ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সুদানে স্বপ্ন শুরু সেখানেই শেষ

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ১০, ২০২৩, ১২:০৮ এএম

সুদানে স্বপ্ন শুরু সেখানেই শেষ

* গুলি-বোমা-নির্যাতন আর লুটপাটের মুখে বাধ্য হয়েছেন দেশে ফিরতে 
* প্রবাসীরা বলছেন, সামনে তাদের অনিশ্চিত যাত্রা-ঘোর অমানিশা 
* সঙ্গে আনতে পেরেছেন লুঙ্গি আর বিছানার চাদর, বাকি সবই লুট হয়ে গেছে

দেড় হাজার বাংলাদেশির অবস্থান উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে। কেউ দীর্ঘদিন আবার কেউ কেউ চলতি বছরই পাড়ি জমিয়েছেন সেখানে। সবারই স্বপ্ন গড়ার মনোবাসনা ছিল দেশটিতে। যদিও দেশটিতে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও নিয়মিত সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান লড়াইয়ে সে স্বপ্ন ভেঙে এখন দেখা দিয়েছে ঘোর অমানিশা। মালামাল রেখে কোনোভাবে জান নিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় ৭০০ অপেক্ষমাণ বাংলাদেশির মধ্যে ১৩৬ জন। তারাই বলছেন, আতঙ্কের দেশে স্বপ্ন ফেলে রেখে শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন তারা। এখন আরেক দুশ্চিন্তার জীবনে পা রাখছেন। সামনে তাদের অনিশ্চিত যাত্রা। যদিও সরকারের তরফ থেকে নীতিমালা করে তাদের পুনর্বাসন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সুদানফেরত কারোর মনেই শান্তি নেই। তারা বলছেন, দেশটিতে সংঘাত শুরুর পর থেকেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। অনেকটা মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন অনেকেই। আর বেশির ভাগই সেখানে লুটপাট-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশে ফিরার পরদিন গতকাল ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তারা।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীল ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশটিতে ১৫ এপ্রিল সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়। এর পর থেকে একাধিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হলেও তা মানেনি কোনো পক্ষই। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব ঘটনা দেশটির মানবিক সংকটকে নতুন করে সামনে এনেছে। প্রাণ বাঁচাতে ইতোমধ্যে সুদান ছেড়ে পালিয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। সুদানে প্রায় দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন দেশটি থেকে চলে আসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে। পরে দূতাবাস ও সৌদি আরবের সহযোগিতায় সুদান থেকে জেদ্দায় নিয়ে আসা হয় ১৩৬ বাংলাদেশিকে। পরে তাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। সাত বছর আগে সুদান যান এরশাদুল। 

তিনি বলেন, সারাক্ষণ বোমা আর গুলির আওয়াজ শুনতাম। ভয় হতো, কখন বোমা আমাদের বাসায় এসে পড়ে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। দূতাবাসের উদ্যোগে সৌদি যাওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যায়, না খেয়েই ছিলাম। ঘরে পানি নেই, গ্যাস নেই; কী রান্না করব। আর বাইরে তো যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি ছিল না বলেন এরশাদুল। ঘরের মধ্যে আটকে থেকেও নিরাপদ ছিলেন না তিনি। তিনি বলেন, ডাকাতরা গুলি করে আমাদের সব নিয়ে গেছে।  আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। যারা ডাকাতি করেছে, তারা সুদানের নাগরিক। কিন্তু মুখোশ পরা ছিল, তাই বোঝা যাচ্ছিল না তারা কারা। অন্য আরেক সুদান প্রবাসী বলেন, আমরা খারাপ অবস্থায় ছিলাম। খাবার ও পানি না থাকায় অনেক কষ্ট হয়েছে। সারাক্ষণ শুধু আতঙ্ক, এই বুঝি বোমা হামলায় মারা গেলাম। আমাদের আশপাশের অনেক ভবনে বোমা হামলা হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। মানুষের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। আরেক প্রবাসীর বাসার পাশেই ছিল বেসামরিক ফোর্সের ক্যাম্প। ওই বাসার বাসিন্দারা সবসময় গোলাগুলির আওয়াজ শুনতেন। আর দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরেই বন্দি হয়ে থাককেন। প্রবাসীদের অনেকেই বলছেন, চারপাশে প্রচুর লুটপাট হয়েছে। ঘরে ঘরে ঢুকে মালামাল লুট করে নিয়ে যেত। এক কাপড়ে কোনোরকম দেশে এসেছেন তারা। 

বাসাবাড়িতেও চলছে হরিলুট : সশস্ত্র সংঘাতের উৎকণ্ঠার মাঝে এমন নানা অনিশ্চয়তার গল্প নিয়ে তিন সপ্তাহ ওই দেশে আটকে থাকার পর সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশিদের প্রথম দল। সেই দলের কেউ সুদানে জমানো সব অর্থ হারিয়েছেন, জামা, প্যান্ট, চাল-ডাল-আলু পর্যন্তও সংঘাতের বাজারে লুট হয়েছে, কেউ কেউ পাননি বেতন-বোনাস, ফিরেছেন শুধু লুঙ্গি আর বিছানার চাদর সঙ্গে করে। এসব প্রবাসীর মনে এখন ফেলে আসা আতঙ্ক আর সামনের অনিশ্চিত যাত্রার শঙ্কা। স্বামীকে সুদানে রেখে আসা চট্টগ্রাম হালিশহরের বাসিন্দা সাকি বলেন, তা স্বামী দেশে না ফিরে তাকে বলেছেন, আমি দেশে গিয়ে আর কী করব। আমাদের সব শেষ। আগে দেখি তোমরা যাও পরিস্থিতি ভালো হলে তো আমি আবার খার্তুমে চলে গেলাম। আর ঠিক না হলে তো আমাকে নিঃস্ব হয়েই চলে আসতে হবে। দালালের মাধ্যমে পাঁচ মাসের মধ্যে সুদানে গিয়ে একেবারে খালি হাতে ফেরা নিশিকান্ত জানান, জানুয়ারিতে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে দালালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন জেনে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সুদানে। তবে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ পান এক টাইলস কারখানায়। কপাল ফেরার বদলে তার ভাগ্যে নেমেছে ঘোর অমানিশা। 

তার ভাষ্য, একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙতি মাসের আট দিনের বেতন পাইছিলাম আর কিচ্ছু পাইনি। চাল-ডাল-আলু, যা পাইছে, সব নিয়ে গেছে। আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন ৫০০-৬০০টি গুলি পড়ত। যুদ্ধ বাধিছে পরে আর খাওয়া-দাওয়া নেই। পরে সৌদি আইসা দুডো ভাত খাইছি। আমি এখন কী যে করুম কিচ্ছু জানি না। লক্ষ্মীপুরের মান্দারির সবুজও সুদান গিয়েছিলেন সুদিনের স্বপ্নে। তবে ফিরেছেন দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করে। পরনের প্যান্ট গেঞ্জির সঙ্গে ব্যাগে করে আনতে পেরেছেন শুধু পুরোনো একটি লুঙ্গি আর বিছানার চাদর। 

সবুজ বলেন, আমরা রওনা দিছি কাল রাত ৯টার দিকে। ২টার দিকে জেদ্দায় আসছি। সেখান থেকে আমাকে একটা মাদ্রাসায় আনলো। এরপরে দেশে আনছে। আমি কিচ্ছু নিয়া আসতে পারিনি। আমি যে এখন বাড়ি যাব সেই গাড়ি ভাড়াটাও আমার কাছে নাই। আমাদের দুই মাসের বেতন, বোনাস কিছুই পাইনি। কোম্পানি বলে তোরা থাক। ওরা মনে করতাছে, আমরা থাকলে তার কোম্পানি পাহারায় থাকল। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেছেন, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি নীতিমালা করা হবে। নীতিমালার আলোকে সুদানফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসনে সাহায্য করা হবে।
 

Link copied!