ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
ভরা মৌসুমেও কমেনি চালের দাম

সব আশ্বাস বিফলে

রেদওয়ানুল হক

জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম

সব আশ্বাস বিফলে
  • দাম না কমায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ ক্রেতা
  • বিক্রেতারা বলছেন নতুন চালের দাম কিছুটা কমলেও পুরান চালের দাম উল্টো বেড়েছে

 সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় চালের নির্ভরতা বেড়েছে

—ড. নাজনীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ, ইউএনডিপি

 দুর্ভিক্ষের খবরে ব্যক্তিপর্যায়ে মজুত বেড়েছে

—গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

নানা অজুহাতে দফায় দফায় বেড়েছে চালের দাম। একটা আশ্বাস ছিল আমন মৌসুমে কিছুটা কমবে। সরকারও দিয়েছিল এমন সুখবর। কিন্তু সব আশায় গুঁড়েবালি। ভরা মৌসুমেও চালের দাম স্থির। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে এমনটাই জানিয়েছিলেন খাদ্য সচিব। সরবরাহ ঠিকই বেড়েছে কিন্তু দাম কমেনি। তাই ক্ষোভে ফুঁসছে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই।

রাজধানীর কাপ্তান বাজারে চাল কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মৃদুল। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে চালের দাম এক-দুই টাকা করে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। তখন শুনতাম কয়েকদিন পর মৌসুম এলে দাম কমবে। মৌসুম এসেছে কিন্তু দাম কমেনি। দোকানদাররা যা বলে তা শুনি, কার কাছে বলব, বলেই বা কি হবে? সবাকেই তো চাল কিনে খেতে হয়, কে শুনবে কার কথা।’

দোকানি মারুফ বলেন, আমাদের সাথে ক্রেতারা মাঝেমধ্যেই তর্কে লিপ্ত হন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কেনা বেশি দামে সে অনুপাতে বিক্রি। আমরাও দাম কমার আশায় আছি। চালের দাম কমে যেতে পারে এমন আশায় থেকে কম পরিমাণে চাল কিনছি। বিক্রিও হচ্ছে কম, লাভও হচ্ছে কম। সাধারণত মৌসুম এলে চালের দাম কমে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। দাম তো কমেইনি উল্টো বাড়ার আভাস দিচ্ছেন মিলাররা।  

রামপুরা এলাকার কুমিল্লা রাইস আড়তের বিক্রেতা মহসিন আমার সংবাদকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে দাম কমেনি। নতুন চালে দাম কিছুটা কমেছে কিন্তু মান খুব খারাপ। আবার গুটি মিশ্রিত করে দাম কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে পুরান চালের দাম উল্টো কেজিতে এক টাকা বেড়ে গেছে। মিনিকেট বা সরু চাল এখনও ঊর্ধ্বমুখী। আগামী বোরো মৌসুমের ধান আসার আগে সরু চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তিনি।

চালের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ওঠানামার তথ্য দিয়ে এ আড়তদার বলেন, বাজারে এখন গুটি স্বর্ণা পাইকারি দাম বস্তা (৫০ কেজি) দুই হাজার ২৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা এক মাস আগে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায় ছিল। পুরান পাইজাম আগের দামেই দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন পাইজাম দুই হাজার ৪৪০ টাকায় বিক্রি করছি কিন্তু মান খুবই খারাপ হওয়ায় ক্রেতারা বকাঝকা করে।

তবে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চালের দাম ৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম আড়াই শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৫ শতাংশ কমেছে। তবুও এক বছর আগের তুলনায় সরু চাল আড়াই শতাংশ, মাঝারি চাল সাড়ে ৫ শতাংশ এবং মোট চাল ৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারগুলোতে এখন সরু চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা; এক বছর আগে দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি চাল এখন প্রতিকেজি ৫২ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং এক বছর আগে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হতো। আর দামে কিছুটা কম হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ কেনেন মোটা চাল, মান ভেদে যা এখন প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এক মাস আগে যা ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা এবং এক বছর আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন আমার সংবাদকে বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে আশা করি চালের দাম কমে যাবে। কিন্তু মাস পার হতে চলেছে কিন্তু দাম কমার খবর নেই। এ বিষয়ে তার মন্তব্যের জন্য একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমছে না বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। 

ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তি তাই চালের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেশি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। তবে এখন যেহেতু আমন মৌসুম তাই চালের দাম কিছুটা কমার কথা ছিল। কিন্তু আগে থেকেই দাম বৃদ্ধির যে ধারা ছিল তার কারণে দাম সেভাবে না কমলেও বাড়েনি। অর্থাৎ আমনের সরবরাহের কারণে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যথায় দাম আরও বেড়ে যেত। 

তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি যে, আমন আমাদের চালের প্রধান উৎস নয়; মোট চাহিদার ২০-২৫ শতাংশ আমন থেকে আসে। আমাদের প্রধান উৎস বোরো ধান।’ এছাড়া দুর্ভিক্ষের খবরে ব্যক্তিপর্যায়ে মজুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে চালের সরবরাহ কিছুটা কম হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের খবর যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে ব্যক্তিপর্যায়ে খাদ্য মজুত হচ্ছে। যাদের হাতে টাকা আছে তারা ধান-চাল কিনে নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছেন। তাই বাজারে নতুন চালে সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে দামে তেমন প্রভাব পড়েনি।’

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার খবর অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। যা দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সমপ্রতি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে নিরাপদ মজুতের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে স্বাভাবিক খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ১৩ লাখ টন এবং সংকটকালীন মজুতের পরিমাণ ১৪ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়। গত বছর খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১০ লাখ টন। 

তবে কাঙ্ক্ষিত সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে প্রতিকেজি ৪২ টাকা দরে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। গত এক মাসেরও বেশি সময়ে মাত্র দেড় লাখ টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। সরকার আমন ধানের সর্বোচ্চ দর প্রতি মণ এক হাজার ১২০ টাকা নির্ধারণ করলেও বিভিন্ন জেলায় এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় নতুন ধান বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে সরকারের সংগ্রহ হচ্ছে কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬ মোতাবেক, জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট আয়ের ৪৭.৭০ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যে। 

গরিব ও অতিগরিব পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। আবার তাদের চাল ভোগের পরিমাণও অন্যদের চেয়ে বেশি। যখন দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চালের মাথাপিছু দৈনিক ভোগ ৪৭০ গ্রাম, তখন অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৩৬৬ গ্রাম। প্রধান এ খাদ্যপণ্যটির মূল্যস্ফীতিতে তারা ভোগেন সবচেয়ে বেশি। বিআইডিএসের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বাড়লে ৭৩.৮ শতাংশ হতদরিদ্র পরিবারই চালের ভোগ কমিয়ে দেয়। দরিদ্র পরিবারের বেলায় এ হার ৬৬ শতাংশ।

Link copied!