আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর
জুলাই ২, ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি আবাসিক ভবন দীর্ঘদিনের অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবুও বাধ্য হয়ে সেসব ভবনে বসবাস করছেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কোথাও দেয়ালে ফাটল, কোথাও সিমেন্ট খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে।
ছাদের সিলিং থেকে ফ্যান পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির অভিযোগও রয়েছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন ভবনের বাসিন্দারা।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত এসব আবাসিক ভবন এখন বসবাসের অনুপযোগী হলেও ভিন্ন কোনো বিকল্প না থাকায় অনেকে পরিবার নিয়ে ঝুঁকি নিয়েই অবস্থান করছেন। আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনগুলোর বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে বড় ফাটল রয়েছে। অনেক দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। কোথাও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ছাদ ঠেকানো হয়েছে। কোথাও পলিথিন দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
১৯৮৪ সালে নির্মিত ভবনগুলো বর্তমানে অতি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা পরিষদের আওতায় পাঁচটি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসিক ভবন এবং একটি কর্মচারী ডরমেটরি ভবন রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই পরিত্যক্তপ্রায়।
বর্তমানে এসব ভবনে কৃষি সম্প্রসারণ, শিক্ষা অফিস, এলজিইডি, রিসোর্স সেন্টার, মৎস্য অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ, পাবলিক হেলথ, হিসাব রক্ষণ অফিস, বিআরডিবি ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বসবাস করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবনগুলোর জানালা, বাথরুম ও ছাদের অবস্থা ভয়াবহ। যেকোনো ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিনেও কোনো সংস্কার না হওয়ায় অনেকে নিজের খরচে অস্থায়ী মেরামত করে কোনোভাবে টিকে আছেন।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রতিদিন ভয় নিয়ে বসবাস করি। ছাদ থেকে পানি পড়ে, দেয়ালে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়ে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। বহুবার সংস্কারের জন্য বলা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।”
উপজেলা পরিষদের কর্মচারী রাকিব বলেন, “ছাদ ভেঙে পড়ার পর পলিথিন টাঙিয়ে ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে থাকছি। বাসার অবস্থা করুণ, বাথরুম ব্যবহারেরও উপযোগী নয়। অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে পরিবার নিয়ে বাস করছি। বড় দুর্ঘটনা হলে সেটি দুর্ভাগ্য নয়, অবহেলার ফল হবে।”
উপজেলা প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “ভবনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমরা ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না।”
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিদ্র্য মন্ডল বলেন, “জরাজীর্ণ ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
ইএইচ