জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
জুন ১, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
জুন ১, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
মাদারীপুর জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। মাঝেমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কয়েকজন শ্রমিককে আটক করে জেলহাজতে পাঠালেও, প্রকৃত হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পেটের দায়ে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা জেল খাটলেও, মূল পরিকল্পনাকারীরা থেকে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। প্রশাসন শ্রমিক আটক করে জানান দেয় যে তারা বালু উত্তোলন বন্ধে কাজ করছে, কিন্তু মূল হোতাদের নাম উঠলেই প্রশাসনের মুখে নেমে আসে নিরবতা। তখন কেবল বলা হয়—“ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই চিত্র নতুন নয়। অভিযান চলে, আবার শুরু হয় আগের মতোই ড্রেজিং। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, মোটা অঙ্কের লেনদেন কি প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সাথেও সম্পৃক্ত? আর সেই কারণেই কি মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে?
সরেজমিনে দেখা যায়, আড়িয়াল খাঁ কুমার নদে সারি সারি বল্কগেট জাহাজ বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখান থেকেই ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে, যা ওই জাহাজে ভরে বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো হয়। একটির কাজ শেষ হলে আরেকটি বল্কগেট ড্রেজারের কাছে গিয়ে বালু তোলে—এইভাবেই রাত-দিন চলছে অবৈধ বালু ব্যবসা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই ব্যবসার পেছনে কিছু প্রভাবশালী নেতা সক্রিয় ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর ভেবেছিলেন বালু উত্তোলন বন্ধ হবে, কিন্তু হয়েছে উল্টো—এখন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেই জানান, বালু ব্যবসার বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাদের হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি হামলার শিকারও হতে হয়।
এই বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে দুই ভাইসহ চারজনকে মসজিদে ঢুকে কুপিয়ে হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া সাবাব বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। অনেককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মূল হোতারা যারা পেছন থেকে এই কাজ পরিচালনা করেন, তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। চাইলে পুলিশ মামলা করে তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনতে পারে।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান এ বিষয়ে বলেন, “জমি বা নদী জেলা প্রশাসকের অধীনে। তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না।”
জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং জড়িতদের মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়া হচ্ছে।” তবে অবৈধ বালু উত্তোলনের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দেননি।
ইএইচ