ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

এনআইডি ইসির সম্পদ

আবদুর রহিম

অক্টোবর ২০, ২০২২, ১২:৪৮ এএম

এনআইডি ইসির সম্পদ

গাইবান্ধায় ভোট বন্ধে সাবেক চার প্রধান নির্বাচন কমিশন বলেছেন, আউয়াল কমিশনের সিদ্ধান্ত সঠিক। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এমন দৃশ্য দেখা দিলে আরও ভোট বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতেও বলা হয়েছে এবং আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইভিএমে ভোট, এনআইডি স্থানান্তর ও বহুমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসে আউয়াল কমিশন।

এসময় সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠক চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। দীর্ঘ এ বৈঠকের ৪০ মিনিটের মাথায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন চলে গেলেও বাকিরা শেষ পর্যন্ত থাকেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করায় কাজী হাবিবুল আউয়ালকে সবাই ধন্যবাদ দিয়েছেন। তবে ইভিএমের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম কিনে টাকা অপচয় না করে আরও বেশি সিসিক্যামেরা কিনতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবার একাধিক কমিশনার ইভিএমের পক্ষেও বলেছেন। প্রযুক্তির সাথে তারুণ্যকে যুক্ত করার কথাও বলেছেন।

তবে এনআইডি অন্য মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা বিষয়ে সাবেক কমিশনাররা ক্ষুব্ধ। তারা বলেছেন, এনআইডি অন্য কোথাও স্থানান্তর হলে অনেক জটিলতা তৈরি হবে। আর এটি কমিশনের দীর্ঘ সময়ের তৈরি সম্পদ। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সচিব এবং সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা।

বৈঠকে তারা বলেছেন, কমিশনের দীর্ঘ সময়ের অর্জিত সম্পদ অন্যের হাতে চলে গেলে স্বাভাবিককভাবেই দেশের সাধারণ মানুষ বড় হয়রানির সম্মুখীন হবেন এবং আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্ক উঠবে। স্থানান্তরিত হওয়ার সময় কোনো গোপনীয়তাও প্রকাশ পেতে পারে, যা দেশের ভাবমূর্তি ও অস্তিত্বে এসে আঘাত করবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ নাগরিক অনলাইনের মাধ্যমে নতুন ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলনসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ ব্যবহার করে ১৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ই-কেওয়াইসি’র মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে সেবা প্রদান করছে। ভোটার তালিকা ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ একাধিক হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে বহু জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অসংগতি ও ভুল-ত্রুটির জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করবে। ফলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেছেন, যখন ভোটের কোনো সম্মান নেই, ভোটাররা ভোট দিতে পারেন না, ভোটকক্ষে কারচুপি চলে, তখন কী নির্বাচন কমিশন বসে থাকবে। তখন নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া কমিশনের রাইট আছে। আমরা বলেছি, যদি দরকার পড়ে, ভবিষ্যতে আরও বারবার ভোট বন্ধ করুন। তবুও ভোটের সম্মান উদ্ধার করার চেষ্টা করুন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তাদের চোখে জালিয়াতি ধরা পড়েছে, তাই ভোট বন্ধ করেছে। কমিশন যখন সকাল থেকে চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছে না, তখন কমিশন ভোট বন্ধ করেছে।

সাবেক এ কমিশনার আরও বলেন, মানুষ যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে ইভিএমে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। আর যদি না হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। দেখুন, যারা একেবারে অশিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞানশূন্য, তারা কি আপনার-আমার চেয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার কম জানেন? মোবাইল ব্যবহার করতে কম জানেন?

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ বলেন, এনআইডি যদি নির্বাচন কমিশনের বাইরে অন্য কোনো মন্ত্রণালয় স্থানান্তর করা হয়, তাহলে এটা জটিলতা ধারণ করবে। এনআইডি কমিশনের সম্পদ, তা এখানে থাকলে সরকারের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইভিএম ক্রয় করে অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে সিসিটিভি ক্যামেরা ক্রয় করুন। এতে নির্বাচন স্বচ্ছ হবে।

তিনি বলেন, ভালো হোক মন্দ হোক, ইভিএম নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। যে বাজেটে ১৫০টি আসনের জন্য ইভিএম কেনা হবে, তার থেকে ভালো যতখানি সম্ভব সিসিটিভি ব্যবহার করা। ব্যালট পেপারে ভোট চুরি করলেও সেটা খুঁজে বের করা সহজ। আপনাদের কাছে ভোটার লিস্ট (ছবিসহ) আছে। স্বাক্ষর আছে; সবকিছু আছে। ম্যাচ করা যায়। সূক্ষ্ম কারচুপি আপনারা যেটা দেখলেন ইভিএমে, বাইরের পরিবেশ ফার্স্ট ক্লাস! ঝামেলা নেই। হইচই নেই। কিন্তু ভেতরে কী হচ্ছে? অন্য সিস্টেমে (ব্যালটে) যখন এটা হবে, বাইরেও হইচই হবে। কারণ, একা তো পারবেন না। ভোট কাটতে হলেও পাঁচ থেকে ছয়জন লাগবে।

এতে প্রতিপক্ষ তো হইচই করবেই। এটা আপনারা আরও ভালো করে দেখতে পারবেন। ভোটকক্ষের সিসিটিভি তো কষ্ট করে দেখতে হয়। আমি বলেছি, আপনারা যেটা করেছেন, সেটা ঠিক আছে। তবে পরের ধাপগুলোয় যেন স্লিপ না করেন। যদি স্লিপ করেন, তাহলে জাতির কাছে অন্য রকমের মেসেজ যাবে আপনারা দেখানোর জন্য করেছেন। বাকিটুকু করলেন না। আইন শক্ত অবস্থানে যে বলেছেন, প্লিজ ডু ইট।

ফলোআপ হচ্ছে কারা, কী করেছে— তা বের করা। কারা দোষী, কারা দোষী নয়— সেটা চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে না পারলে ইসির উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠবে। কেবল ভোট বন্ধ নয়, যে ক্ষমতা আছে, সেটা প্রয়োগ করতে বলেছি। নিজস্ব কর্মকর্তা ও যাদের দিয়ে ভোট করাবেন, তাদের কনফিডেন্স আনতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে আপনারা প্রটেকশন দিচ্ছেন।

সাবেক কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেন, এখন যে কমিশন আছে, তারা আইন মেনেই সব কাজ করে যাচ্ছে। ইভিএমের বিষয়টি মানুষকে জানতে হবে। এটি এ দেশে বাস্তবায়ন করা কঠিন। যার কারণ হলো মানুষকে আগে জানতে হবে; জানাতে হবে। সাবেক কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, গাইবান্ধায় নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সঠিক। আমরা তা গ্রহণ করেছি। সাধুবাদ জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আছে, ভোট কারচুপি দেখেছে, ডাকাতদের দেখেছে, তাই বন্ধ করেছে। এখানে কোনো প্রশ্ন রাখার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন যথার্থ তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনআইডি যেহেতু নির্বাচন কমিশনের তৈরি জিনিস, এটি কমিশনের সম্পদ। নির্বাচন কমিশনের কাছে এনআইডি থাকলে কোনো অসুবিধা হয় না। এনআইডির সাথে ভোটার তালিকার সম্পর্ক আছে। এটা এখান থেকে নিয়ে গেলে কমিশনের অসুবিধা হবে।

ইভিএমের ব্যাপারে আমি বলেছি, আগে যেসব ভোট হয়েছে, মানুষ ভোট দিয়েছে। ৭০-৮০ ভাগ লোক ভোট দিয়েছে। ভোটাররা খুব আপত্তি  তোলেননি। প্রিজাইডিং বা অন্যান্য কর্মকর্তা বড় কোনো আপত্তি  তোলেননি। যারা জয়ী হয়েছেন, তারা আপত্তি তোলেননি। যারা জয়ী হতে পারেননি, তারা আপত্তি তুলেছেন। আর যারা কখনো ভোট দেননি, দেখেননি, তাদের পক্ষে কঠিন। অতীতে ইভিএমে বেশি ভোট হয়েছে শহরকেন্দ্রিক। আমি বলব, আগামী নির্বাচনে যতটুকু পারা যায় ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। তবে উন্নত দেশের সাথে আমাদের দেশের তুলনা করা যায় না। উন্নত দেশে যেমন সবাই প্রযুক্তিতে দক্ষ, এ দেশে সেটির অভাব আছে। এখানে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকে না। এখানে কেন্দ্র দখল করে। এখানে ভোট ডাকাতি হয়। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনে ইভিএম সংস্কৃতি আনাও প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কমিশন। মাঠ প্রশাসনের ব্যাপারে বলেছি, তাদের মধ্যে একটা সুন্দর সমন্বয় করা প্রয়োজন। তাদের সাথে ঘন ঘন বৈঠক করতে হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের পক্ষ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তারা আমাদের গুরুজন। ভোট বন্ধের বিষয়টিতে প্রশংসা করেছেন সবাই। হাবিবুল আউয়াল বলেন, গাইবান্ধার ভোট বিষয়টি কেমন হলো জানতে আমরা আমাদের অভিজ্ঞ গুরুজনদের ডেকেছি। এ নিয়ে সার্বিক আলোচনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে ভোট বন্ধের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন; প্রশংসা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া তারা এনআইডি নিয়েও কথা বলেছেন। এনআইডি নির্বাচন কমিশনে থাকা প্রয়োজন বলে প্রত্যেকে মতামত দিয়েছেন। এটি অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হলে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দেবে। ইভিএম ব্যবহারে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে বলে জানান তিনি। তারা বলেছেন, ইভিএম বিষয়ে জনগণের মাঝে একটি নেগেটিভ বিষয় রয়েছে।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, এখন আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর দিতে হবে, নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের সততার, সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে ভূমিকা পালনে গুরুজনরা পরামর্শ দিয়েছেন। এ সময় সাবেক নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম, রফিকুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সচিব হেলাল আহমেদ, সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির, এমএম রেজা, মো. আব্দুল্লাহ, মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কর্মপরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাদিক, অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান, বেগম জেসমিন টুলী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর সকাল ১০টায় জেলা পরিষদ ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অতিরিক্ত আইজিপিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 

Link copied!