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে তারা কেউই যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে নিবন্ধিত নয়। তা ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের মতো পেশাদার কোনো ব্যবসায়িক সংগঠনের সাথেও তাদের সম্পর্ক নেই। ফলে এসব র্ভূইফোড় সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দুই-একজন অসৎ ব্যবসায়ীর দায় এফবিসিসিআই নেবে না। এদের জন্য সমগ্র ব্যবসায়ী সমাজ কলুষিত হচ্ছে। এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

আবার কিছু দিন আগে ভোজ্যতেলের বাজারেও এরা অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে। গত মে মাসে ঈদের আগে হঠাৎ করেই প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৪০ টাকা বাড়িয়ে দেন এ অসাধু ব্যবসায়ীরা। এরপরও মানুষের ভোগান্তি বাড়াতে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল। সে সময়ও অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার। কারো গুদামঘরে আবার কারো খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার লিটার তেল।

অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণা করে সরকার। এরপর চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে চার্জার লাইট ও ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দেয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতাদের একটি দল। রাতারাতি ১৫শ টাকার চার্জার ফ্যানের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫শ টাকা দাঁড়ায়। পাশাপাশি বাড়ে জেনারেটর ও আইপিএসের দর।

আবার অতিরিক্ত লাভের আশায় ফিলিং স্টেশনগুলো মাপে কম দিতে থাকে। প্রতি পাঁচ লিটার তেলে দুই থেকে আড়াইশ মিলিলিটার তেল কম দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় রাজধানী ও এর আশেপাশের বিভিন্ন পাম্পে। বর্তমানে চালের বাজারেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে এই চক্রটি।

বিশ্বজুড়ে চলমান মন্দা পরিস্থিতিতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু এসবে ফায়দা লুটছে সুযোগসন্ধানীরা। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এসব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তা স্থায়ী হয়নি। ফলে একটির পর আরেকটি পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কেন অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নে তিনি দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের প্রভাবশালী অংশই এসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এ ছাড়া যে সাধারণ ব্যবসায়ী বা আড়ৎদাররা রয়েছেন তাদের থেকেও রাজনৈতিক নেতারা ফায়দা নিচ্ছেন। ফলে চাইলেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে।’

এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জানম দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এখানে যে সমস্যাটি চিহ্নিত হয়েছে তা হলো নীতি-নৈতিকতা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা না থাকলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।

তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িত কি-না, এমন প্রশ্নে বলেন, এটি আপনাদেরই (সাংবাদিকদের) খুঁজে বের করতে হবে।’
 

Link copied!