Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

মিঠাপুকুরে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

রুবেল হোসাইন সংগ্রাম, মিঠাপুকুর

রুবেল হোসাইন সংগ্রাম, মিঠাপুকুর

মে ১৬, ২০২২, ১২:৪২ পিএম


মিঠাপুকুরে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

মিঠাপুকুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানক্ষেতে পানি জমায় ধান কাটতে ব্যাপক অসুবিধায় পড়েছেন কৃষক। গত কয়েকদিনে লাগাতার বৃষ্টিতে স্থানীয় নদনদীর পানি বৃদ্ধি এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মাঠের হাজার হাজার হেক্টর পাকা ধান নষ্ট এবং তলিয়ে যেতে বসেছে। উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন জুড়েই কৃষকদের চোখে মুখে বাড়ছে হতাশা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন কোন জমিতে হাঁটু সমপরিমাণ পানি, কোথাও আবার আধাপাকা ধান হালকা বাতাসে পানিতে ভেঙ্গে পড়েছে। কেউ কেউ আবার ধানক্ষেতের পাকা ধান শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

শ্রমিক সংকটের বিষয়টি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা আমার সংবাদকে জানান, এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে স্হানভেদে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। আর একজন শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। একজন শ্রমিকের মজুরি সমান সমান এক'মন ধান। পানিতে ধান কর্তন করে ডাঙ্গায় উঠাতে গিয়ে শ্রমিকেরা তেমন ধান কর্তন করতে পারেনা। ফলে মারাত্মক লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা। 

এদিকে ধান কর্তন করার পর ধান শুকানোর জায়গা এবং মাড়াই করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এতে ধান নষ্ট হয়ে পঁচে যাচ্ছে। পঁচে যাওয়ায় বেপারী এবং পাইকাররা ধান ক্রয় করতে অনিহা প্রকাশ করে সুযোগে ধানের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। ধান মাড়াই এবং খড় শুকাতে কৃষকরা উঁচু স্হান হিসেবে রংপুর হাইওয়ে সড়ক কিংবা আঞ্চলিক মহাসড়ক গুলোতে ধান মাড়াই করছেন। 

এরফলে বাড়ছে মোটরসাইকেলসহ নানান দুর্ঘটনা। সামান্য সূর্য উঁকি দিলেই আঞ্চলিক আর গ্রামীণ পাকা রাস্তাগুলোতে ধান আর খড় শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কিষাণ-কৃষাণী আর শ্রমিকরা। উপজেলা প্রশাসন বারবার হাইওয়ে সড়কে ধান মাড়াই কিংবা শুকাতে নিষেধ করার পরও থামছেনা ধান মাড়াই। এতে বিভিন্ন সময়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

ধান কর্তনে ব্যস্ত শ্রমিক দলের কয়েকজনের সঙ্গে খোড়াগাছ ইউনিয়নের রুপসি গ্রামে কথা হলে তারা জানান, তারা পাশ্ববর্তী রানীপুকুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ জনের একটি টিম এসেছেন। বিঘা অনুযায়ী তারা চুক্তিতে ধান কর্তন করছেন।

গতবার বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ৩০০০/৩৫০০ টাকায় তারা ধান কর্তন করেছেন। কিন্তু এবার বৃষ্টির আগে কয়েক দিন বিঘা প্রতি ৩৫০০ টাকায় ধান কর্তন এবং মাড়াই করলেও বৃষ্টির পানি আর বাতাসে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলে পানিতে নেমে ধান কাটায় প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে। 

জমি থেকে কোন কোন সময় ১ কিঃমিঃ, কিংবা দেড় কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে শুকনো জায়গায় ধান মাথায় করে নিয়ে আসা লাগতেছে। এতে শ্রম আর সময় বেড়ে যাওয়ায় বিঘা প্রতি ৫/৬ হাজার টাকা নিয়েও সঠিক মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। 

কৃষকরা শ্রমিক সংকটে পড়ায় কম্বাইন হারভেষ্টার মেসিনের জন্য বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন সুফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্রমিককে বেশী মজুরি দিয়ে ধান কর্তন করছেন। ধান শুকানোর জায়গা এবং রোদ না থাকায় মিল মালিক কিংবা স্হানীয় ব্যপারীদের কাঁচা ধান ৪০ থেকে ১০০ টাকা কম নেওয়ার শর্তে বস্তা করে দিচ্ছেন। এতে ব্যাপক ক্ষতি আর লোকসানে পড়ে সর্বশান্ত ও ঋনের বোঝা চাপার কথাও জানান অনেকে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন আমার সংবাদকে জানান, মিঠাপুকুরে এবার ৩৪০০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। শ্রমিক সংকট সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে ভূর্তকি মূল্যে ২ টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেসিন প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে, পর্যায়ক্রমে আরো তিনটি মেসিন প্রদান করা হবে। ক্ষতিগ্রস্হ কৃষকদের সহায়তায় বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন। 

আমারসংবাদ/এআই 

Link copied!