মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
জুলাই ২, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে মানব পাচার ও চোরাচালান আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র দুই মাসে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭২০ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এ সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানি পণ্যও জব্দ করা হয়েছে।
৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের পাঠানো তথ্যমতে, আটককৃতদের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় নাগরিক, ৪ জন দালাল ও ৪ জন মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে ফেরার সময় আটক করা হয় ৩০৪ জনকে—যাদের মধ্যে ১০০ জন নারী, ১০৫ জন পুরুষ ও ৯৯ জন শিশু।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছে ৪১৬ জনকে। এদের মধ্যে ১৮০ জন নারী, ১২৯ জন পুরুষ এবং ১১৭ জন শিশু রয়েছে।
বিজিবির চলমান অভিযানে ভারতীয় ১ হাজার ১২৮ বোতল মদ, ১ হাজার ৬৯৫ বোতল ফেনসিডিল, ১০ হাজার ৩৯০টি ভায়াগ্রা ট্যাবলেট, ২ কেজি ২৭ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি ৪৩০ গ্রাম কোকেন, ১৪ হাজার ৮৯৭ পিস ইয়াবা, ১৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম গাঁজা এবং ১ কেজি ৫২৭ গ্রাম ওজনের ১১টি স্বর্ণবার জব্দ করা হয়েছে। এসব পণ্যের মোট বাজারমূল্য আনুমানিক ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এছাড়া আরও জব্দ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৮টি ভারতীয় ওষুধ, ১২৯ বক্স আতশবাজি, ২টি বাইসাইকেল, ৩টি মোটরসাইকেল, ৮৭টি চশমা ও ৫০০ রুপি ভারতীয় মুদ্রা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত নারী, পুরুষ ও শিশু আটকের ঘটনা এই সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। তারা মনে করেন, পাচারচক্রের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সক্রিয় দালালরা জড়িত, যারা অর্থের বিনিময়ে সহজ-সরল মানুষদের ফাঁদে ফেলছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয়দের সন্দেহজনক চলাফেরা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানিয়েছেন, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি যথেষ্ট নয়; মানব পাচার রোধে প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। অন্যথায় এই ভয়াবহ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে বলে তারা মনে করেন।
ইএইচ