নরসিংদী প্রতিনিধি
জুন ২২, ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় কাঙ্ক্ষিত লটকন উৎপাদন হয়নি। ফলে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা দেখা দিয়েছে। লটকনের জন্য খ্যাত নরসিংদীর উৎপাদিত এই ফল দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু এবার উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।
যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় লটকনের বাজারমূল্য এ বছর তুলনামূলক বেশি, তবে উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। গত বছর বাম্পার ফলনের কারণে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছিল, কিন্তু এ বছর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
নরসিংদীর শিবপুর, বেলাবো, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলার লাল মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও খনিজ থাকায় এসব এলাকায় লটকনের ফলন ভালো হয়। এখানকার মিষ্টি ও রসালো লটকনের কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদীতে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ হেক্টর বেশি। শিবপুর, বেলাবো ও রায়পুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন হারে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের আশা ছিল। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় বাস্তবচিত্র হতাশাজনক।
রায়পুরার মরজাল বাজারের লটকন ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, গত বছর প্রতি মণ লটকনের দাম ছিল ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৬ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১৬০ টাকায়। দাম বেশি হলেও ফলন কম হওয়ায় কৃষকদের লাভ হচ্ছে না।
চাষি মো. সানাউল্লাহ বলেন, “একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে সাধারণত ৭–৯ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর কোনো কোনো গাছে ১ মণও ধরেনি।”
শিবপুর উপজেলার নৌকাঘাটা গ্রামের মো. মজিবুর রহমান জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন পাননি। বেলাবো উপজেলার পাটুলী গ্রামের চাষি অমৃত চন্দ্র মাস্টার জানান, ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেও তিনি তেমন লাভবান হতে পারছেন না।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, “চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে তা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”
ইএইচ