দিনাজপুর প্রতিনিধি:
জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
‘ক্রেতা আজ বিক্রেতা, ধ্বংস হচ্ছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি’— এই স্লোগান নিয়ে উত্তাল দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকা। অযৌক্তিকভাবে কয়লার দাম কমিয়ে খনিকে লোকসানে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন খনির শ্রমিক–কর্মচারীরা।
সকাল ১১টায় কয়লা খনি এলাকায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, একদিকে বিদেশি কয়লার তুলনায় গুণগতভাবে উন্নত কয়লা উৎপাদন করছি, অথচ সেটাই আজ জলের দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা আর্থিক নয়, অস্তিত্বের লড়াই।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, ১৭৬ মার্কিন ডলার দরের জায়গায় প্রতি টন কয়লা এখন ১০৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা খনির ভবিষ্যৎকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বর্তমানে খনির একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)–ই এখন বিক্রেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে। বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ খনি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ার পার্সন এবং পিডিবির সদস্য (অর্থ) অঞ্জনা খান মজলিস পর্ষদ পরিচালক হওয়ায়, ক্রেতা ও বিক্রেতা একই পক্ষ হয়ে গেছে, যা স্বার্থের সরাসরি সংঘর্ষ।
২০১৮ সালে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু হওয়ার পর সরকার শতভাগ কয়লা ওই কেন্দ্রেই সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ১৭৬ ডলার। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে দাম কমিয়ে ১০৪ ডলার নির্ধারণ করা হয়, আইসিআই (ইন্দোনেশিয়া কোল ইনডেক্স) অনুসারে।
বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৬১৩৭ কিলোক্যালরি/কেজি এবং আর্দ্রতা মাত্র ৩.৩৯ শতাংশ, যেখানে আমদানিকৃত কয়লার গুণগত মান অনেক কম। তারপরও বিদেশি কয়লার দামে খনি থেকে কয়লা কিনে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
প্রতিবাদ সমাবেশে বলা হয়, খনি বন্ধ হয়ে গেলে আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বেন। হুমকির মুখে পড়বে লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা। এলাকায় সৃষ্টি হবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট।
বর্তমানে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার মধ্যে ২ নম্বর ইউনিট ২০২০ সাল থেকেই বন্ধ, ১ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে এবং ৩ নম্বর ইউনিট গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ দিন বন্ধ ছিল। বছরে ১৫ লাখ টন কয়লার চাহিদার বিপরীতে তারা ব্যবহার করছে মাত্র ৭–৮ লাখ টন। ফলে ইয়ার্ডে জমে গেছে সাড়ে ৪ লাখ টন কয়লার বিশাল স্তুপ, যা ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় একটি ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে কয়লার মূল্য নির্ধারণে রিপোর্ট চেয়েছে। তবে সেই রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এর মাঝেই খনি চলে যাচ্ছে লোকসানের দিকে।
শ্রমিক ও কর্মচারীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে— পিডিবির কাছে ১০৪ ডলারে কয়লা বিক্রি বন্ধ, কয়লা বিক্রয় মূল্য বাস্তবায়নে স্বতন্ত্র কমিটি, খনির বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাদের অপসারণ, স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী কয়লার বাজার উন্মুক্তকরণ, বকেয়া অর্থ পরিশোধ।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবিগুলো মেনে না নিলে তারা দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।
বিআরইউ