Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

‘এগারোটার আগে খুলে না, একটার পরে কেউ থাকে না’

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম


‘এগারোটার আগে খুলে না, একটার পরে কেউ থাকে না’

বেলা এগারোটার আগে কখনই খোলা হয় না বিদ্যালয়। আর দুপুর একটার আগেই ছুটি দেওয়া হয়। একটার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউই থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা দেখতে দেখতে স্থানীয়রা এখন এই কথাটিকে প্রবাদে পরিণত করে ফেলেছেন।

নেত্রকোনার  বারহাট্টা উপজেলার দেওপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিন গিয়ে বিদ্যালয়টি বন্ধ পাওয়া যায়। একটার দিকে কয়েকজন শিক্ষককে পথে পাওয়া যায়। তারা স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এদিকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও জাতীয় পতাকা টানানো পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়ত শিক্ষকরা পতাকা টানানো রেখেই বাড়ি চলে যান। স্কুলের পাশে বাড়ি এমন একজন শিক্ষার্থীকে পতাকা নামানোর দায়িত্ব দিয়ে যান। পরে বিকেলে কোনো এক সময় ওই শিক্ষার্থী পতাকা নামায়।

এলাকাবাসী নানা জায়গায় এই অবস্থার প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পড়াশোনা নিয়মিত না হওয়ায় এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হলে তাদের নিচের ক্লাশে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই স্কুলটি বেলা ১১টার আগে কখনো খোলা হয় না। আর দুপুর একটার পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাওয়া যায় না। তাই এটা এখন এখানকার মানুষের প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের গাফিলতিতে পড়াশোনা না হওয়ায় দিন দিন শিক্ষার্থী কমছে। বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও এর কোনো প্রতিকার হয়নি।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা দেলোয়ার হোসেন লাক মিয়া বলেন, সকাল দশটার কিছু পরে স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বন্ধ দেখেছি। ১১টার দিকে খুলেছে হয়তো। একটার পরে দেখলাম শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ নেই।  এটা নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটা চলে আসছে।  এলাকার সবাই জানে এই স্কুল এগারোটার আগে কেই খুলে না, আর  একটার পরে কেউ থাকে না। এটা এখন এই স্কুলের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেলোয়ার হোসেন লাক মিয়া আরও বলেন, আমার মেয়ে এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। সে রিডিং পড়তে পারতো না। পরে অন্য স্কুলে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। এই হলো পড়াশোনার অবস্থা।

দেওপুর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলের পাশের বাড়ির মো. সোহেল, মিয়া বলেন, এখানে কোনো পড়াশোনা হয় না। শিক্ষকরা এগারোটায় এসে একটায় চলে গেলে পড়াবেন কখন?

গত বছর এই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেছে কাউছার ও ফয়সাল।  তাদের বাড়ি স্কুলের পাশেই। তারা জানায়,  এই স্কুলে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। কোনদিন তারা স্কুলটি দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকতে দেখেনি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল জানায়, কোনদিন দুই সবজেক্টের বেশি পড়ানো হয় না।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহার জানায়, যোহরের আজানের সময় স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।

জানা গেছে, উপজেলার দেওপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ে মোট চারজন শিক্ষক রয়েছেন। আর শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭৫ জনের মতো।
দেওপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন বিশ্বশর্মা বলেন, বদলির কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য আজকে একটু দ্রুত ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিদিনই নিয়মিত স্কুলটি খোলা ও বন্ধ করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া নতুন বই না পাওয়ায় পড়াশোনা করানো যাচ্ছে না। এদিকে স্কুলের যাওয়ার রাস্তাও খারাপ সেকারণে কিছু সমস্যা হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিনয় চন্দ্র শর্মা বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি।

এআরএস

Link copied!