ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত উপলক্ষে সুধীসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

সক্ষমতা ও সাফল্যের প্রতীক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৬, ২০২৪, ১২:০৯ এএম

সক্ষমতা ও সাফল্যের প্রতীক
  • জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে
  • দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সাফল্যের প্রতীক পদ্মা সেতু। রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চল যুক্ত হয়েছে এ সেতুর মাধ্যমে। নানামুখী সমালোচনার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালের ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হয়। সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও দুবছর পর গতকাল শুক্রবার সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করল, সে জাতি কেন মাথা নিচু করে চলবে। অকুতোভয় জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। যখন ক্ষমতা ছিল না, বিদেশে গেছি; বাংলাদেশের নাম শুনলে কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করত— এটা কী ভারতের কোনো অংশ? এ দেশে তো শুধু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। মিসকিন হিসেবে আমাদের হিসাব করা হতো। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট, ব্যথার ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে, অনেক বাধা অতিক্রম করে নির্মাণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন।  প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতু থিম সং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দেয়া এই সেতু এখন একটি পর্যটন স্থানও। আর্থিক, প্রকৌশল ও রাজনৈতিক ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২২ সালে দীর্ঘতম সেতুটি উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের। এ সেতুর জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মার দুই পাড়ের মানুষসহ সমগ্র দেশবাসী। এরপর ২০২৩ সালে চালু করা হয় রেলপথ। এবার সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বপ্নের এই সেতু প্রকল্পের কাজের সমাপনী ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মূল সেতুর কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।  পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা বলে এ প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাগুলো। পরে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষদিকে সেতুর কাজ শুরু হয়। মূলত ২০১২ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করে, যদিও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। 

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে সন্দেহজনক সব সরকারি কর্মকর্তাকে অবিলম্বে ছুটিতে না পাঠালে বিশ্বব্যাংক সব সাহায্য বন্ধ করে দেয়ারও হুমকিও দেয়। বিব্রত বাংলাদেশ সরকার সঙ্গে সঙ্গেই ‘সন্দেহজনক’ সব সরকারি কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠালেও বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত ১.২ বিলিয়ন ডলার সাহায্য ফিরিয়ে নেয়। পাঁচ বছর পর কানাডার আদালতের রায়ে পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস গ্রহণের সব অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং নির্মাণ সহযোগী কোম্পানি এসএনসি, লাভালিনের তিন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও পূর্বের ‘ঘুস প্রদানের অভিযোগ’ থেকে মুক্ত দেয়া হয়। সাত বছরের নির্মাণকাজ শেষে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৬ জুন সকালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় পদ্মার বিশাল জলরাশির ওপর নির্মিত সেতুটি। যেটি দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ জেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। সহজ হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে গোপালগঞ্জ জেলার যোগাযোগব্যবস্থা। পিছিয়েপড়া এই জেলা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ বাড়িয়েছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়ছে বেকারদের কর্মসংস্থানও। পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগব্যবস্থাই সহজ করছে না, এতে শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও শিল্প পর্যটনসহ বেশ কিছু খাতে অর্থনৈতিক উপযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর পাল্টে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র, মানুষের জীবনযাত্রার ধরন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মধ্যে অন্যতম বাগেরহাট। এই জেলায় বেড়েছে পর্যটক, কর্মসংস্থান। এছাড়া মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি হয়েছে, কৃষি খাতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। কৃষকের ফসল পচে যায় না আর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া কিংবা শরীয়তপুর-জাজিরা ঘাটে। অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে আর অপেক্ষা করতে হয় না ফেরির জন্য। এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে স্বস্তির হাসিতে হাসছে সাধারণ মানুষ। শিল্প-বাণিজ্যে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে মাদারীপুর জেলায়। যে জেলার মানুষকে কাজের জন্য যেতে হতো রাজধানীতে। তারা এখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হওয়ার ফলে নিজ জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছেন। এ সবকিছুর মূলে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। জেলায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিল-কারখানা, যা এই দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প ও বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বদলে গেছে মাদারীপুরের অর্থনীতির চিত্র। এখানে মিল-কারখানাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কারখানা হয়েছে। 

এ অঞ্চলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে গবাদিপশুর খামার, হাঁস-মুরগির খামার, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, মিল-কারখানা, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উন্নতমানের বেসরকারি হাসপাতাল এবং স্কুল-মাদ্রাসা নির্মাণ হচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর ২২ মাসে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রাত ১২টায় এ টোল আদায়ের মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৯ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পদ্মা সেতুতে এক দিনে সর্বোচ্চ চার কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। ওইদিন দুই প্রান্ত দিয়ে ৪৫ হাজার ২০৪টি গাড়ি পারাপার হয়। গত দুবছরে পদ্মা সেতু দিয়ে এক কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে প্রায় ১৯ হাজার। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা।
 

Link copied!