ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

প্রশ্নের মুখে রপ্তানি খাত

রেদওয়ানুল হক

মার্চ ১৫, ২০২৩, ১২:১৫ পিএম

প্রশ্নের মুখে রপ্তানি খাত
  • রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার
  • পাচারের অর্থ মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটিসহ সাত দেশে
  • জাল নথিতে রপ্তানি করে সাবিহা সাকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম

পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে —ধারণা শুল্ক গোয়েন্দার

এমন ঘটনা রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে —বিজিএমইএ সভাপতি

ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত কয়েক মাস ধরেই দেশে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের শিল্পমালিকরা। এর সঙ্গে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট যুক্ত হওয়ায় রপ্তানি খাতে দুরবস্থা তৈরি হওয়ায় জানুয়ারি মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি। 

গত চার মাসে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। কিন্তু হঠাৎ করে রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের তথ্য সামনে আসায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে রপ্তানি খাত। কারণ, বিজিএমইর হিসাবে রপ্তানি পণ্য প্রস্তুত করতে আয়ের ৫০ শতাংশ অর্থ কাঁচামাল আমদানি বাবদ খরচ হয়। এর জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ হয়। তাই রপ্তানি আয় দেশে না এলে দেড়গুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশ।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ফখরুল আলম জানান, জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে এক হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮২ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— সাবিহা সাকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম। প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি জাতীয় পণ্য সাতটি দেশে রপ্তানি করেছে। শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি বলেন, ‘আমরা প্রথমে সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করি।

তারই ধারাবাহিকতায় আরও তিন প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচারের তথ্য পাই। তাদের কোনো এলসি ছিল না, আর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। চারটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের এক হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি দেখানো হয়। যার ঘোষিত মূল্য তিন কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৮২ কোটি টাকা। আমাদের ধারণা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, যখন কোনো জালিয়াতচক্র অর্থ পাচারের উদ্দেশ্য রপ্তানি করে, তখন তার উদ্দেশ্যই থাকে রপ্তানি মূল্য কোনোভাবেই দেশে আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা পণ্যের মূল্য কোনো না কোনোভাবে কম দেখানোর চেষ্টা করে। তার প্রধান লক্ষ্যই হলো টাকা বিদেশে পাচার করা। সেক্ষেত্রে তারা পণ্য রপ্তানির কথা বললেও উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বিপরীতে টাকা আর দেশে আসবে না। বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করে অর্থপাচার করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলো লিমেক্স সিপার্স লিমিটেড, এরই মধ্যে তাদের আইডি নম্বর লক করা হয়েছে। চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এ ধরনের কার্যক্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে কিন্তু পণ্যের রপ্তানি মূল্য বা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির টি-শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য রপ্তানির প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করা হয়েছে। তদন্তে দেখা যায়, সাবিহা সাকি ফ্যাশন মোট ৮৬টি পণ্যচালানের বিপরীতে ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার বা ২১ কোটি টাকা।

পাচারের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে সংস্থাটি জানায়, যেহেতু একটি ইএক্সপি বিল অব এক্সপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ নেই সেহেতু ৮৬টি বিল অব এক্সপোর্ট ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানিকারকের ইএক্সপি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বিল অব এক্সপোর্টর ফিল্ড ২৪-এ ‘কোড ২০’ ব্যবহার করার কারণে ইএক্সপি এবং সংশ্লিষ্ট বিল অব এক্সপোর্টে রপ্তানি কারকের বিআইএন অটোম্যাচ হয়নি। তাই এক্ষেত্রে ইএক্সপি অকার্যকর। ফলে বৈধ পন্থায় রপ্তানি হলেও বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার সুযোগ নেই।  

অন্যদিকে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন নামীয় প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে এক হাজার ৩৮২টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ১৪ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য দুই কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ মার্কিন ডলার বা ২৮২ কোটি টাকা।

ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন জালিয়াতির মাধ্যমে ২৭৩টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। পণ্যচালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন দুই হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্রাউজার, টপস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ৬৫ লাখ চার হাজার ৯৩২ মার্কিন ডলার বা ৬২ কোটি টাকা। আর ইলহাম নামীয় প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৯টি চালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ৬৬০ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্যাংক টপ, লেডিস ড্রেস প্রভৃতি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৫ মার্কিন ডলার বা ১৭ কোটি টাকা।

পাচারের এমন ঘটনা রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। অনেক সময় আমাদের বায়াররা আর্থিক দিক দিয়ে অযোগ্য হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় দেশে আনতে সমস্যা হয়। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি হলে এটি পুরো খাতের জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের রিজার্ভ নিম্নমুখী তাই রপ্তানি খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।  

প্রসঙ্গত, সব শেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এই রপ্তানি আয় গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত জানুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয় ৫০৯ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বরে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

টিএইচ
 

Link copied!