ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা

নির্মমতার ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৭:৪৯ পিএম

নির্মমতার ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র
  • হামলা থেকে বাদ পড়েনি হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও রেলস্টেশন
  • ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় গণমাধ্যমের গাড়িতেও
  • গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টার্গেট করে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকার কর্তৃক জারি করা পরিপত্র গত ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার পর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটির পর কোটা সংস্কার দাবিতে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে আন্দোলন ছিল সভা-সমাবেশ-মিছিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংসতায় রূপ নেয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আন্দোলনরতরা। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস, রেললাইন স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সারা দেশে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও বহাল ছিল কারফিউ। কারফিউর প্রভাবে দেশজুড়ে থেমেছে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর। তবে ক্রমেই ফুটে উঠছে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতচিহ্ন। পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতাল, দলীয় কার্যালয় ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টার্গেট করে দুষ্কৃতকারীরা যে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে, তার ক্ষতচিহ্ন সহজেই মুছে যাবে বলে মনে করেন না অভিজ্ঞরা। সর্বপ্রথম ১৮ জুলাই রাতে বড় ধরনের আঘাত আসে। সেদিন রাতে যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট। একে একে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ার মেট্রোরেল স্টেশন। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনেও। এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। তাণ্ডব চালানো হয়েছে মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামেও। দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছে বিআরটিএ। ১৯ জুলাই সর্বপ্রথম হামলা চালানো হয় বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে। এরপর ২০ জুলাই হামলা চলানো হয় বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে। 

এ সময় ভবনের বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। মহাখালী ডেটাবেজ স্টোরেজে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় দেশজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। আগুন দেয়া হয় মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবনে। এতে অর্ধশতাধিক গাড়িসহ ভবনে থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনা কেন্দ্রে, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টার পুড়ে যায়। লুট করা হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। মহাখালীতে অবস্থিত আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় এ ভবনের অর্ধশতাধিক গাড়ি, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একাধিক আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে হামলাকারীরা। এতে টিকিট বিক্রির মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সময়সূচির মনিটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, করা হয়েছে লুটপাটও।

সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, দীর্ঘ সময় লাগতে পারে এ দুটি স্টেশন সচল করতে। কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের পাশেই দেশটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। মিরপুর-১০ গোলচত্বরের পাশে বিভিন্ন ব্যাংকের অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনার জানালা ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকার ৫৪টি ট্রাফিক পুলিশ বক্স। গুলশানে ট্রাফিক উপকমিশনারের অফিস ও এসি রমনা, রামপুরা, মহাখালী এবং উত্তরা অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বারিধারা ফায়ার স্টেশনের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। হামলা করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআরের কার্যালয়ে।

এদিকে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। একটি গণমাধ্যমে দেয়া ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে সারা দেশে ১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৯০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের তথ্যে এ সংখ্যা আরও বেশি। শুধু এ চারটি বাহিনীরই ৩১৩টি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের সাঁজোয়া যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রাজধানীর বাইরে নারায়ণগঞ্জে পিবিআই জেলা কার্যালয়, পুলিশ বক্স, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। আগুন দেয়া হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও। নরসিংদী জেলা কারাগারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর করা হয় অস্ত্র লুট।

গাইবান্ধায় রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলা চালানো হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। আগুন দেয়া হয় একাধিক গাড়িতে। বগুড়ায় হামলা চালানো হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ও বোর্ডবাজার আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্স, চৌমাথা পুলিশ বক্স ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া দুটি মোটরসাইকেল, একটি পিকআপ, একটি ট্রাক ও ১০টি সিসিক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় আন্দোলনের সময়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের ১৩টি গাড়িসহ চারটি মোটরসাইকেল। হামলা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একাধিক স্থাপনায়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মাদারীপুর শহরেও নাশকতা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় পুলিশ ফাঁড়ি, যানবাহন ও ফিলিং স্টেশন। ভাঙচুর করা হয় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এছাড়া রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর-১০ মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে সারা দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।’ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শনের পরদিনই গতকাল শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রামপুরার বিটিভি ভবন ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও টেলিভিশনে হাত দেয়নি বা কেউ কখনো দেয়নি। আজকে যারাই টেলিভিশন সেন্টার এভাবে পোড়াল, তারা কারা? তারা কি এ দেশের মানুষ? এ দেশে তাদের জন্ম? প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেসব জিনিস মানুষের সেবা করে, মানুষের কাজ করে, বেছে বেছে সেই জায়গাগুলোতেই তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’


 

Link copied!