ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

গ্যাস সংকটে ভোগান্তি চরমে

মহিউদ্দিন রাব্বানি

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৪৬ এএম

গ্যাস সংকটে ভোগান্তি চরমে

নাগরিক ভোগান্তিতে লোডশেডিংয়ের সাথে এবার যুক্ত হলো তীব্র গ্যাস সংকট। রাজধানী ও তার আশেপাশের জেলাগুলোতে এ সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। সকাল ৭টার পর আর গ্যাস থাকে না চুলায়। রান্নাবান্নায় চরম অসুবিধায় পড়তে হয় গৃহিণীদের।

সময়মতো খাবার প্রস্তুত কিংবা বাচ্চাদের স্কুলের টিফিন, স্বামীর অফিসের খাবার তৈরি করতে বেশ বেগ পোহাতে হয় সাহেলা আক্তারের। মুগদা এলাকার এই গৃহিণী এমনটাই জানান। কোনোদিন খাবার দিতে পারেন; আবার কোনোদিন দিতে পারেন না।  রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফজরের আজানের সময় থেকেই রান্নাবান্নার কাজ শুরু করেন অনেকে। কেউ কেউ মধ্যরাতেই চুলায় পাতিল বাসান। কারণ, খুব সকাল সকাল চলে যায় গ্যাস।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন আবাসিক গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীরা। রান্নার সময় চুলায় মিলছে না পর্যাপ্ত গ্যাস। বিকল্প হিসেবে গৃহিণীদের কেউ কেউ লাকড়ির চুলা, এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করলেও কর্মজীবীরা ঝুঁকছেন ইলেকট্রিক পণ্যের দিকে। গ্যাসের চুলার বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন রাইস কুকার এবং বৈদ্যুতিক চুলা। ফলে বাড়ছে বিদ্যুতের ব্যবহার।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আবাসিক গ্যাস সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অনেক দিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকরা। বাসাবাড়িতে চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস। এতে সংসারে খরচ বাড়ছে।

এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ছোট-বড় কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে গ্যাস সংকটের কারণে।

নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, অনেক দিন ধরেই এলাকায় গ্যাস সংকট বিদ্যমান। খুব ভোরে গ্যাস থাকলেও বুয়া এত আগে আসতে পারেন না। ফলে রান্নাবান্নার কাজে বেশ বেগ পোহাতে হয়। তিনি আরও জানান, লাইনের গ্যাস সংকটের কারণে ১৪-১৫শ টাকা অতিরিক্ত খরচ করে এলপিজি দিয়ে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেন, আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের মাসিক বিল এক চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে এক হাজার ৮০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এদিকে গ্যাস থাকুক আর না থাকুক, মাস শেষে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তারা দাবি করেন, লাইনের গ্যাস মিটার কন্ট্রোল হলে যা খরচ তা-ই বিল দিতে হতো। মিটার না থাকায় এখন গ্যাস ব্যবহার না করেও পুরো টাকাই দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

এদিকে সরকারের তরফ থেকে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একগাদা নিয়ম জারি করলেও সমন্বয়ের অভাবে ফলাফল শূন্যপ্রায়। গ্যাস সংকটের কারণে ইলেকট্রিক কুকারের সাহায্যে দেদার রান্নাবান্না চলছে। লোডশেডিংসহ সাশ্রয়ের নানা নিয়ম থাকলেও স্রোতের গতিতে বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে জেনারেটর আর পাম্পে। এবার যুক্ত হলো রান্নার কাজেও।

ধরুন বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না করবেন। বিদ্যুতের যে দাম, এতেও পোষাবে না গ্রাহকের। বিকল্প হিসেবে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে চান। সেখানেও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানো হয়েছে। ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ১৬ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

এতে ভোক্তাদের ১২ কেজির প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার এখন থেকে ১২৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বহু ভোক্তার দাবি— সরকার যতবারই সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বা কমিয়েছে, কোনোটারই সুযোগ পান না ভোক্তারা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামে কেউই বিক্রি করছেন না।

এদিকে সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের অবহেলার কারণেই ভোক্তারা প্রতিনিয়তই ঠকে আসছেন। সরকার শুধুই দাম ঘোষণা করেই দায় সারছে। আর এর মাশুল গুনছেন গ্রাহক।

যাত্রাবাড়ী এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে চুলায় রান্নায় কাজ সারা যায় না। দিনভর গ্যাস থাকে না। রাতে গ্যাসের চাপ একটু থাকলেও সেটি ভোর হতেই চলে যায়। কতদিন এ সমস্যা থাকবে, কেউ জানে না।

তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা, সে পরিমাণ গ্যাস আমরা পাচ্ছি না। মূলত সরবরাহ না থাকায় গ্যাসের এই সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাসের সংকট চলছে। রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ বসুন্ধরা আবাসিক, উত্তরা, বাড্ডা, মেরুল বাড্ড, কাফরুল, মেরাদিয়া, ডেমরা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া, শনির আখড়া, রাগেরবাগ এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দৃশ্যমান।

নারায়ণগঞ্জে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে গ্যাস সংকট। প্রথম দিকে শহরের বাইরে সংকট দেখা দিলেও ধীরে ধীরে সেই ধাক্কা এসে লেগেছে জেলা শহরেও।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া, জামতলা, মিশনপাড়া, খানপুর, আমলাপাড়া, গলাচিপা, উকিলপাড়া, মণ্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জ, নলুয়া, দেওভোগসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না বললেই চলে। নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে কাজ করেন— এমন কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করেন বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। গ্যাস সংকটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে বৈদ্যুতিক চুলার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে এসব এলাকায়।

ঢাকার গেণ্ডারিয়ার এক বাসিন্দা বলেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে দিনের বেলা গ্যাস পাওয়াই যাচ্ছে না। লাকড়ি আনা-নেয়া ঝামেলার বিষয়। বাধ্য হয়ে এখন বৈদ্যুতিক চুলা কিনে নিয়েছি। বিদ্যুৎ বিল বেশি এলেও কিছু করার নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসের দোকানে দেখা যায় ভিড়। এ সময়ে রাইস কুকার, ইলেকট্রিক চুলা, হিটারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। এক ক্রেতা জানান, রাতের বেলা চুলায় গ্যাস পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে এসেছি রাইস কুকার কিনতে।

গত এক মাসে বৈদ্যুতিক চুলা ও রাইস কুকারের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ভিশন ইলেকট্রনিকস শোরুমের ম্যানেজার। তিনি জানান, প্রতিদিন ১০-১২টি চুলা এবং ৮-১০টি রাইস কুকার বিক্রি হয়। গ্যাস সংকট বাড়ার পরপরই চাহিদা বেড়েছে এসব পণ্যের।

যাত্রাবাড়ীর মিনিস্টার শোরুমের ম্যানেজার বলেন, মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়ে চুলা ও রাইস কুকার কিনছেন। চীনা পণ্যের আমদানিও কমে গেছে। দাম বাড়ছে সবকিছুর। আমরা শুধু রাইস কুকার বিক্রি করছি। প্রতিদিন ১০টির মতো রাইস কুকার বিক্রি হচ্ছে।

গ্যাস সংকটে চুলার বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক কুকার ব্যবহার করছেন শনির আখড়ার বাসিন্দা আয়শা খাতুন। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক রাইস কুকার ব্যবহার করেই এখন রান্না করতে হয়। ফলে আমাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ বহন করতে হয়। অন্যথায় রেস্টুরেন্ট থেকেই খাবার কিনে আনতে হয়।

এভাবে প্রতিটি পরিবারকে মাসে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ গুনতে হয়। আর পরিবার বড় হলে আরও বেশি খরচ হয় বলে জানান অনেকে।

গ্যাস সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস, নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা, সে অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গ্যাস সংকটের বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আমরা আশা করছি, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই গ্যাস সংকট কমে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।

ভুক্তভোগী একজন বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে একটু গ্যাস আসে। আবার ফজরের আগে চলে যায়। সারা দিন চুলায় গ্যাস থাকে না। তাই সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে অনেককে মাটির চুলায়ও রান্না করতে হচ্ছে।

গ্যাস সংকট এভাবে চলতে থাকলে রপ্তানি আয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নেতারা।

এদিকে বিকেএমইর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে শিডিউল চাই, তারা দিনের কোন সময়ে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। সে অনুযায়ী আমরা কারখানা খুলব।

ভোক্তা অধিকারের সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমার সংবাদকে বলেন, সংকট সমাধানে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা এগিয়ে এলেই জনগণের সব সংকট দূর হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের যত ভোগান্তি, দুঃখ-দুর্দশা আছে, সব সমস্যা বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করতে হবে। জনগণকে তাদের আবেদন কিংবা প্রতিবাদ অথবা প্রয়োজনীয় অসুবিধা কিংবা চাহিদার জানান দিতে হবে। আর জনপ্রতিনিধিরাই গ্যাসসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

জ্বালানি ও ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম আমার সংবাদকে বলেন, চলমান জ্বালানি সংকটে সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি গ্যাস সংকটে শহুরে কিছু মানুষ ইলেকট্রিক চুলা, রাইস কুকার ব্যবহার করছে। এতে বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা বাড়বে। তবে বিদ্যুতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। আবার ব্যবহারকারীরা চিন্তা করবেন বেশি ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ বিল বাড়বে। তবে সরকার জ্বালানি-সাশ্রয়ী নীতিতে গেলেও ফলাফল কিন্তু কম।

Link copied!