ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

লাভের লোভে বিষবৃক্ষের চাষ

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০১:০২ পিএম

লাভের লোভে বিষবৃক্ষের চাষ
ছবি: আমার সংবাদ
  • তামাক চাষে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির ফাঁদ
  • তামাকের দখলে কৃষিজমি, খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা

কুষ্টিয়ায় বিষবৃক্ষ তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় আশ্বাসের ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে তামাক চাষের ব্যাপকতা। জেলার তিনটি উপজেলা জুড়ে তামাক চাষ হওয়ায় রবি মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষীদের খাদ্যশস্য আবাদে উদ্বুদ্ধ করলেও তামাক কোম্পানিদের লোভনীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য কুষ্টিয়া তিনটি উপজেলায় তামাক চাষ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খাদ্যশস্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষিবিদরা।

এক সময় কুষ্টিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে ধান, গম, আখ, মসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ হতো। খাদ্যশস্য উৎপাদন করে জেলার খাদ্যের অভাব পূরণ করে আসছিল। বর্তমানে ওই সব জমিতে আবাদ হচ্ছে বিষবৃক্ষ তামাক। কুষ্টিয়া জেলার তিনটি উপজেলায়  চলতি মৌসুমে তামাকের আবাদ হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে। ফলে জেলায় খাদ্য শস্যউৎপাদন দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। খাদ্যশস্য ঘাটতির কারণে জেলার বাইরে থেকে ধান ও গম সংগ্রহ করে এ জেলার মিল চাতালের চাহিদা পূরণ করতে হয়।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা টোব্যাকো এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি সহজ সরল চাষিদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বিষবৃক্ষ তামাক চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। যে কারণে অধিক লাভের আশায় চাষীরা খাদ্যশস্যের আবাদ ছেড়ে দিয়ে ব্যাপক হারে তামাক চাষ বৃদ্ধি করেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,  কুষ্টিয়া জেলায় আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ১৬হাজার হেক্টর । সেখানে এবার বোরো আবাদ হচ্ছে মাত্র ৩৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। অপরদিকে তামাক কোম্পানি এগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি ও আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ৩ হাজার ৬৯৬ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৭৮০ হেক্টর এবং মিরপুরে ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।

কুষ্টিয়া, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায় তামাক চাষ হচ্ছে যা অকল্পনীয়। মিরপুরের বারুই পাড়ার গ্রামের তামাক চাষি নজরুল বলছেন, টোব্যাকো কোম্পানিগুলো তাদেরকে নগদ অর্থসহ সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহসহ অধিক মূল্যে তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করায় তারা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের তামাক চাষি আকসেদ আলী বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছে। তামাক পুড়ানোর পড়ে ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির কাছে বেশী দামে তামাক বিক্রি করতে পারবে। আমরার লাভবান হবো। তাই তামাক চাষ করছি। চাষীদের অভিযোগ তারা অনুন্নতভাবে ধান ও খাদ্য শস্যের আবাদ করায় তারা এসব ফসলের লাভ কম পেত। তামাক চাষে এর ব্যতিক্রম হওয়ায় চাষীদের তামাক চাষে আগ্রহ বেড়েছে।

ভেড়ামারার ধরমপুর ইউনিয়নের মসলেম মন্ডল তামাক চাষি বলেন, তামাক চাষে খরচ বেশী হলেও তামাক আবাদে চাষিদেরকে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক জ্বালানো ঘর, পাইপ ও নগদ অর্থ অগ্রিম দিচ্ছে। যে কারণেই চাষীরা তামাক আবাদে ঝুঁকছে।

এদিকে তামাকের কারণে গ্রামাঞ্চলের শিশুদের কোল্ড ডায়রিয়া, নিমোনিয়াসহ হাঁপানী ও কাশির মত রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন  পল্লি চিকিৎসক ডা. বিমল কুমার প্রামানিক।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, চাষীদেরকে তামাক আবাদে নিরূৎসহ করতে ব্যাপক চেষ্টা করা হচ্ছে। চাষিদেরকে তামাক ছেড়ে রবি মৌসুমে বোর আবাদ ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা আবাদের কথা বলা হলেও চাষীরা অধিক লাভের কারণেই তামাক আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারপরেও আমরা মাঠ পর্যায়  চাষিদেরকে তামাক আবাদে নিরুৎসাহীত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসে এবং অধিক লাভবান হবে বলেই চাষীরা তামাক চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদেরকে তামাক আবাদের জন্য অগ্রিম সার, বীজ, কীটনাশকসহ জ্বালানি খরচ প্রদান করছে। সেই সাথে অধিক দামে তামাক খরিদ করছে। এতে করে চাষীরা বেশি লাভবান হচ্ছে বলেই তারা তামাক চাষ ছড়ছে না।

তামাক আবাদের প্রভাব পড়ে খাদ্য শস্যের উপর। তাই কৃষি বিভাগ খাদ্য শস্য ধান, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য চাষীদের মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। চলছে উদ্বুদ্ধকরণ সভা। তাই চলতি রবি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলার খাদ্য ঘাটতি মেটাতে তামাক চাষ বন্ধ করা না হলে আগামীতে এ জেলায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিবে। সেইসাথে জেলাজুড়ে মঙ্গার সৃষ্টি হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে কুষ্টিয়া জেলায় তামাক চাষ বন্ধের জন্য সুশীল সমাজ দাবি করেছে।

এআরএস

Link copied!