ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত দেশ

মো. মাসুম বিল্লাহ

অক্টোবর ৫, ২০২২, ১২:৫২ এএম

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত দেশ

কিছুদিন পরপরই দেশের জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। গত মাসেও (সেপ্টেম্বর) জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটে। সে সময় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা এবং ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সক্ষম হয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি। তবে ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান না করেই কারিগরি ত্রুটির কথা উল্লেখ করে দায় সাড়ে কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে গতকাল ফের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলো দেশ। দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা এ দুটিই- এমন নয়। ২০১৭ সালেও (৩ মে) বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় দেশের ৩২টি জেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

তারও আগে ২০১৪ সালের পহেলা নভেম্বর বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। তখন ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। যা বিশ্ব মিডিয়ায়ও ব্যাপক আলোচিত হয়। এরপরই চলমান লোডশেডিংয়ে যখন অতিষ্ঠ দেশের মানুষ, তখনই জাতীয় গ্রিডে আবারো বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলো। যা ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয় বড় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা।  

অতীতের ঘটনাগুলোতে না হলেও গতকালের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এরই মধ্যে সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগ। ব্যাহত হয় জরুরি সেবাও। দুর্ভোগ ও সেবা ব্যাহত ছাড়াও গতকাল সন্ধ্যা রাতের পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভৌতিক ও ভয়ংকর। এরই মধ্যে সারা দেশেই চলছে শারদীয় দুর্গাপূজা।

যে কারণে সারা দেশে পুলিশকেও সতর্ক অবস্থানে থাকার কড়া নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। ঢাকার পুলিশকেও দেয়া হয় বিশেষ নির্দেশনা। এর আগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক পরই বেসামাল হয়ে পড়ে পরিস্থিতি। বিকল্প উপায়েও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হয় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে হাসপাতালগুলো। একপর্যায়ে দিনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে।

নানামুখী ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের। বিঘ্ন ঘটে সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষাও। যদিও বিশেষ ব্যবস্থায় কিছুক্ষণ অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও আইসিইউ চালু রাখা হয়। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালেও জেনারেটরের মাধ্যমে এনআইসিও, এইচডিউ, আইসিউর কার্যক্রম চালু রাখা হয়।

গতকাল বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোতে বিচারকাজ পরিচালনা করেন বিচারপতিরা।

একাধিক আইনজীবী জানান, গতকাল সকাল থেকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারকাজ পরিচালনা করছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুপ্রিম কোর্ট। এ সময় এনেক্স ভবনের জেনারেটর বন্ধ থাকায় বিচারকাজ বন্ধ না করেই মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং এজলাস কক্ষে থাকা আইনজীবীদের মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে বিচারকাজ চলতে থাকে। প্রায় সোয়া ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট।

এ ভোগান্তি থেকে বাদ যায়নি বিমানবন্দরও। ব্যাহত হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। সোয়া ২টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ থাকায় ফ্লাইট পরিচালনাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় (জেনারেটর) কিছু কার্যক্রম চলে।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর জেনারেটর দিয়ে বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।  বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীর বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। পানি ও লিফট চালু না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেককেই। টানা ছয় ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি ও মসজিদে পানির সংকট দেখা দেয়। মসজিদ থেকে মুসল্লিদের ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাসাবাড়িতেও পানির সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ সংকটে সন্ধ্যার আগে দোকানে দোকানে মোমবাতির সংকট দেখা দেয়। কোথাও কোথাও মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবুও ক্রেতার দীর্ঘ লাইন ছিল দোকানগুলোতে। রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রল পাম্পে জেনারেটরের ডিজেল নেয়ার জন্যও দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে গতকাল।

মিজানুর নামে পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের অ্যাপার্টমেন্টটি ১০ তলা। বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিতে এসেছি। এসে দেখি দীর্ঘ লাইন। বাসায় পানি নেই সেজন্য জেনারেটর চালু করতে তেল নিতে এসেছি।

এদিকে দেশের এক হাজার বিটিএসেও (মোবাইল টাওয়ার) সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। আরও কয়েক হাজার বিটিএস ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। কারণ বিকল্প উপায়ে বিটিএসগুলো দুই তিন ঘণ্টা চালু রাখা যায়। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় বলেন, বিদ্যুৎ আসতে দেরি হলে নেটওয়ার্ক সেবায় বিঘ্ন ঘটে।

ইন্টারনেট সেবা দাতাদের সংগঠন ইন্টার সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় নেটের ব্যবহার কমে গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় সিএনজি পাম্পও। এতে গ্যাস নিতে আসা গাড়ি চালকরা ভোগান্তিতে পড়েন।

চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে প্রতিদিন সিএনজি স্টেশন চার ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। আজকে বিদ্যুৎ না থাকায় গ্যাসই নিতে পারেননি তারা। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকিং সেক্টরের এটিএম সেবাও। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা শাহীন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে এটিএম বুথে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি বুথ বন্ধ। দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় বুথ বন্ধ রাখা হয়েছে।  

এদিকে বিপর্যয়ের প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাতে ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। ঢাকার বাইরেও বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ না এলেও রাতের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে বিতরণ কোম্পানিগুলো জানায়। তবে পুরোপুরি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং করতে হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ : জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ অনুরোধ জানান। পোস্টে তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিড ট্রিপ করার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের বড় একটি এলাকায় দুপুর ২টা ৪ মিনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। আকস্মিক এ সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন : জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল বিকলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে। রাতেই পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি।

বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় : ২০১৪ সালের পর আবারো বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনামে উঠে এসেছে বাংলাদেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের খবর। বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর অনলাইনে সংস্করণে খবরটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। এর মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্ট, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর ১০ ঘণ্টার ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটার পর এটি দ্বিতীয় ঘটনা।

Link copied!