Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

২৬ বছরেও অসম্পন্ন শপথ স্তম্ভের কাজ

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ০৪:২৩ পিএম


২৬ বছরেও অসম্পন্ন শপথ স্তম্ভের কাজ

মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মৃতি চির স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য। তেমনি টাঙ্গাইলের সখীপুরেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত উপজেলার বহেড়াতৈলে শপথস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই স্থানে মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করতে, নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ নিয়ে শপথ করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আর এটিই দেশের একমাত্র শপথস্তম্ভ বলে জানা গেছে।

সখীপুর সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে কচুয়া-কালিহাতী-বহেড়াতৈল সড়কের বহেড়াতৈল বাজারের পাশেই নির্মিত হয়েছে সেই শপথস্তম্ভ। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১৯৯৮ সালে শপথস্তম্ভ উদ্বোধন করার কথা ছিল। তৎকালীন সখীপুর-বাসাইল আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের উদ্যোগেই শপথস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছিল।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের অর্থায়নে আওয়ামী লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম শপথস্তম্ভটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ শপথস্তম্ভ্ভটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এরপর দীর্ঘ ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শপথস্তম্ভটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শপথস্তম্ভটি।

একদিকে উঁচুনিচু টিলার ওপর সবুজ ঘাসের গালিচা, অপরদিকে পানি আর পানি-সব মিলিয়ে অনেক দূর থেকে সুউচ্চ শপথস্তম্ভটি দেখে মন ভরে যায়। লাল ইটের রাস্তাসমৃদ্ধ শপথস্তম্ভটি ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। শপথস্তম্ভটির চত্বরের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর। এ ছাড়াও এখানে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শপথস্তম্ভটির নকশায় নানা বৈচিত্র্য এবং উদীয়মান সূর্যের প্রতীকসহ শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এসএমএ মোত্তালিব বলেন, কাদেরিয়া বাহিনীর হয়ে ১৯৭১ সালের ১০ জুন দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেদিন বহেড়াতৈলে কোরআন, বাইবেল ও গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন।

তিনিও সেদিন শপথ নিয়েছিলেন জানিয়ে আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাস্থল বহেড়াতৈলকে ঘিরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন হলে স্থানটি দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকত।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এমও গণি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একটি অবিস্মরণীয় স্থান এটি। এখানে দুইজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরও রয়েছে। স্তম্ভটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আবেদন জানান। সেই সঙ্গে উপজেলার অবহেলিত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণেরও জোর দাবি জানান।

এদিকে, উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিল অফিস সূত্রে জানা যায়, দুটি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়, এর একটি কাকড়াজান ইউনিয়নের বৈলারপুর গ্রামে অপরটি কহেড়াতৈল ইউনিয়নের কালিয়ান গ্রামে। দুটি বধ্যভূমির মধ্যে একটি হাতীবান্ধার টেকিপাড়া গ্রামে অন্যটি কালিয়ান গ্রামে। স্মৃতিসৌধের মধ্যে রয়েছে পৌরসভার কোকিলাপাবর ও অন্যটি বহেড়াতৈল। এ ছাড়া মহানন্দপুর বিজয় স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ও কালিয়ান উচ্চবিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথক দুটি স্মৃতিস্তম্ভ।

প্রসঙ্গত, সখীপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের চারণভূমি। এই উপজেলায় ১৩ জন কোম্পানি কমান্ডারের অধীনে ১২০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান কমান্ডার ছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম। উপজেলায় ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ ছাড়া ৩৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা গণশহীদ হন। ১২ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ আবদুর রকিব বীরবিক্রম ও হামিদুল হক বীরপ্রতীক নামে দুইজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, ইতিমধ্যেই জেলা পরিষদের অর্থায়নে শপথস্তম্ভের পাশে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করে স্তম্ভের চারপাশে ইটের  দেয়াল তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

কেএস 

Link copied!