ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় অবহেলা

মো. নাঈমুল হক

এপ্রিল ১১, ২০২৩, ১২:১৭ পিএম

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় অবহেলা
  • শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে
  • পরিবার, বন্ধু-বান্ধব শিক্ষক-অভিভাবক কাউকে পাশে পান না সমস্যাগ্রস্তরা
  • নিষ্ক্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সেন্টার, দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসা

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে শিক্ষাব্যবস্থা সহায়ক নয় —শাহনেওয়াজ খান চন্দন, সহকারী অধ্যাপক, জবি
মানসিক সংকটে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে — ড. আজহারুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাবি

পাঁচ বছর আগে শীতের সকালে খুব ভোরে একজন শিক্ষার্থী ফোন করেছে। আমি তখন বিভাগের প্রধান। ছেলেটির ইমার্জেন্সি ফোন পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন ছেলেটি বলছিল, ‘স্যার, আমার পেটে দুইটা চোখ আছে। মাথার পেছনে একটা। আমি সব কিছু দেখতে পাই!’ এমন আরও অনেক অগোছালো কথা। শিক্ষার্থীর এলোমেলো কথাকে আমি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছি। 

তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে সে মানসিক সমস্যায় রয়েছে। এরপর দুই সপ্তাহের হসপিটালের চিকিৎসায় ছেলেটি এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার প্রেক্ষিতে এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার গল্প শেয়ার করেন প্রবাসী বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলাম।  

সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যায়ের তিনজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার কেউ আত্মহত্যার সঠিক কারণ জানে না! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন এমন একটা বই পড়েছে যেটি বন্ধুরা জানতও না, বুঝতেও পারেনি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি করত। কিন্তু তার সহযোদ্ধারা তার ভেতরের সমস্যাটি বুঝতেই পারেনি বা ছেলেটি তার সমস্যার কথা জানাবে, এমন মানুষ পায়নি। গত শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। যিনি অন্তঃসত্তা ছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, সন্তান না নেয়ার জন্য তার স্বামী চাপ প্রয়োগ করত। পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের সে সমস্যার বিষয়টি জানালেও কেউ তাকে আত্মহত্যা থেকে ফেরাতে পারেনি। এভাবে আমাদের আশপাশের অনেকে মানসিক সমস্যা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৪৪৬ জন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ এবং কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও রয়েছেন। জানা যায়, মানসিক সমস্যার ব্যাপারে আমাদের  সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে নেতিবাচক মানসিকতা। কারো মানসিক সমস্যা দেখলে তাদের পাগল বা টিটকারিমূলক কথা বলে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। সমাজে মানুষের টিটকারির ভয়ে পরিবারগুলো চিকিৎসাও নিতে চান না।

আমিনুল ইসলামের ওই পোস্টে রিদিশা কিবরিয়া বলেন, আমার বাসার কাছে এক ছেলে মেডিকেল কলেজে ভর্তিপরীক্ষা দিয়েছিল। সফল হতে পারেনি। তাতে তার বাবা বকাবকি করেছিলেন। এরপর থেকেই সে বলে যাচ্ছিল, সে আত্মহত্যা করবেই। তাকে বেশ কিছুদিন নজরবন্দি করে রেখেছিল যেন অঘটন না ঘটায়। শেষ পর্যন্ত সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে বিষ পান করে। ১৮ দিন আইসিইউতে থেকে গত ৮ এপ্রিল শনিবার রাতে মারা গেছে। এই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন। তার মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব যদি তার পাশে থাকত হয়ত সে বেঁচে যেতো। তার বাবা-মাকে এই কথা বলা হয়েছিল যে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান, সময় দিন ছেলেকে।

কিন্তু তারা বলেছিলেন যে, জানাজানি হলে লোকে কি বলবে? ইফতেখার ইফতি বলেন, সমস্যার গোড়াটা আসলে আমাদের মানসিকতায়। যদি কেউ শোনে, একজন তার মানসিক সমস্যায় ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য গিয়েছেন, তাহলে সমাজ তাকে পাগল আখ্যা দিয়ে আরও সমস্যায় ফেলবে। জাবি, ঢাবি, জবি, চবিসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাউন্সিলিং সেন্টার নিষ্ক্রিয়। কাউন্সিলিং সেন্টারের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কাউন্সিলিং সেন্টারে প্রতিকার পেতে কয়েক মাস পার হয়ে যায়। অফিসিয়াল টাইমে গিয়েও সেখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না।

কাউন্সিলিং সেন্টারে যাওয়ার পর প্রথমে নাম, ঠিকানা লেখানো হয়। এরপর শুরু হয় অপেক্ষা। সেন্টার থেকে ফোনের অপেক্ষা। বেশ কয়েকদিন অপেক্ষার পর কাউন্সিলিং সেন্টার থেকে ফোন দিয়ে ডাকা হলে ডাক্তার দেখাতে পারে শিক্ষার্থীরা। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে অনেকেই যেতে চান না সেন্টারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যা আর দশটা স্বাস্থ্যগত সমস্যার মতই। জ্বর, সর্দি-কাশি হলে যেমন একটা সময় পর ঠিক হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানসিক সমস্যারও চিকিৎসা আছে। সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে যায়। কারো অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়লে তাদের সঙ্গ দিতে হবে। তাদের তাৎক্ষণিক কাউন্সিলিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বিস্তর ঘাটতি রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের জীবনের ভালো-মন্দ দিকগুলো শেখানো হয় না। নৈতিক শিক্ষার নামে এমন কিছু গল্প বা কথা শেখানো হয় যা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট না।  

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা সহায়ক নয় জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান চন্দন আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা শিক্ষার জায়গা নেই। ধর্মীয় কিছু নৈতিক শিক্ষার বই রয়েছে। এই বইগুলোতে ধর্মীয় কিছু বিষয় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য পড়ে। বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের কমন কিছু নৈতিক বিষয় শেখানো হয়। অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখানো, সহমর্মিতা লালন, অপরের বিপদে ছুটে যাওয়ার প্রায়োগিক শিক্ষা আমাদের দেশে নেই বলা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, শুধু বই পড়ে আলোচ্য শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে ধরলে খুব সরলীকরণ করা হবে। বই পড়াটা সমস্যা না, প্রধান সমস্যা তার ভেতরের চলমান সংকট। সংকট মোকাবিলা করতে ছাত্রটি হয়ত কোনো লেখা বা তত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। নিঃসন্দেহে জাবির সেই ছাত্রটি সাংঘাতিক মানসিক পীড়ায় ভুগছিল। যেটা হয়ত তীব্র বিষণ্নতায় রূপ নিয়েছিল। অন্যান্য কিছুর সঙ্গে তরুণরা আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে। এ সময় তারা নিজেকে আবিষ্কার এবং একটা স্থায়ী পরিচয় পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকে। আর তখনই তারা নানা ধরনের বিশ্বাস বা মতবাদের দ্বারা আকৃষ্ট হতে পারে, যেটা ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক হিসেবে দেখা দিতে পারে।

তরুণদের এরকম মানসিক সংকটে পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়লে, গোপন না করে মনখুলে কথা বলতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। তরুণদের মনস্তত্ব বুঝে সে অনুযায়ী আবেগীয় ব্যবস্থাপনায় মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী যেমন কাউন্সিলিং বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।

Link copied!