Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫,

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি উদাসিন প্রশাসন

মাদারীপুরে বিদ্যালয়গুলোতে চলছে রমরমা প্রাইভেট পড়ানোর বাণিজ্য

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মে ৩১, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম


মাদারীপুরে বিদ্যালয়গুলোতে চলছে রমরমা প্রাইভেট পড়ানোর বাণিজ্য

মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে প্রাইভেট পড়ানোর রমরমা বাণিজ্য। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ নীতিবিরোধী। 

অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ মদদে এই কার্যক্রম চলছে।

জেলা ও উপজেলায় এ বিষয়ের ওপর একটি মনিটরিং কমিটি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অনেক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রশ্ন উঠেছে, তাদের অনৈতিক সহযোগিতার কারণেই কি শিক্ষকরা এমন দুঃসাহস দেখাতে পারছেন?

শিক্ষকদের মূল আগ্রহ এখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চেয়ে প্রাইভেট ক্লাস নেওয়ার দিকে। অভিযোগ রয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি শিক্ষক কর্তৃক পরিচালিত প্রাইভেট ক্লাসে না পড়ে, তবে তাকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয় অথবা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীরা।

মাদারীপুর পৌরসভার চরমুগরিয়া এলাকায় অবস্থিত চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চরমুগরিয়া মার্চেন্টস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দিনের পর দিন শ্রেণিকক্ষে বসে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানকার প্রায় সব শিক্ষকই এ ব্যবসায় জড়িত। তাদের প্রাইভেট থেকে মাসিক আয় ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত—যা সরকারি বেতনের কয়েক গুণ বেশি।

চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও শিক্ষা) ফাতিমা আজরিন তন্বী এবং মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. সজীব—উভয়েই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবস্থার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও, ডাসার উপজেলার ডিকে আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ও সদর উপজেলার মিঠাপুর লক্ষ্মী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। জেলার আরও অনেক স্কুলেই রয়েছে একই রকম অভিযোগ।

 ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা-২০১২’-তে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ বিধি অনুযায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমপিও স্থগিত, বেতন বন্ধ, বরখাস্তসহ নানা ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই নীতিমালার প্রয়োগে ব্যর্থ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও শিক্ষা) ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।

চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন হাওলাদার দাবি করেন, তারা ‘অতিরিক্ত ক্লাস’ পরিচালনা করছেন এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। তবে ক্লাসের আয়-ব্যয় হিসাব, হাজিরা খাতা বা ছাত্রসংখ্যা সম্পর্কে তার কোনো তথ্য নেই।

মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার আব্দুল হামিদ অবৈধভাবে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. সজীব বলেন, "বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"

শিক্ষকদের এহেন আচরণ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্ন তুলেছে জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। শিক্ষা নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

ইএইচ

Link copied!