Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪,

২৬ বছর ধরে কাগজে কলমে পাউবোর কার্যালয়, বাস্তবে ভিন্ন

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

নভেম্বর ২২, ২০২২, ০৬:৪৬ পিএম


২৬ বছর ধরে কাগজে কলমে পাউবোর কার্যালয়, বাস্তবে ভিন্ন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়টি দীর্ঘ প্রায় ২৬ বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। অফিস চলে কাগজে কলমে, কোন কর্মকর্তা কর্মচারী অফিসটিতে থাকেন না। বর্তমানে অফিস ক্যাম্পাসটি ৭জন আনসার ও একজন দারোয়ান পাহারা দিচ্ছেন। নদ-নদী ভাঙন অথবা জরুরী প্রয়োজনে তাদের পাওয়া যায় না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ভুক্তভোগী জনসাধারণ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে বিগত ১৯৭৪ সালে চিলমারী বন্দরকে নদ-নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুবিধার্থে উলিপুরে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়টি স্থাপন করা হয়। প্রায় ১০ একর জমির উপর সুবিশাল অফিস ক্যাম্পাসে ২টি পুকুর ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। কার্যালয়টিতে ১জন এসডিও, ৩ জন এসও, ২জন অফিস সহকারী, ৮জন কার্য সহকারী, ৫জন এমএলএসএস, ২জন দারোয়ান ও ২জন সার্ভেয়ার রয়েছে। নদী ভাঙা দুর্গত মানুষের আগমনে মুখরিত অফিসটি দুর্গত মানুষের সেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু বিগত ১৯৯৬ সালে অলিখিত ভাবে অফিসটি বন্ধ রাখা হয়। আর সেই থেকে অফিসটি তালাবন্ধ রয়েছে। 

তবে কাগজে কলমে অফিসটি চলছে বলে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অফিসটি তালা বন্ধ। গুদামে এবং বাইরে রাখা লোহার গাডার গুলো বৃষ্টি বাদলে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।

কার্যালয়ের নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। তারা নিয়মিত ভাবে বেতন বিল পাচ্ছেন কিন্তু সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এলাকার জনগণ। এলাকার মানুষের দাবী অবিলম্বে অফিসটি জনগণের জন্য চালু করা ইউক।

এলাকার বাসিন্দা আফছার আলী (৭০) অভিযোগ করে বলেন, অফিসটি গত ২৫/২৬ বছর ধরে বন্ধ। দুজন দারোয়ানের মধ্যে শুধু একজন দারোয়ান পাহারা দিতো। এখন ২/৩ বছর থেকে ৭ জন আনসার অফিসসহ অফিস এলাকাটি পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। এই অফিসটি চলাকালীন সময় জমজমাট ছিল। আমরা ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক নদী রক্ষার জন্য আসা মালামাল রেল স্টেশন থেকে অফিসে নিয়ে যেতাম। আবার দরকার হলে নদী এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় অফিস থেকে বের করে গাড়িতে তুলে দিতাম। এতে আমাদের পরিবার গুলো চলতো। এসব দেখার এখন কেউ নেই। এটা কেন এমন হলো, আল্লাহ্ জানে।

একই কথা জানালেন, আব্দুল লতিফ (৫৯) ও ফরিদ উদ্দিন (৬৫)। বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, উপ-বিভাগীয় কার্যালয়টি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না এবং কর্তৃপক্ষ সময় মত জরুরী ব্যবস্থা না নেয়ায় পশ্চিম বজরা, সাদুয়া দামার হাট, সাতালস্কর, কালপানি বজরা, খামার দামার হাট, বগুলাকুড়ার বিরাট জন বসতিপুর্ন এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া গত ৩০ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৬০ পরিবারসহ বিলিন হয়ে গেছে পশ্চিম বজরা কমিউনিটি ক্লিনিক, পশ্চিম বজরা জামে মসজিদ, পশ্চিম কালপানি বজরা জামে মসজিদ, ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুল, কালপানি বজরা ঈদগাহ মাঠ, পুরাতন বজরা কালী মন্দির ও পুরান বজরা বাজার।

উলিপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসটি ব্যবহারের অনুপযোগী। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে সংস্কার করে এরপর অফিস করা হবে। এখন সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে। বিষয়টি আমি আসার আগে থেকে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, উলিপুর অফিস খোলা থাকলেও কেউ বসেন না। তারা কুড়িগ্রাম অফিসে বসেন এবং এখান থেকে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রকল্পের কাজ দেখা শুনা করেন। এখান থেকে বেতন ভাতা ও নিচ্ছেন। জনবল কম, অফিস এবং আবাসিক ভবন গুলোর দুরাবস্থা তাই মেরামত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এসএম

Link copied!