ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

হেলথ কার্ডে গবাদিপশুর সঠিক পরিচর্যা

বেলাল হোসেন

নভেম্বর ৩০, ২০২২, ০১:৩১ এএম

হেলথ কার্ডে গবাদিপশুর সঠিক পরিচর্যা

প্রাণিসম্পদের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ সেক্টরে সফলতার মুখ দেখছেন অনেক উদ্যোক্তা। নিজের পালিত গবাদিপশুর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রাণিস্বাস্থ্য সহায়তায় খামারিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে হেলথ কার্ড। এর মাধ্যমে প্রাণির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের তথ্য সংরক্ষণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। মাঠপর্যায়ে প্রাণিসম্পদের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)।  

১০ লাখ গবাদিপশুর জন্য হেলথ কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এই কার্ডগুলো ইতোমধ্যে প্রডিউসার গ্রুপের (পিজি) সদস্যদের মাঝে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এর বাইরে পশুপালনের সাথে সম্পৃক্ত কৃষকদের মাঝেও বিতরণ করা হয়েছে। সুফলভোগীদের গবাদিপশুর কৃমিনাশক প্রয়োগ এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদানের তথ্যাদি ওই হেলথ কার্ডে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃমিদমন এবং ক্ষুরারোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে সচেতনতা সভা আয়োজন এবং লিফলেট তৈরি ও খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দেশের প্রান্তিকপর্যায়ে বেশিরভাগ গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ, লাম্পি স্কিন, ওলান ফোলা রোগ, কৃমির সমস্যা দেখা যায়। এসব রোগের ফলে পশুর শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। শরীরের ওজন কমে যায়। গাভীর দুধ কমে যায়।

এছাড়া অনেক সময় গরু মারাও যেতে পারে। গবাদিপশুর সুস্বাস্থ্যের ওপর সবসময় নির্ভর করে তার বাজার মূল্য এবং খামারির বড় সাফল্যের অংশ হচ্ছে সময়মত পশুর চিকিৎসাসেবা নেয়া। বর্তমানে সারা দেশে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে এলডিডিপি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে মাঠে কাজ করছে দক্ষ টিম। গবাদিপশুর টিকা প্রদান সংক্রান্ত হেলথ কার্ডে তড়কা টিকা, বাদলা টিকা, গলাফুলা টিকা, ক্ষুরারোগ টিকা ও এলএসডি টিকা প্রয়োগের ছক আছে। এতে কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগের তথ্য-সম্বলিত ছক আছে। এর মাধ্যমে একজন খামারি সহজেই তার পশুর স্বাস্থ্য চিকিৎসার তথ্য জানতে পারবে। যার ফলে দুগ্ধদানকারী গাভীর দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে এবং পশুর শারীরিক বৃদ্ধি ভালো হবে।

হেলথ কার্ড সুবিধাভোগী সাভার উপজেলার ‘ফার্ম হাউজ ডেইরি অ্যান্ড এগ্রোর’ মালিক মনির হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, গরুকে ক্ষুরারোগের টিকা, তড়কা টিকা ছাড়া অন্যান্য ভাইরাসজনিত যেসব রোগগুলো আছে এর জন্য আমি ভ্যাকসিন দিয়েছি। এগুলো পাঁচ থেকে ছয় মাস মেয়াদি হয়। এগুলো আগে খাতায় লিখে রাখতাম। হয়তো কোনো এক সময় এগুলো হারিয়ে যেত, তখন সমস্যা হতো।

তিনি বলেন, এখন পিজির মাধ্যমে এই হেলথ কার্ড পাওয়ায় এটা এখন অনেক সহজ হয়েছে। প্রত্যেক টিকার ঘর ছক করে দেয়াতে এটা আমাদের খামারিদের জন্য উপকার হয়েছে।

মনির হোসেন বলেন, নামাগেন্ডা ডেইরি পিজির ছোট, মাঝারি ও বড় খামারি মিলিয়ে মোট ৩৬ জন সদস্য। সবাই এই হেলথ কার্ড ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকেই আগে টিকার বিষয়ে তেমন সচেতন ছিলেন না। এতে করে দেখা গেছে, অনেকের গরু মারা যায়। গরুর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এখন পিজি গ্রুপে মিটিং করে এই কার্ডগুলো দেয়া হয়েছে। সবাই গবাদিপশুর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে উপকারিতা পাচ্ছেন। এখন ডা. কার্ডে লিখে দিয়ে যাচ্ছেন। এতে সবাই সচেতন হচ্ছেন একে অপরের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলার খামারি মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী আমার সংবাদকে বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিসের সহায়তা নিয়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা করান। এখন তিনি নিজে বিভিন্ন রোগের টিকা লিখে রাখেন, এতে কষ্ট হয় বলে জানান। হেলথ কার্ড সম্পর্কে এখনো তিনি ধারণা পাননি।

তবে এ খামারি বলেন, যদি এই কার্ডের মাধ্যমে পশুর চিকিৎসার তথ্য রাখা যায় তাহলে নিয়মিত টিকা দেয়া এবং কৃমির ওষুধ খাওয়ানো অনেক সহজ হবে।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ক্ষুদ্র খামারি জাকির হোসেন বলেন, গরুর চিকিৎসার জন্য আগে টিকা দিয়েছি। কৃমির ওষুধ খাওয়ানোয় তেমন কোনো গুরুত্ব দেইনি। ঠিকমত হিসাব রাখতে পারিনি। বর্তমানে আমি বামোনিয়া ডেইরি পিজির সদস্য। এর মাধমে হেলথ কার্ড পেয়েছি, এখন বিভিন্ন টিকার তথ্য লিখে রাখছি।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রাণিসম্পদ স্যার এসে এর তথ্য দেখে আমাদের পরবর্তী টিকার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা চারটি উঠান বৈঠক করেছি। আমাদের সদস্যদের গরুর চিকিৎসা ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।

ডোমার উপজেলার প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অফিসার ডা. শ্যামলী আক্তার আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের উপজেলায় হেলথ কার্ড দিয়েছি। খামারিরা এখন গবাদিপশুর টিকার বিষয়ে অনেক সচেতন। তিনি বলেন, প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ম-কানুন কি— এ বিষয়ে তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করা হয়।

এ বিষয়ে জাতীয় পশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরবিন্দ কুমার সাহা আমার সংবাদকে বলেন, হেলথ কার্ডে একজন খামারির আইডি নাম্বার দেয়া আছে। এখানে সে সহজেই ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টা এন্ট্রি করতে পারবে।

তিনি বলেন, যে কেউ এই কার্ডটা দেখতে পারে। শুধু যে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের লোক দেখবে, তা নয়। এটা যদি অধিদপ্তরের লোকও ভিজিট করতে যায়, সেও দেখতে পারে। কি কি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তার তথ্য এখানে দেয়া আছে।

তিনি বলেন, একটা থেকে ১০টা গরুর তথ্য দেয়া যাবে। ছোট খামারির হিসেবে এই কার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে। কারো যদি ১০টার বেশি গরু হয় তখন সে দুটি কার্ড ব্যবহার করবে। এটা হবে কার্ড নাম্বার-১, কার্ড নাম্বার-২। ডা. অরবিন্দ বলেন, এই প্রজেক্টের সময়কাল চার বছর পর্যন্ত রেখেছি। পরে সময় বাড়লে আমরা আবার নতুন করে কার্ড দেব। এখন পর্যন্ত ১০ লাখ হেলথ কার্ড দেয়া হয়েছে। এখানে পিজির সদস্যদের বাইরেও হেলথ কার্ড দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পিজির বাইরে ৩০ শতাংশ যোগ করা হবে। বর্তমানে কার্ড বিতরণ চলমান আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক এলাকায় কোনো রোগ ছড়ালে আমরা তো কেউ নিরাপদ নই।

খামার পরিচালনা করার জন্য এটা একটা বড় রকমের কীট উল্লেখ করে ডা. অরবিন্দ বলেন, একজন খামারি ঠিকমত ভ্যাকসিন করছে কি-না। একজন শিক্ষিত লোক ওই কার্ডটা দেখলে বুঝতে পারবেন কখন কোন ভ্যাকসিন দিতে হবে। তিনি বলেন, একজন খামারি যদি নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তাহলে প্রডাক্টিভিটি বাড়বে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন হবে।  

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পশু স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যানুয়াল, বুকলেট, ফোল্ডার তৈরি করা হয়েছে। খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গবাদিপশুর কৃমিদমন বিষয়ে ফোল্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ম্যাসটাইটিস, রিপ্রোডাকটিভ ও মেটাবোলিক রোগ নিয়ন্ত্রণে ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য ম্যানুয়াল, সাবটেকনিক্যাল স্টাফদের জন্য বুকলেট এবং খামারিদের জন্য ফোল্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বিতরণ করা হচ্ছে।    

Link copied!