Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

সেবায় স্বস্তি ভাড়ায় অসন্তুষ্টি

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ০৯:৩৩ এএম


সেবায় স্বস্তি ভাড়ায় অসন্তুষ্টি

নতুন বাজার-গুলশান-বনানী এলাকায় চলাচল করে গুলশান চাকা। আর গুলশান-২, পুলিশ প্লাজা হয়ে নাবিস্কো পর্যন্ত চলাচল করে ঢাকার চাকা। এ পরিবহনগুলো মাত্র সাড়ে তিন বা চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাস সেবা দিয়ে থাকে। অথচ যাত্রীপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পড়ছে ১০ টাকা। এদিকে যৌথভাবে পরিচালিত এ পরিবহন সেবার মান নিয়ে যাত্রীরা সন্তুষ্ট থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়ায় অসন্তুষ্ট হচ্ছেন তারা।

যাত্রীরা বলছেন, অন্যান্য রাজধানীর রুটে বাস ভাড়া সরকার নির্ধারিত করে দিচ্ছে। কিন্তু এসব রুটে কেন সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিচ্ছে না। মালিকপক্ষ বলছে, পরিবহন খরচের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। যে মানের সেবা দেয়া হচ্ছে সে অনুযায়ী ভাড়া ঠিক আছে। তাদের নির্ধারিত ভাড়া আদায় করেও লাভবান হতে পারছেন না বলে জানান তারা।

গত মঙ্গল ও বুধবার নতুন বাজার, গুলশান-২, বনানী ও পুলিশ প্লাজা বাস স্টপেজ ঘুরে দেখা যায়, নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ এর দূরত্ব সোয়া দুই কিলোমিটার। এ অল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে ২৫ টাকা। নতুন বাজার থেকে বনানী পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার। ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। আবার গুলশান-২ থেকে বনানী যেতে ভাড়া নেয়া হয় ২০ টাকা। অথচ দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার।

এদিকে গুলশান-২ (ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে থেকে) পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত দূূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। আবার গুলশান-২ থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত চার কিলোমিটার। ভাড়া নেয়া হয় ৪০ টাকা। সর্বোপরি প্রত্যেক যাত্রীকে কিলোমিটারপ্রতি ১০ টাকা দিতে হচ্ছে।

সর্বশেষ বিআরটিএ নির্ধারিত গণপরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় দুই টাকা ৪৫ পয়সা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ কূটনৈতিক এলাকায় চলাচল করা যাত্রীদের। গুলশান-বনানী এলাকায় চলাচল করা এসব এসি বাসের ভাড়া মালিক পক্ষই নির্ধারণ করে। এমনকি অন্যান্য রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয় না বলে জানা যায়।  

সরেজমিন আরও দেখা যায়, গুলশান-বনানী যেতে নতুনবাজার কাউন্টারে সারিবদ্ধভাবে টিকিট সংগ্রহ করছেন ও বাসে উঠছেন যাত্রীরা। অন্যান্য কাউন্টারেও একই দৃশ্য দেখা যায়। এসব বাসের সেবায় বেশির ভাগ যাত্রী সন্তুষ্ট থাকলেও অল্প দূরত্বে অতিরিক্ত ভাড়া হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। যাত্রীরা বলছেন, যেকোনো সময় বাস পাওয়া যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব বাসের সার্ভিসও ভালো। টিকিট কাটতে ও বাসে উঠতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তবে মাত্র দুই-তিন কিলোমিটার যাতায়াতের জন্য যে ভাড়া নিচ্ছে তা এক প্রকার জুলুম করে নেয়া হচ্ছে। এসব এলাকায় অন্য কোনো পরিবহন না থাকায় গুলশান চাকা ও ঢাকার চাকার বাসের ওপর নির্ভর করেই যাতায়াত করতে হয়। অন্যান্য সড়কে কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া নিলেও এখানে এসবের কোনো তোয়াক্কাই করা হয় না।

জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে চালু হয় ঢাকার চাকা। আর ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই থেকে গুলশান চাকা নামের বাস সেবা চালু করে হিমাচল পরিবহন। এ দুই কোম্পানি যৌথভাবে গুলশান-বনানী এলাকায় বাস সেবা দিচ্ছে। এ দুই কোম্পানির মোট ৮০টি যাত্রীবাহী বাস এ এলাকায় চলাচল করছে। ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (মেট্রো আরটিসি) এই বাস চলাচলের অনুমতি দিলেও ভাড়া নির্ধারণ করে মালিকপক্ষ।

অভিজাত এলাকার একটি সুপার শপে চাকরি করেন তাহমীদ রহমান। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন আমাকে কাজে যেতে হয়। গুলশান এলাকায় যেকোনো বাহনে বেশি ভাড়া দেয়া লাগে। এখানে নির্দিষ্ট কোম্পানির বাস চলাচল করায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। যেন দেখার কেউ নেই। অন্যান্য সড়কে যদি সরকারি ভাড়া অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হয় তাহলে এখানে কেন নয়। বলতে পারেন জুলুম করে আমাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কার কাছে এসব কথা বলব। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। সার্ভিস ভালো হলেও ভাড়া তো বেশি দিতে হচ্ছে। খরচ বাড়লেও আয় তো বাড়েনি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নাসরিন আক্তার ও রাশেদা বেগম আমার সংবাদকে বলেন, বাসের সেবা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু যে ভাড়া নিচ্ছে তা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। একরকম বলতে পারেন জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

গুলশান চাকা ও ঢাকার চাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব উদ্দিন মাসুদ আমার সংবাদকে বলেন, গুলশান চাকা ও ঢাকার চাকা এ দুই সেবায় মোট ৮০টির মতো পরিবহন রয়েছে। বিআরটিএ থেকে এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয় না। আমাদের পরিবহন খরচের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করি। আমরা যে মানের সেবা দিচ্ছি সে অনুযায়ী ভাড়া ঠিক আছে। যে টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তাতেও আমরা লাভবান হতে পারছি না। কারণ এসি বাসের সার্ভিসিং খরচ বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য খরচও রয়েছে। এ ছাড়াও গুলশানে যে জ্যাম পড়ে তাতেও খরচ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে আমরা লাভবান হতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে আমরা অনেক লোকসানে পড়েছি। এ লোকসান কাটিয়ে উঠতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। অন্যান্য পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করা হয়। আর এসি বাসের ক্ষেত্রে করা হয়নি। তবে বনানী এলাকায় যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য নয়।

Link copied!