ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা-২০১০

সক্ষমতা নেই অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের

মো. নাঈমুল হক

মো. নাঈমুল হক

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০১:২৪ এএম

সক্ষমতা নেই অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের
  • উপাচার্য নেই ৩০টির, উপ-উপাচার্য নেই ৭৫টিতে ও ট্রেজারার নেই ৪২টির 
  • নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি ১৮ বিশ্ববিদ্যালয়
  • গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি ২৭ বিশ্ববিদ্যালয়
  • পালন হচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী কোটা

সক্ষমতা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া ঠিক হবে না -বিশ্বজিৎ চন্দ্ৰ সদস্য, ইউজিসি
প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা দরকার -ড. কামরুল ইসলাম অধ্যাপক, ঢাবি
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সমস্যায় উপাচার্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে -ড. আব্দুল মান্নান পিউবি, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি সুনাম অর্জন করলেও অর্ধেকের মতো প্রতিষ্ঠান ইউজিসির ন্যূনতম মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। মোট ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একসাথে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৫৮টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই নেই ‍‍`বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা-২০১০‍‍` পালনের সক্ষমতা।

এমনকি উপাচার্যও নেই এক-তৃতীয়াংশের। নেই পর্যাপ্ত অধ্যাপক ও প্রভাষক। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে পাঠদান। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত বাজেট। অনুমোদনের দুই থেকে ছয় বছর পার হলেও এখনো শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেনি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছয়টি। বারবার সময় দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এরপরও প্রতি বছর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থেমে নেই।

ইউজিসি বলছে, পর্যাপ্ত সক্ষমতার অভাবে এই সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যথাযথ নিয়মের অধীন করার চেষ্টা করছি।

তবে শিক্ষাবিদদের মতে, দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শিগগিরই এটি বন্ধ করা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানিয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সমস্যার কারণে উপাচার্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে। গবেষণা এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মেধাবী দরিদ্র কোটার ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ ধরনের কমিটি থাকতে হয়। এর মধ্যে তিনটির সভাপতি থাকেন উপাচার্য। অন্য তিনটি কমিটির সভাপতি হন উপাচার্য মনোনীত শিক্ষক। আর বাকি তিনটিতে সভাপতি থাকেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। এই তিনটিতে সদস্য হিসেবে থাকেন উপাচার্য এবং একটিতে ট্রেজারারের থাকা আবশ্যক। উপ-উপাচার্যও (প্রো-ভিসি) সদস্য থাকেন একাধিক কমিটিতে।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য নেই ৩০টি, উপ-উপাচার্য নেই ৭৫টি, ট্রেজারার নেই ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। পাঁচজনের কম স্থায়ী অধ্যাপক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেই। এক-চতুর্থাংশ খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট পূর্ণকালীন শিক্ষক রয়েছেন ১২ হাজার ৮২ জন। খণ্ডকালীন শিক্ষক হলেন তিন হাজার ৩১১ জন। কতগুলো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী খরায় ভুগছে।

২০২১ সালে স্নাতক, মাস্টার্স পর্যায়ে ১০০ জনেরও কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এর মধ্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণা খাতে মঞ্জুরি কমিশন নির্ধারিত ২ শতাংশ খরচের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয় কোটি টাকা উপরে থাকলেও গবেষণার জন্য এক টাকাও ব্যয় করেনি।

গবেষণার জন্য এক টাকাও ব্যয় করেনি, এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ব্যয়- বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বার্ষিক ব্যয় ৩২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয় আট কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রাইম ইউনিভার্সিটির বার্ষিক ব্যয় সাত কোটি ছয় লাখ টাকা।

এছাড়া সেন্ট্রাল ওমেনস ইউনিভার্সিটি চার কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বার্ষিক ব্যয় ছয় কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নামমাত্র ব্যয় করেছে। ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ২ থেকে ৬ বছর পার হলেও এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার পরও কয়েকটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে অনুমোদন পেয়েছে। একইভাবে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ, শাহ মাখদুম ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে। মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ২০২০ সালে অনুমোদন পেয়েছে। ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার মালিকানা দ্বন্দ্ব থাকায় এগুলো বন্ধ রয়েছে।

আইনের ৯ ধারার ৪ এ বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শতকরা ৬ তন্মধ্যে শতকরা ৩ ভাগ আসন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং শতকরা ৩ ভাগ আসন প্রত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য সংরক্ষণপূর্বক এসব শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে।’

কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণভাবে এই নিয়মটি মানা হচ্ছে না। ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানও বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পায়নি। ২৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে দরিদ্র মেধাবী কোটায় একজনও বিনা খরচে পাঠগ্রহণের সুযোগ পায়নি। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এই আইন মানছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. ওমর ফারুক বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য তৈরি হয়নি। শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় রেখেছি। অভিভাবকদের উচিত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাছাই করা। তাহলে পর্যাপ্ত শিক্ষা গ্রহণে তাদের সমস্যা হবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, অনেকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য আবেদন করেছে। তবে কেউ কেউ অযোগ্যদের নামও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাচ্ছেন। অযোগ্যদের তো উপাচার্য নিয়োগ দেয়া যায় না। পর্যাপ্ত পরিমাণ অধ্যাপক না থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলেছি। গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা তাদের উৎসাহিত করেছি। নীতিমালা পালনের সক্ষমতা ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া ঠিক হবে না।

দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান আমার সংবাদকে বলেছেন, ‍‍`করোনার সংকটের কারণে গবেষণা খাতে ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। এখন থেকে গবেষণা খাতে ব্যয় করব। মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র মেধাবী সন্তান না পাওয়ায় তাদের সুযোগ দিতে পারিনি। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সমস্যার কারণে উপাচার্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে। আমরা ট্রেজারার ফাইল পাঠিয়েছি। উপ-উপাচার্য ফাইল পাঠানো হয়নি।

দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলাম মামুন বলেন, নিজেদের সুনাম বৃদ্ধির জন্য সব সরকারই এমন অনেক কাজ করে, যার প্রয়োজন নেই। উচ্চশিক্ষা অন্যান্য বিষয়ের মতো নয়। এখানে জনসংখ্যার আনুপাতিক হার হিসাব করলে হবে না। আমাদের দেখতে হবে, কতজন শিক্ষার্থী প্রকৃত পক্ষে উচ্চশিক্ষার সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের আলোকে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। আপনি যদি ২০ জনের খাবার ১২০ জন খান স্বাভাবিকভাবে সবারই কম খেয়ে থাকতে হবে। একইভাবে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়ায় অধ্যাপক, ভিসিসহ নানাদিকে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানে সমস্যা তৈরি হয়েছে। 

Link copied!