Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪,

খালাস পেলো ৮৭ অভিযুক্ত

থামছে না প্রক্সি ও প্রশ্নফাঁস

মো. নাঈমুল হক

মে ৪, ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম


থামছে না প্রক্সি ও প্রশ্নফাঁস
  • চট্টগ্রামে প্রক্সিকাণ্ডে যুবকের এক মাসের কারাদণ্ড
  • ঢাবির ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্তদের খালাস
  • প্রাথমিকে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় গ্রেপ্তার ৭৪ ও তৃতীয় ধাপে ১৩ জন

প্রশ্নফাঁস প্রমাণ করার জন্য সব মহলের সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন 
—ড. ছিদ্দিকুর রহমান, সাবেক আইইআর পরিচালক, ঢাবি

প্রশ্নফাঁস বন্ধে অভিভাবকদের আসামি করা উচিত
—ড. মিজানুর রহমান  
অধ্যাপক, ঢাবি

সরকারি চাকরি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ নেয়া, বয়সের অনুপাতে সর্বোচ্চ প্রাপ্তিটাই চায় সবাই। যোগ্যতা বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিলেই অবৈধ পন্থা বেঁচে নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না কেউ কেউ। এরই ফলে ঘটছে প্রক্সি ও প্রশ্নফাঁসে মতো জঘন্য অনৈতিক ঘটনা। এতে বাড়াভাতে ছাই পড়ে যোগ্যপ্রার্থীদের। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য যাওয়ার চেষ্টায় সর্বোচ্চ টুকু দিয়েও কেউ কেউ বঞ্চিত হন। এমন হতাশার গল্প লাখ লাখ। এরপরও থেমে নেই প্রক্সি ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। তাদের রুখবে কে? আইনের মারপ্যাঁচেই সহজেই মেলে তাদের মুক্তি। এমনি ঘটনায় ২০১৭ সালে অভিযুক্ত হন ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থী। কিন্তু পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে মুক্ত হন সবাই। সে জন্য প্রশ্নফাঁস রোধে সর্ব মহলের সর্বাত্মক চেষ্টা করার আহ্বান জানান শিক্ষাবিদরা। শুধু ফাঁসকারী চক্রই নয়; একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও আসামি করা কথা বলছেন তারা।

জানা গেছে, গতকাল চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারী পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে আব্দুর রউফ মিয়া (২৮) নামের এক যুবক। নগরীর খুলশী থানাধীন ওমরগণি এমইএস কলেজ কেন্দ্র থেকে তাকে ধরা হয়। এ ঘটনায় তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সবগুলো ধাপেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ৭৪ জন ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ১৩ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

তৃতীয় ধাপের আটককৃতদের ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা চলাকালে উত্তরপত্র, ডিজিটাল ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন এবং রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দুই জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় আলাদাভাবে দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজবাড়ীতে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী পরে আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এর আগে বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধায় ৩৭, রংপুরে ১৯ ও দিনাজপুরে ১৮ জনকে আটক করা হয়। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ২৪টি মাস্টারকার্ড, ২০টি ব্লুটুথ, ১৭টি মোবাইল ফোন সেট, ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।

ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত সব শিক্ষার্থী খালাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জন আসামি খালাস পেয়েছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত সমপ্রতি এ রায় দেন। সাড়ে ছয় বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলাটি করা হয়েছিল। খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২১ জন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। আছেন আটজন চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী। বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এমন এক ব্যক্তিও রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় দুটি আইনে (আইসিটি ও পাবলিক পরীক্ষা) অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ১২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আইসিটি আইনের মামলায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ গঠন করা হয়।

চার্জ গঠনের পর আদালতে সাক্ষীদের হাজির করতে সমন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। একমাত্র যে সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনিও অভিযোগ সমর্থন করে কোনো সাক্ষ্য দেননি। আইসিটি আইনের যেসব ধারায় (৫৭ ও ৬৩) অপরাধের অভিযোগ মামলায় আনা হয়, তা বিচারে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আসামিদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

রায়ে আদালত বলেছেন, একই অপরাধের অভিযোগে মামলায় পৃথক অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি ও দণ্ডিত করা যায় না।

গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন রানা ও অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। একই দিন সিআইডি মামলা করে। মামলার আসামিদের মধ্যে ৪৬ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, প্রশ্নফাঁস মানে আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়। এর সঙ্গে জাতির নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা শেষ হলে সমাজ তার আদর্শ হারায়। সে জন্য প্রশ্নফাঁস ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এগুলো প্রমাণ করার জন্য সব মহলের সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, প্রশ্নফাঁসে জড়িত শিক্ষার্থীরা এ কাজ করার সুযোগ পায় অভিভাবকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। প্রশ্নফাঁস করতে কয়েক লাখ টাকা দিতে হয়। এত টাকা শিক্ষার্থীরা কোথায় পাবে? সে জন্য প্রশ্নফাঁসকারীদের পাশাপাশি অভািবকদেরও শাস্তি দেয়া উচিত।

আরএস
 

Link copied!