আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো
জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) আড়াই কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও সড়কের মোড়ে মোড়ে ২৬১টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করেছিল।
সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল নাগরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি। কিন্তু বাস্তবে এসব ক্যামেরা চালু হয়নি, ফলে কোনো সুফলও মেলেনি।
দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এখন অধিকাংশ ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়েছে, অনেক ক্যামেরা ও ক্যাবল চুরি হয়ে গেছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই সিসি ক্যামেরাগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী চালু হয়নি। ফলে গত এক দশক ধরে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলছে অচল ক্যামেরাগুলো।
নগরীর সদর রোড এলাকার বাসিন্দা ইমরান মল্লিক বলেন, “সড়কের মোড়ে মোড়ে থাকা ক্যামেরাগুলো শুধু ঝুলে আছে। দেখা গেলেও বোঝার উপায় নেই, এগুলো দীর্ঘদিন অচল। নিয়ন্ত্রণ বুথগুলোও অরক্ষিত, কোথাও দরজা-জানালা নেই, কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন।”
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাজাবাহাদুর সড়ক, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বান্দ রোড, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, আমতলা মোড়, লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, রূপাতলী গোলচত্বর, জিলা স্কুল মোড়, হাসপাতাল রোড, জেলখানা মোড়সহ বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো অচল।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বিসিসি ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৬ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। ক্যামেরা পরিচালনার জন্য ৮টি নিয়ন্ত্রণ বুথও নির্মাণ করা হয়।
প্রথম দিকে বিদ্যুৎ সংযোগের জটিলতায় ক্যামেরা চালু হয়নি। ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ মিললেও সিটি করপোরেশন এগুলো চালানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার একাধিকবার অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পাননি। এরপর থেকেই ক্যামেরাগুলো অচল হয়ে পড়ে।
সদর রোডের বাসিন্দা পাপ্পু হোসেন বলেন, “সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেও যখন এসব ক্যামেরা চালু রাখতে পারছে না, তখন এসব প্রকল্পের অর্থের হিসাব কে দেবে?” নগরবাসী মনে করছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসব ক্যামেরার গুরুত্ব থাকলেও মেয়র ও কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে পুরো প্রকল্পটাই ভেস্তে গেছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বরিশালের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু বলেন, “আওয়ামী লীগ আমলে যারা মেয়র ছিলেন তারা জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেননি। তাদের কার্যক্রম ছিল অসংগতিপূর্ণ ও দায়িত্বহীন।”
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, “প্রথম থেকেই ক্যামেরাগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী চালু হয়নি। বর্তমানে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও বিসিসির প্রশাসক মো. রায়হান কাওছার বলেন, “নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যামেরাগুলো পুনরায় স্থাপনের বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।”
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় ১২০টি সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেগুলো সংস্কার করে পুনরায় স্থাপন করা হবে।”
ইএইচ