Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫,

মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র

গবেষণার নামে কোটি টাকার অপচয়, নেই জবাবদিহিতা

মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরা প্রতিনিধি

জুন ১৬, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম


গবেষণার নামে কোটি টাকার অপচয়, নেই জবাবদিহিতা

মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র এখন দুর্নীতি, অপচয় ও অনিয়মের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান কোনো গবেষণা কার্যক্রম না থাকলেও প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। 

স্থানীয় কৃষক ও সুধী সমাজের অভিযোগ, সরকারি অর্থে পরিচালিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।

সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা ৮টি বাসা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেওয়া হলেও এসব ভাড়ার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত মাঠে নেই কোনো গাছপালা বা ফসল—ফাঁকা মাঠেই চলছে কার্যক্রমের নামে দেখনদারি।

২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণ, বাউন্ডারি নির্মাণ, যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, সার ও মাটি বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও এসব বিষয়ে কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে কোনো তথ্য দিতে নারাজ।

জাতীয় একটি দৈনিকের কয়েকজন প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করে ভয়ভীতি দেখান। মৌসুমী ফল, মাছ বিক্রি এবং ভুয়া বিল-ভাউচার সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াতে কর্মকর্তারা নীরবতা পালন করেন।

সম্প্রতি ঈদের ছুটির সময় অফিস চত্বরে উৎপাদিত আম ও কাঁঠাল বিক্রির সময় স্থানীয়রা দুইজন কর্মচারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। সেনাবাহিনীকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে চুরির মালামাল জব্দ করে। যদিও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

প্রতিবছর কৃষি উপকরণের নামে ব্যয় হয় লাখ লাখ টাকা, অথচ মাঠে বাস্তব গবেষণার কোনো নমুনা নেই। কৃষকদের দাবি, এসব বরাদ্দ লোক দেখানো কয়েকটি গাছপালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কার্যত এগুলো অর্থ আত্মসাতের কৌশল মাত্র।

অগ্নিকুমার সিকদার নামের এক বৈজ্ঞানিক সহকারী ১৯৯৬ সাল থেকে একটানা একই দপ্তরে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল তৈরির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একই দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩ জন কর্মকর্তা, ১৬ জন নিয়মিত কর্মচারী, ১৯ জন অনিয়মিত, ১৫ জন চুক্তিভিত্তিক ও ১৩ জন মৌসুমী শ্রমিকের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব প্রকট। অধঃস্তন কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ‘চেইন অব কমান্ড’ না থাকায় চলছে চরম অব্যবস্থাপনা।

স্থানীয় কৃষক জয়নাল শেখ বলেন, “প্রতিবছর শুনি কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, কিন্তু মাঠে কোনো ফসল দেখি না। এই অফিস শুধু বিল-ভাউচার বানায় আর সরকারি সম্পদ বিক্রি করে খায়। কৃষকরা কোনো উপকার পায় না।”

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, “গবেষণা কার্যক্রম নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। কিছু প্রশাসনিক সমস্যা রয়েছে, তা দেখভাল করা হচ্ছে। ফল বিক্রির বিষয়টি তদন্তাধীন, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা যায় না।”

সহযোগী প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইকবাল হক বলেন, “কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে কৃষি গবেষণায় ভূমিকা রেখে চলেছে। কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “গবেষণার বাইরের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। বরাদ্দ ও খরচ দেখার দায়িত্ব প্রশাসনিক বিভাগের।”

বৈজ্ঞানিক সহকারী অগ্নিকুমার সিকদার বলেন, “আমি ১৯৯৬ সাল থেকে দায়িত্বে আছি। সব কিছু নিয়মমাফিক হয়েছে। প্রতিবছর নিরীক্ষা হয়। অভিযোগ থাকলে তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী জবাব দেব।”

উল্লেখ্য, মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হলে তা হবে কৃষি গবেষণার খাতে এক ভয়াবহ আস্থাভঙ্গ। এই প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত গবেষণা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

ইএইচ

Link copied!