Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিল্পনগরী

সৈয়দপুরের উন্নয়নে বাজেটের প্রতিফলন নেই

নুর মোহাম্মদ ওয়ালীউর রহমান রতন, (সৈয়দপুর) নীলফামারী

নুর মোহাম্মদ ওয়ালীউর রহমান রতন, (সৈয়দপুর) নীলফামারী

আগস্ট ২০, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম


সৈয়দপুরের উন্নয়নে বাজেটের প্রতিফলন নেই

দেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিল্পনগরী সৈয়দপুর। প্রতি বছর দেড়শ কোটি টাকার ওপরে বাজেট বরাদ্দ হয় নগরীর উন্নয়নে। যার মধ্যে প্রায় ৭৫-৮০ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকে শুধু এখানকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য। অথচ বড় বাজেটের কোনো প্রতিফলন নেই প্রায় দুই কোটি ৬৪ লাখ জনবসতির এ নগরে।

পৌর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার কারণে বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এখানকার জনগণকে। যার অন্যতম সাক্ষী শহরের রাস্তাঘাটগুলো। প্রায় প্রতিটি সড়কেই অব্যবস্থাপনার ছাপ স্পষ্ট। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে পৌরসভার প্রধান সড়কগুলোসহ ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় সব সড়কেরই কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের।

পরিসংখ্যান বলছে, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে শহরের ৮০ ভাগ সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় বহু এলাকার সড়ক। ফলে বৃষ্টির মৌসুম এলেই ড্রেনের নোংরা ও কাদাপানিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনসাধারণকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৪.৮২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার মোট রাস্তাঘাটের পরিমাণ ১৭০ কিলোমিটার। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কারহীন পড়ে থাকায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার পাকা সড়কই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এখন। এ ছাড়াও প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচাই রয়ে গেছে এখন পর্যন্ত।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শিল্প ও ব্যবসা সমৃদ্ধ সৈয়দপুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভার তালিকাভুক্ত হলেও এখানকার রাস্তাঘাটগুলোর বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ। রাস্তায় বের হলে ধকল তো পোহাতে হয়ই; দুর্ঘটনায়ও পড়তে হয় রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের। সেই সঙ্গে নষ্ট হয় সময়, যানবাহন আর পণ্যসামগ্রী। এর আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় নির্মিত বিমানবন্দর ও উপজেলা পরিষদ সড়ক এবং বঙ্গবন্ধু সড়ক ও শহিদ তুলশীরাম সড়ক ছাড়াও বড় সব সড়কে শুধু যানবাহন নয়, পায়ে হেঁটে চলাও বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় মূল সড়কগুলোতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের ব্যস্ততম জিকরুল হক সড়কের জিআরপি মোড়ের উত্তরাংশে খানাখন্দে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও রাবিশ ফেলে সমতল করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি সড়কে একইভাবে রাবিশ ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ফেলায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ শহরজুড়ে।

জয়নাল আবেদীন নামে শহরের এক অটোচালক বলেন, ‘আমরা মরতে বসেছি। শহরের বড় বড় সব সড়ক খানাখন্দে ভরে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় ক্ষতি হচ্ছে যানমালের। অটো, ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল উল্টে আহত হচ্ছে মানুষ। মালামাল নষ্ট হচ্ছে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চালক-যাত্রী সবাই।’

বাঁশবাড়ী এলাকার রিকশাচালক খালেক বলেন, ‘বছরের পর বছর রাস্তাগুলোর এই দুরবস্থা। জনদুর্ভোগ লাঘবে পৌর পরিষদের কোনো উদ্যোগ নেই। কিছু কিছু বড় গর্তে রাবিশ ফেলে ঢেকে দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রাবিশ ও মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে কাদা হয়ে পাকা রাস্তা কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে।’

সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী জিনাত আরা বলেন, ‘কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এর চেয়ে গ্রামগঞ্জের মাটির রাস্তাও অনেক ভালো।’

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা রুহুল আলম মাস্টার বলেন, ‘সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সৈয়দপুর শহরে তার বিন্দুমাত্র দৃশ্যমান নয়। প্রতি বছর পৌরসভার উন্নয়নে দেড়শ কোটি টাকার ওপরে বাজেট বরাদ্দের পরও শহরের ৮০ ভাগ সড়কই মৃত্যুক‚পে পরিণত হয়েছে।

কারণ সড়ক মেরামতের জন্য কোনো কাজই করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। আমরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে বহুবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ বরাবরই নির্বিকার।’

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৬ থেকে ৭ বছর আগে কাজ হওয়া রাস্তাগুলোর সংস্কার না হওয়ায় অবস্থা খুবই খারাপ। দুই বছর অনেক কষ্টে সামাল দিয়েছি। আর পারছি না। আগামী বছর অবসরে যাব। এর আগে বদনাম বা কোনো সমস্যায় পড়তে চাই না। কর্তৃপক্ষ না বুঝলে আমার করার কিছুই নেই।’

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘শহরের সড়ক সংস্কারের জন্য মেয়রকে বহুবার বলেছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময় সড়ক মেরামত না হলে তা শহরবাসীর মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এসব ব্যাপারে পরে প্রশ্ন করা হয় সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহানকে। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দের অভাবে রাস্তার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এরই মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার কাজ করেছি। নতুন বরাদ্দ পেলে শিগগিরই প্রধান প্রধান সড়কগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।’

এইচআর
 

Link copied!