ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

দর্শনার্থীর অপেক্ষার শেষ কোথায়

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ০২:৩০ এএম

দর্শনার্থীর অপেক্ষার শেষ কোথায়

উন্নয়নের নামে চার বছর ধরে বন্ধ শাহবাগ শিশুপার্ক। চলছে আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ। শুরুই হয়নি আধুনিক রাইড স্থাপনের কাজ। ২০১৯ সালের এক নোটিসে বন্ধ হওয়া এ পার্কের কাজ কবে শেষ হবে, দর্শনার্থীদের অপেক্ষার শেষ কোথায় এমন নানা প্রশ্ন তাদের। নগরবাসী বলছেন, পার্কটি বন্ধ থাকায় শিশুদের বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হচ্ছে। সেখানে থাকা রাইডগুলোতে উঠতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামর্থ্যবানরা বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রে যেতে পারলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা হচ্ছেন বঞ্চিত। জনগুরুত্বপূর্ণ এ পার্কের কাজটি দীর্ঘদিন চলতে পারে না, দ্রুততার সাথে শেষ করে, সবার জন্য উন্মুক্ত করা উচিত। তা না হলে বিনোদনের অভাবে শিশু-কিশোদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং তাদের ডিভাইস আসক্তিও বাড়তে পারে। একই সাথে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৪ সালে মধ্যে চলমান কাজ শেষ করার কথা গণপূর্ত অধিদপ্তরের। ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দেয়ার পর শুরু হবে আধুনিক রাইড স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ। শিশু-কিশোরদের বিনোদন ব্যাহতের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে এবং দ্রুত কাজ শেষ হবে আশ্বাস দিচ্ছে তারা। তবে পার্কের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন জানা যায়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক যা শাহবাগ শিশুপার্ক নামে পরিচিত। এ পার্কটির জায়গার মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। উন্নয়ন কাজের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় শিশুপার্কটি সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ডিএসসিসির প্রকৌশল (যান্ত্রিক) বিভাগ।

মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে পার্কে আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিয়ের কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ফলে ভূগর্ভস্থ পার্কে ৫০০ গাড়ি রাখা যাবে। এ প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর পার্কটিতে আধুনিক রাইড স্থাপনের কাজ করবে ডিএসসিসি। এছাড়াও পার্কটিতে জলাধার, হাঁটার পথ, আন্ডারপাস ও মসজিদ নির্মাণের কথা রয়েছে। ফলে জাতীয় এ পার্কটি নতুন এক চেহারা পাবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পার্কটিতে যে আধুনিক রাইড বসানো হবে তা ইমপোর্ট করে আনা হবে।

ইতোমধ্যে একনেকে ডিএসসিসির একটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী। তবে ভিন্ন কথা বলছেন ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তিনি জানান, রাইড স্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়ে ডিএসসিসির প্রস্তাব এখনো অনুমোদন হয়নি। তবে ২০২৪ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ শেষ করার কথা। তারা কাজ শেষ করে ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দেয়ার পর তারা কাজ শুরু করবে।

আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ডিএসসিসির দ্বিতীয় পরিষদের ১১তম বোর্ডসভায় পার্কটির নতুন নামকরণ করা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক। আগে নাম ছিল শহীদ জিয়া শিশুপার্ক। এর আগে একই মাসে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকার সড়ক, ভবন ও স্থাপনা নামকরণ সংক্রান্ত উপ-কমিটির সভায় এ নতুন নামকরণের প্রস্তাব করা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয়া হয়। এ বোর্ডসভার সভাপতিত্ব করেছিলেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

শাহবাগে ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর ধরে শাহবাগ পার্কটি বন্ধ রয়েছে। এখনো দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছে। সরেজমিন তাদের এসব কথার প্রমাণ পায় এ প্রতিবেদক।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী ও শাহবাগ রুটে চলাচল করা বেশ কয়েকজন পথচারী আমার সংবাদকে বলেন, জাতীয় শিশুপার্কে আমাদের ছোটবেলার স্মৃতিজড়িত থাকলেও বর্তমান সময়ের শিশুদের এটি হয়তো থাকবে না। কারণ শিশুদের এখানে কমমূল্যে রাইডে চড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। এখন তা বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রের রাইডে উঠানো তো আমাদের সামর্থ্য নেই। কারণ সেখানে একটি শিশুর পেছনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়। তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা তো তাদের শিশুদের সেখানে নিয়ে বিনোদন দিতে পারছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা বলেন, বিনোদন কেন্দ্রের ভূমিকা হলো— মানসিক প্রশান্তি পাওয়া, রাতে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে, পারস্পরিক যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে, পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ার দক্ষতা বাড়ে, শিশুদের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে, ডিভাইস এডিকশন ও মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হয়, জ্ঞানার্জনে সাহায্য করাসহ মানসিক বিকাশ সুন্দর ও স্বাভাবিক হয় শিশু-কিশোরদের। সর্বোপরি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি বিনোদনের অভাবে শিশুর মানসিকসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু ঢাকা নগরীতে বিনোদনের ব্যবস্থা খুবই কম। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আধুনিকায়নের নামে জাতীয় শিশুপার্কের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা সুস্থ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ পার্কের কাজটি দ্রুততার সাথে সংশ্লিষ্টদের শেষ করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। এটি গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘শাহবাগ শিশুপার্কের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। নগরীতে কিছু খেলার মাঠ রয়েছে যেখানে শিশুদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জাতীয় এ পার্কটি বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনে ব্যাহত হচ্ছে। সামর্থ্যবানরা অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রে যেতে পারলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তের শিশুরা যেতে পারছে না। এ বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি।’

তিনি আরও বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্কে (শাহবাগ পার্ক) আধুনিক রাইড স্থাপনের জন্য মালামাল ইমপোর্ট করে আনা হবে। একনেকে এ পার্কের জন্য সিটি কর্পোরেশনের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা অনুমোদন হয়েছে। আমরা ওয়ার্ক প্ল্যান ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছি। পার্কে কী কী রাইড থাকছে, কত বাজেট ও কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা আমাদের যান্ত্রিক বিভাগ বিস্তারিত আপনাকে জানাবেন।

তবে ভিন্ন কথা বললেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘একনেকে আমাদের প্রস্তাব এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই পার্কে রাইড স্থাপনে কত টাকার বাজেট, কী কী রাইড থাকবে ও কয়টি থাকবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রস্তাব পাস হলে আপনাদের বিস্তারিত জানানো যাবে। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত এখনো সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ করছে। ২০২৪ সালে তাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তারা কাজ শেষে আমাদের বুঝিয়ে দিলে তারপর আমরা কাজ শুরু করব।

Link copied!