ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

৩০ বছরেও নিষ্পত্তি হয় না

শরিফ রুবেল

শরিফ রুবেল

নভেম্বর ১৬, ২০২২, ১২:৫০ এএম

৩০ বছরেও নিষ্পত্তি হয় না

আসমা বিবি। বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের মদনহাট গ্রামে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পিতার রেখে যাওয়া এক একর ৩৫ শতাংশ জমির মালিকানা পান আসমা বিবি ও তার দুই বোন। অংশ মোতাবেক আসমা বিবি ৪৫ শতক জমির মালিক। কিন্তু খাজনা দেয়ার বাহানায় আসমার দুলাভাই জব্বার তার নিজের নামে ওই সম্পত্তির খাজনা খারিজ করে নেন। এমনকি অন্যান্য শরিক জব্বারের কাছে জমি বিক্রি করেছেন মর্মে একটি জাল দলিলও করে নেন। এতেই বাধে বিপত্তি। সম্পত্তি ফিরে পেতে ১৯৮৮ সালে আম-মোক্তারনামা নিয়ে নাটোর দেওয়ানি আদালতে বণ্টন মামলা করেন আসমা বিবির স্বামী আজিজ মীর। এরপর মামলা চলে ১৬ বছর। সমন জারি ও সমনের জবাব না দেয়ায় দীর্ঘ সময় কেটে যায়।

তবে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালে আদালত আসমা বিবির পক্ষে ৪৫ শতক জমি দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পরে ২০১৪ সালে সহকারী জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আপিল করেন জব্বার। সেই থেকে মামলা ঝুলে আছে। বিচার আর আগায়নি। ৩০ বছর বাটোয়ারা মামলা চালিয়ে আজিজ মীর এখন ক্লান্ত। মামলা চালানোর ইচ্ছাও এখন আর নেই। যখন তিনি মামলাটি করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৫০; এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। বয়স চলে গেছে, তবে মামলা রয়ে গেছে। এখন মামলার শেষ দেখে যেতে পারবেন কি না— সেই শঙ্কায় আছেন আজিজ। 

শুধু আজিজ মীরের মামলাই নয়, দেশে বণ্টন যেন সীমাহীন ভোগান্তির খড়গ। যার শুরু আছে, শেষ নেই। মামলা হলেই নিষ্পত্তি হতে যুগের পর যুগ সময় লাগে। মামলা করেন দাদা। সে মামলার রায় হাতে পান নাতি। অনেক সময় নাতিও তার সন্তানকে পক্ষভুক্ত করেন। ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতে থাকে আইনি লড়াই। মামলা শেষ হওয়ার উপক্রম হলেও তা ঝুলিয়ে রাখা হয়। কারণ এখানে থাকে নানামুখী স্বার্থ। বাদী-বিবাদীর চেয়ে বড় স্বার্থ আইনজীবী ও আদালত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ঘাটে ঘাটে অর্থ ঢেলে বিচারব্যবস্থার প্রতি চরম বিরক্ত হন বিচারপ্রার্থীরা। আইনজীবীর ফি, বিভিন্ন নথির সই, মুহুরি, নকল সংগ্রহ, যাতায়াত, খাবার ও আনুষঙ্গিক খাতে সীমাহীন খরচ মেটাতে নিঃস্ব হন কেউ কেউ। মামলা চালাতে ভিটেমাটি বিক্রির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বাটোয়ারা মামলা হলেই ৩০ বছর পার হয়ে যায়। নথিপত্র যাচাই, সমন জারিসহ সবকিছুতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। সমন জারি হলেও বিবাদীরা পাঁচ বছরেও জবাব দেন না। 

ফলে বিচারকাজও আর এগোয় না। মামলার রায়ের অপেক্ষায় থেকে মারা যান বাদী। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে কেটে যায় যুগের পর যুগ। মামলা দায়ের করে কোনো বাদী ১০ বছরের মধ্যে ফলাফল পেয়েছেন— এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম। কোনো কোনো সময় যে সম্পত্তির জন্য মামলা হয়, সেই সম্পত্তির মূল্য আর মামলার পেছনে ব্যয়িত অর্থ অনেক সময় সম্পত্তির মোট মূল্যকেও ছাড়িয়ে যায়।

জানা যায়, সারা দেশের আদালতগুলোয় ফৌজদারিসহ নানা অপরাধে যত মামলা আছে, তার ৮০ শতাংশই ভূমি নিয়ে। খুন-খারাবির মতো ভয়ানক ঘটনাও ঘটছে ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে। ফলে দীর্ঘদিনে এই মামলার জটও এখন মহাজটে পরিণত হয়েছে। জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া, দেওয়ানি আদালত থাকলেও তার এক-চতুর্থাংশে বিচারক না থাকা, দেওয়ানি আদালতে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম চলা, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বাদী-বিবাদীর মৃত্যু ও আদালতে আসতে সাক্ষীদের অনীহাও মামলা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আদালতে তারিখের পর তারিখ পড়ে। বিচারক বদল হন। এক মামলা থেকে সৃষ্টি হয় আরেক মামলা। সব মামলায় বাদী-বিবাদী হাজিরা দেন। মামলার পেছনে  অর্থ ঢেলে নিঃস্ব হন বিচারপ্রার্থী। বলা হয়, দেওয়ানি মামলায় বাদী কিংবা বিবাদী কেউই জেতেন না। জয়ী হন আইনজীবী, মুহুরী আর আদালত সহায়ক কর্মচারীরা। মক্কেলের টাকায় তাদের পকেট ভরে। জমিজিরাত বিক্রি করে মক্কেল নিঃস্ব হন। গাড়ি-বাড়ির মালিক হন আদালত-সংশ্লিষ্টরা। এ এক অচ্ছেদ্য চক্র। এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ বিদ্যমান আইন ও বিচারব্যবস্থায় আপাতত নেই। 

আইনজ্ঞরা বলছেন, একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি মামলা পরিচালনার অনুপযোগী। এ আইনের প্রয়োগ পদ্ধতিও আধুনিক নয়। দেওয়ানি মামলার দীর্ঘসূত্রতা লাঘবে প্রথমেই প্রয়োজন আইনের সংস্কার।

আইনজীবীদের মতে, দেশে দেওয়ানি মামলার বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি এখনো যুগোপযোগী হয়নি। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি মামলা পরিচালনার অনুপযোগী। এ আইনের প্রয়োগ পদ্ধতিও আধুনিক নয়। আদালতের বাইরে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগও উল্লেখ করার মতো নয়। যে কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে এর প্রভাব পড়ছে। বিচারিক আদালত হয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত জমি-সংক্রান্ত মামলা ১০ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে— এমন নজির খুব বেশি নেই। কোনো কোনো মামলায় ৪০ বছর পর্যন্ত সময় পেরিয়ে যায়। মামলার আরজি প্রস্তুত, শুনানির জন্য নোটিস জারি, বিবাদীর জবাব দাখিল ও গ্রহণে বিলম্ব, ঘন ঘন শুনানি মুলতবির আবেদন ও তা মঞ্জুর, বিচারক ও এজলাস স্বল্পতা, জুডিশিয়াল পলিসি ও দেওয়ানি আইনের সংস্কার না হওয়াসহ নানা জটিলতায় দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি হয় ধীরলয়ে। এতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। অনেকে আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলার অধস্তন আদালতে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৭টি দেওয়ানি মামলার বিচার চলছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ৮৯ হাজার ২০৭টি। এছাড়া আপিল বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১১ হাজার ৯৭৮টি। তবে এর অধিকাংশ মামলাই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত এসে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে  কোনো কোনো মামলার ২৫ থেকে ৩০ বছরও লেগে যাচ্ছে।  

জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতে বিচারব্যবস্থা চলছে, তা দিয়ে এ বিশাল মামলাজট নিরসন ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হবে না। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বাড়াতে হবে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রয়োগ করা যায়। স্থানীয়ভাবে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি একটি উত্তম পন্থা হিসেবে কাজ করবে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে জমি-সংক্রান্ত বিরোধগুলো সেখানেই মিটিয়ে আনা সম্ভব। এটি হলে অনেককেই মামলা করতে আদালতে আসতে হবে না।

শফিক আহমেদ বলেন, ‘বিচারকালীন ঘন ঘন শুনানি মুলতবির আবেদন ও তা মঞ্জুর বিচারের অন্তরায়। একবার শুনানি শুরু হলে কোনো মুলতবি ছাড়াই মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আসলে মামলাজট আদালতে নিষ্পত্তির ধীরগতির কারণে হয় না। এর জন্য দায়ী মামলার কারণ। মামলার কারণ উদ্ভবের জন্যই আদালতে মামলা আসে। আদালতের চাপ বাড়ে। নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়। তিনি আরও বলেন, মামলা কেন হয়— এর কারণ খুঁজে বের করে ওই কারণগুলো কমাতে হবে। প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ সবাই যদি তাদের দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে মামলার কারণ ও মামলার চাপ কমবে।

Link copied!