নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ৪, ২০২৫, ১২:৩০ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ৪, ২০২৫, ১২:৩০ এএম
কোরবানির ঈদ মানেই ছুরি-চাপাতির ঝনঝনানি। পশু জবাই, মাংস কাটায় মুখ্য ভূমিকা রাখে চাপাতি, ছুরি, বঁটির মতো প্রয়োজনীয় দেশীয় যন্ত্রপাতি। তাই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।
সকাল থেকে রাত অবধি চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। তবে এই ব্যস্ততার মধ্যেও অভিযোগ রয়েছে তাদের।
কামারদের দাবি— অনলাইনের মাধ্যমে এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তাদের বেচাবিক্রি কমে এসেছে। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে, ততই বাড়ছে কামারপাড়ার ব্যস্ততা। সারা বছর নীরব থাকা কামারপাড়া এ সময় যেন জেগে ওঠে নতুনরূপে। হাতুড়ি-হাতের সংলাপে ভেসে আসে টুংটাং শব্দ। দিনরাত চলে উত্তপ্ত লোহাকে বিভিন্ন আকৃতিতে রূপদানের কাজ।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজারের কামারপাড়া ঘুরে দেখা যায় তাদের ভীষণ ব্যস্ততা।
কথা হয় এই লৌহ কারিগরদের ঈদ ছাড়া অন্য সময়ের কর্মব্যস্ততা নিয়েও। ঈদের আগ মুহূর্তের সময় এবং অন্য সাধারণ সময়ে তাদের ব্যবসায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। সারা বছর অনেকটা অলস সময় পার করলেও এই সময়ে ফুরসত মিলে না বিশ্রামের।
কাওরান বাজারের কামারপাড়ার ব্যবসায়ী মো. রাকিব বলেন, ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে আমাদের ডেইলি ২ থেকে ৩ হাজার টাকার বিক্রি হয়। কিন্তু ঈদের আগে সেটা বেড়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। আর শুধু চাঁদ রাতেই বিক্রি হয় ৪০-৫০ হাজার টাকার পণ্য। সারা বছর আমরা যা ব্যবসা করতে পারি না, ঈদের আগে সেটা মোটামুটি হয়ে যায়। ঈদের আগের এই সময়ে ব্যবসা ভালো হলেও কামারপাড়ার এই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অনলাইন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
তারা জানান, অনলাইনে ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় তাদের বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছে। ১০ বছর বয়স থেকে কামারের পেশা শুরু করেন মো. মনির। ফুপার মাধ্যমে এই পেশায় আসা তার।
তিনি বলেন, কোরবানি ঈদ আসলে তো আমাদের কাজ অনেক বেড়ে যায়। এই সময় আয়ও মোটামুটি ভালো হয়। ঈদ ছাড়া আমার দোকান থেকে অফ সিজনে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু অনলাইনের কারণে এখন মানুষ বাড়িতে বসেই এসব যন্ত্রপাতি কিনে নেয়। এতে দোকানে লোকজন কম আসে। একই সুরে কথা বলেন আরেক ব্যবসায়ী মো. উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, তিন-চার বছর ধরে আমরা অনলাইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। মানুষ এখন আর সরাসরি বাজারে আসতে চায় না। ঘরে বসে অনলাইনে কেনে। অনেকে কিনে ঠকেও যায়। পরে আবার আমাদের কাছে থেকে কিনে নেয়।
এদিকে কোরবানির যন্ত্রপাতি কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, এসব যন্ত্রপাতি প্রতি বছর কিনতে হয় না। একবার কিনলে অনেক বছর পার হয়ে যায়। অনেকে ঈদের আগে আসেন পুরনো দা, ছুরি, চাকু শান দেয়াতে।
আবু সুফিয়ান নামের এক ক্রেতা বলেন, আমার আগের বছরের যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা ধরে গেছে। সেগুলো ধার করাতে নিয়ে এসেছি। আসলে এসব জিনিস তো প্রতিবার কেনা লাগে না। একবার কিনলেই অনেক বছর চলে যায়। নিজের ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে আরেক ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদের প্রস্তুতি নিতে নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে এসেছি। যন্ত্রপাতি ভালো না হলে কাজ ঠিকঠাক হয় না। অনেক আগে একবার কিনেছিলাম, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আবার কিনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বড় স্প্রিং চাপাতির দাম প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, ছোট চাপাতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় বঁটি প্রতিটি ৮০০-১২০০ টাকা এবং ছোট বঁটি ২৫০-৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস আকার ও মান অনুযায়ী ছুরি ৬০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা, ছোট ছুরি ১০০-১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর যন্ত্রপাতি ধার করার পাথর প্রতি পিস ২০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও জানা যায়, কামারপাড়ায় যন্ত্রপাতি শান দিতে বঁটির জন্য ১২০ থেকে ২০০ টাকা, চাপাতি ১৫০-২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
যদিও ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, এই মূল্য তাদের কাছে বেশি মনে হচ্ছে। তারা জানান, এটা আরও কম হওয়া উচিত।