Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪,

ভয়াবহ বন্যার এক বছর

‘বন্যার কথা মনে হলে মন চায় হাউমাউ করে কাঁদি’

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

জুন ১৬, ২০২৩, ০৪:৪২ পিএম


‘বন্যার কথা মনে হলে মন চায় হাউমাউ করে কাঁদি’

‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত। পাগলার দক্ষিণের হাওরে (পাখি হাওর) পানি আর পানি। দক্ষিণা বাতাসে আফালের প্রচণ্ড গর্জন। ঘরে পানি ঢুকবে কল্পনাও করিনি। রাত ৯/১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ি। ১টা থেকে ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। কি করবো। আল্লাহকে ডাকছি আর চিৎকার করে কান্নাকাটি করছি।

বৃষ্টি-বাতাসে আমাদেরকে অসহায় করে দিয়েছিলো। সেদিন মনে হয়েছিলো আর বাঁচবোই না। নিজেস্ব ভাষায় এভাবেই গত বছরের বন্যার বিভীষিকাময় দিনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন মধ্যবয়সী বিধবা গৃহকর্মী সোহেনা বেগম।

তিনি বলেন, সেসব দিন-রাতের কথা মনে হলে মন চায় হাউমাউ করে কাঁদি। শরীরে কাঁপন ধরে; ভাবলেই লোম দাঁড়িয়ে যায়। আর কখনো এমন দিন দেখার কল্পনাও করতে পারেন না তিনি। তবে, যখন আকাশে মেঘ জমে, হাওরে পানি প্রবেশের খবর শোনা যায় তখন মলিন হয়ে উঠে তার মুখ। এমন দুর্বিষহ দিন দেখতে চান না আর।

তিনি জানান, বন্যার একসপ্তাহ পরে যখন বাড়িতে এসেছেন তখন তার আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না। যে চাল দাঁড়ানো ছিলো বন্যা পরবর্তী তুফানে সে চালও উপড়ে গিয়েছিলো। আত্মীয়দের সহায়তায় কোনোক্রমে চালকে টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

এমন দুরূহ দিনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছিলেন তিনি। এই টাকা তার জন্য ‘সাঁতারে জিরিয়ে নেয়ার’ মতো কাজ করেছিলো। সে টাকায় কিছু টিন, বাঁশ কিনে আনেন। পরে শ্রমিক ধরে কোনো রকমে ঘরকে দাঁড় করিয়েছিলেন।

সোহেনা বেগম শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী রমিজ আলীকে হারিয়েছেন ৬ বছর আগে। একমাত্র সন্তান শান্তিগঞ্জের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে টেনেটুনে কোনো রকমে চলছে তার দুঃখের সংসার।

পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের কৃষক আবদুর রহিম জানান, আমরা হাওরাঞ্চলে থাকি। বন্যার সাথে আমাদের পুরোনো সম্পর্ক। বন্যাকে মোকাবিলা করেই বেঁচে আছি। তবে, ২০২২ সালের মতো বন্যা কখনোই আশা করি না। গত বছরের কষ্টের দিনের কথা মনে হলে গায়ে কাটা দেয়।

এ প্রতিবেদন তৈরি করতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। এমন দুর্বিষহ দিন দেখতে চান না কেউই। তবে তাদের দাবি, যদি এমন দিন আসেও তাহলে সরকারি ভাবেই হোক কিংবা ব্যক্তিগত অথবা সাংগঠনিক। 

এইচআর

Link copied!