Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫,

মাদারীপুর-১ আসন

মনোনয়ন পেতে বিএনপির একাধিক নেতার দৌড়ঝাঁপ

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

জুন ২, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম


মনোনয়ন পেতে বিএনপির একাধিক নেতার দৌড়ঝাঁপ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক নেতা। তারা এলাকায় জনসভা, কর্মিসভা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় দলীয় অভ্যন্তরে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শিবচর উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই নূর-ই-আলম চৌধুরী ওরফে লিটন চৌধুরীর একক কর্তৃত্ব ছিল শিবচর উপজেলায়। তার কথাই ছিল চূড়ান্ত। 

গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এখানে কোনো বিরোধী দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। তবে ক্ষমতার পালাবদলে এখন বদলে গেছে সেই চিত্র। বর্তমানে লিটন চৌধুরী পালাতক, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধঘোষিত হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিয়েছেন। যারা এলাকায় আছেন, তারা কেউ নীরব থাকলেও কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।

বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় লাভবান হচ্ছেন এসব তথাকথিত সুযোগসন্ধানী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন—শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামাল জামান, সাবেক সংসদ সদস্য নাবিলা চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী ও উপজেলার সাবেক সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান।

প্রত্যাশী নেতারা শিবচরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন, ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং অনেকে আগেভাগেই ভোট চাইতে শুরু করেছেন। এতে করে প্রত্যেক নেতা নিজ নিজ অনুসারী নিয়ে আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, যা এখন উপজেলা সদর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে নিয়মিত ছোট-বড় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে এসব গ্রুপ।

এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রার্থী মাওলানা সরোয়ার হোসেন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন এবং ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করেছেন।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার সুযোগে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টুও মাঠে নেমেছেন জনমত গঠনে। তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাবিলা চৌধুরী বলেন, “আমি সবসময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমার শ্রম ও ত্যাগ দলের নেতাকর্মীদের মতোই হাইকমান্ডও জানে। আমি আশাবাদী, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে, আরও কয়েকজন নেতা মনোনয়ন চাইছেন। এতে করে বিএনপিতে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে, যা এখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তার পক্ষেই কাজ করব।”

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী বলেন, “শিবচর আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। এখানে জামায়াত বা জাতীয় পার্টির তেমন কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলেই সহজে এমপি হওয়া যাবে। তাই একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দলের দুর্দিনে কার অবদান বেশি ছিল, সেটি দল নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে। আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাব।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শিবচর উপজেলা আমির ও প্রার্থী মাওলানা সরোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় সমাবেশ করেছি। হাট-বাজারে বৈঠক করছি। এসব বৈঠকে আমরা ৫৩ বছরের ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে দেশকে বাঁচাতে জামায়াতকে একবার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, “বিএনপি একটি বৃহৎ দল। একটি আসনে একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইতেই পারেন। এতে করে গ্রুপিং হওয়াটা দোষের কিছু নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এখন দেখার বিষয়, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে সবাই সমর্থন করবে কিনা। যদি না করে, তাহলে সে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না।”

ইএইচ

Link copied!