জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
মে ৭, ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম
জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
মে ৭, ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম
মাদারীপুরে একটি প্রায় ৪০ বছরের পুরনো বটগাছকে ‘শতবর্ষী’ ও ‘অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন’ দাবি করে গুজব ছড়ানো এবং তা কাটা ঘিরে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গাছ কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পরে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং আয়োজিত হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামে হান্নান হাওলাদারের পতিত জমিতে বটগাছটি জন্ম নেয় প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে। গাছটি বড় হলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক এখানে পূজা শুরু করে। পরে এটি ঘিরে গুজব ছড়ায় যে, বটগাছটির অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। অনেকেই গাছে মোমবাতি জ্বালানো এবং লাল কাপড় বাঁধার মাধ্যমে মনস্কামনা পূরণের বিশ্বাসে যুক্ত হন।
সম্প্রতি জমির মালিক হান্নান হাওলাদার বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে গাছটি ১,৫০০ টাকায় স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। ক্রেতা পরে গাছটি একটি মাদ্রাসায় দান করেন, যাতে তা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৫ এপ্রিল সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গাছ কাটতে গেলে একজন ব্যক্তি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। সেখানে গাছটিকে শতবর্ষী ও অলৌকিক হিসেবে তুলে ধরা হয়। ভিডিওটি মুহূর্তে ভাইরাল হয় এবং জেলায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
ঘটনার পর বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছ কাটা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বুধবার উপজেলা হলরুমে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সেখানে মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “তদন্তে দেখা গেছে, গাছটির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এটি শতবর্ষী নয়। যেহেতু গাছটি ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই মালিক আইনগতভাবে গাছ কাটতে পারেন। এতে কোনো আইনি ব্যত্যয় ঘটেনি।”
জমির মালিক হান্নান হাওলাদার বলেন, “আমি বাড়ি নির্মাণের জন্য জমিটি প্রস্তুত করছি। গাছটি জমির বেশিরভাগ জায়গা দখল করে ছিল, তাই তা বিক্রি করেছি।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) চাতক চাকমা বলেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “নিজের জমির গাছ কাটা মালিকের অধিকার। কেউ এ ধরনের বিষয়কে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করলে, সেটিও আইনের আওতায় আনা হবে।”
ইএইচ