Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫,

কাশিয়ানীতে চলছে রমরমা প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

জুন ১৬, ২০২৫, ০১:১১ পিএম


কাশিয়ানীতে চলছে রমরমা প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলেছে রমরমা প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকার কারণে শিক্ষার্থীরা দিন দিন স্কুল বিমুখ হয়ে প্রাইভেট ও কোচিং নির্ভর হয়ে উঠছে। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও আগ্রহ দুইই কমে যাচ্ছে, ফলে শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার। প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই এসব বাণিজ্যে জড়িত। 

প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও শিক্ষকরা একে আয়-উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ বাণিজ্য। অনেক শিক্ষক স্কুল চলাকালীন সময়েও প্রাইভেট পড়ান। কেউ কেউ আবার ক্লাস শুরুর আগে দায়সারা পাঠদান করে দ্রুত প্রাইভেট ক্লাস নিতে ছুটে যান।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষক বেশি নাম্বার বা ভালো ফলাফলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। কেউ কেউ এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করেন। 

একইসঙ্গে তারা নোট, গাইড ও প্রশ্নপত্র বিক্রয় করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছেন।

অনেক ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে শ্রেণিকক্ষেই চলছে প্রাইভেট ক্লাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, “যদি প্রাইভেট না পড়ি, তাহলে শিক্ষক ক্লাস টেস্টে ফেল করিয়ে দেন—তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ি।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর, রামদিয়া বাজার, জয়নগর, সাজাইল বাজার, রাজপাট, রাহুথড় বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা ফ্ল্যাট বাসা, টিনের ঘর কিংবা অস্থায়ী ওয়াল সেট ঘর ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন এই রমরমা বাণিজ্য।

মাজড়া আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছিলেন। পরে অন্যান্য শিক্ষকদের আপত্তির মুখে প্রধান শিক্ষক মো. ওলিয়ার রহমান তাকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানোর নির্দেশ দেন।

উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়েও প্রাইভেটমুখিতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে প্রাইভেটের সঙ্গে যুক্ত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর আলম তালুকদার বলেন, “অনেক শিক্ষককে নোটিশ দিয়েছি, তবে কাজ হচ্ছে না।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, “আমরা চাই প্রাইভেট ও কোচিং বন্ধ হোক, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জান্নাত বলেন, “শুধু প্রাইভেট বন্ধ করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে হবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি।”

এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা ও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

ইএইচ

Link copied!