ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে

মো. মাসুম বিল্লাহ

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১২:২৫ এএম

শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে
  • পুলিশের গুলিতে নারীশ্রমিক নিহত, পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্ন
  • আগামীকাল প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক, শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

দেশজুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রমিক অসন্তোষ। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে দুই শ্রমিক নিহতের পর থেকেই বাড়তে থাকে অসন্তোষ। অন্যদিকে ন্যূনতম মজুরির দাবি আদায় না হওয়াতেও দিনে দিনে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। যা ধীরে ধীরে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এতেও শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়নি। তারা ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। যে কারণে দাবি আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকালও গাজীপুরে বিক্ষোভে নামেন বেশকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক নারী শ্রমিক নিহত হন। দুপুরের এ ঘটনার পর শেষ বিকালে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের এক সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতির একপর্যায়ে গতকাল গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পরও শ্রমিকদের আন্দোলন দুঃখজনক। দাবি আদায়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা, মালিকপক্ষের অনমনীয়তা, সবমিলিয়ে চরম পর্যায়ে যাচ্ছে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ। সমাবেশেরও ডাক দিচ্ছেন শ্রমিকরা।যা মোকাবিলা সরকারের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বুধবার সকালে বিক্ষোভে নামেন গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও জরুন এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্ট লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্ট ও বেস্টঅল সোয়েটারসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে সকাল ৮টার দিকে কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে মিছিল করতে থাকেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া, বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেট হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যান উত্তেজিত শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের সরাসরি গুলিতে আঞ্জুয়ারা ইসলাম নামের এক গার্মেন্ট কর্মী নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সহকর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ তৈরি হয়। যার ফলে বিকালেও ফের সংঘর্ষে জড়ান তারা। এদিকে শ্রমিক নিহতের জেরে কোনাবাড়ি এলাকায়ও আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের এপিসি কারে এক বিস্ফোরণে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে একজনের হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহত সব পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এসময় জালাল উদ্দিন নামে এক পোশাক শ্রমিকও পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আতঙ্কে এলাকার সবধরনের ছোট-বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। 

সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই নতুন মজুরিতে সন্তুষ্ট নন, মজুরি সাড়ে ১২ হাজার হলে কম হয়ে যায়। এতে আমরা খুশি নই। যদি একজন হয়, তাহলে হয়তো চলতে পারবে। তা না হলে বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল ও অন্যান্য খরচ দিয়ে এই মজুরিতে চলা যায় না। মজুরি খুব বেড়েছে বলে মনে হয় না।’ নিহত পোশাকশ্রমিকের স্বামী জামাল বাদশা বলেন, আঞ্জুয়ারা ইসলাম গার্মেন্টে চাকরি করত। গতকাল বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। এর মধ্যে গার্মেন্ট ছুটি ঘোষণা করে। সে বাসায় আসার কোনো গলি খুঁজে না পাওয়ায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পরে পুলিশের করা গুলি তার মাথায় এসে লাগে এবং ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সেখান থেকে আঞ্জুয়ারাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।’ আমি সরকারের কাছে আমার স্ত্রী হত্যার বিচার চাই।’   

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, ‘আমরা এই নতুন মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করছি। চারজনের একটি পরিবার কোনোভাবেই বর্তমান বাজারে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে চলতে পারবে না। মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে মালিকপক্ষকে খুশি করারই প্রস্তাব। আমরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার যে দাবি করেছিলাম, সেটি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নতুন মজুরি কাঠামোকে প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল শুক্রবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার জানান, মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায়ে ১১ সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে শুক্রবার তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের সর্বনিম্ন গ্রেডের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্ট অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত একে ‘প্রহসনমূলক মজুরি’ আখ্যা দিয়ে বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান। 

এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বর্তমানের তুলনায় নিম্নতম মজুরি বাড়ছে মাত্র ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। অথচ ২০১৩ সালেই পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত ৪৬ বছরের মধ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে, সেখানে ৫ বছরের আগের মজুরির চেয়ে মাত্র ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি কোনোভোবেই পোশাক শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে না। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে মজুরি বোর্ড। সর্বশেষ পঞ্চম বৈঠকে ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব থেকে সরে আসে মালিকপক্ষ। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে পোশাক মালিকরা মজুরি আরও বাড়াতে সম্মত হন। তবে তারা মজুরি কত বাড়াবেন সর্বশেষ বৈঠকে তা স্পষ্ট করেননি। শ্রমিকপক্ষও আগের দেয়া ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাবে অনড় ছিল। তবে ষষ্ঠ বৈঠকে দুপক্ষই ন্যূনতম নতুন মজুরি সাড়ে ১২ হাজারে সম্মত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ানো হয়েছিল পোশাক শ্রমিকদের বেতন, যা কার্যকর হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন করছিল। আমরা তাদের বলেছিলাম ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে, প্রয়োজনে কাজ বন্ধ রাখতে ও কোনো কারখানায় ভাঙচুর না চালাতে। কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা না শুনে অন্য কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে নামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে মালিকপক্ষ নতুন মজুরি কাঠামোকে দেখছে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে। তারা নতুন কাঠামোকে গ্রহণ করলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘নতুন মজুরি কাঠামোতে শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বায়ারসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে নতুন কাঠামো বাস্তবায়ন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হবে।’
 

Link copied!