Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

আবাসন সংকট: চবি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

আজিম সাগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আজিম সাগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০৬:১৯ পিএম


আবাসন সংকট: চবি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি), বাংলাদেশের তৃতীয় ও আয়তনে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সমারোহে ঝর্ণা, গিরিপথ, পাহাড় বেষ্টিত শাটল ট্রেনের এক অনন্য বিদ্যাপীঠ। ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে ২১০০ একরের এই ক্যাম্পাস সর্বদা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে। সৌন্দর্য পিয়াসীদের অন্যতম গন্তব্য এই চবি ক্যাম্পাস।

ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সবাই। তবে এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে লুকিয়ে আছে বিষাদের ছাপ, আবাসন সংকট।

দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট যেমন বিস্ময়কর ব্যাপার তেমনি দীর্ঘদিনের চিত্র। প্রতিবছর বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে চার হাজার নয়শ’র অধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণে চবিতে আসে। সে তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা অপ্রতুল। পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন মেস, কটেজ ও আবাসিক ফ্ল্যাটে উচ্চ হারে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। যেখানে পড়ালেখার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ খুবই দুর্লভ। আর নারী শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। শহর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বাসে বা শাটল ট্রেনে যাতায়াতের জন্য নষ্ট হয় বহু মূল্যবান সময়।

একসময়ে দেশের সবচেয়ে বড় আবাসিক হল সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা পাওয়া এই বিদ্যাপীঠে নির্মিত ও নির্মিতব্য হলের সংখ্যা সর্বমোট ১৫টি। যেখানে আসনের দিক থেকে ছেলেদের সবচেয়ে বড় হল শাহ আমানত হল এবং মেয়েদের শেখ হাসিনা হল।

হল সূত্রে জানা যায়, চবির ছাত্র হলগুলোর মধ্যে শাহ আমানত হলে ৬৩২টি, শহীদ আব্দুর রব হলে ৫০৯টি, শাহজালাল হলে ৪৭৫টি, সোহরাওয়ার্দী হলে ৩৭৫টি, আলাওল হলে ২৬০টি, এ এফ রহমান হলে ২৫৭টি ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৭৬টি আসন রয়েছে।

ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে ৭৫০টি, প্রীতিলতা হলে ৫৩১টি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫০৮টি, শামসুন নাহার হলে ৪৮১টি, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে (আংশিক) ৩৯টি আসন রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও অতীশ দীপঙ্কর হল এবং ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল নির্মাণাধীন রয়েছে।

তবে হতাশার দিক, বিগত চার বছর ধরে এসব আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দেয় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর প্রশাসন।

পরে ২০১৯ সালের মার্চে হলগুলোতে পুনরায় আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দিলে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী আবেদনপত্র জমা দেয়। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন মাস পরে নতুন উপাচার্যের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এসে হলগুলোতে আসন বরাদ্দের প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেন।

অবশেষে নানা সমালোচনার মুখে গত ২২ সেপ্টেম্বর আসন বরাদ্দ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এবারে প্রায় অর্ধেক আসনে আবেদন করেনি শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে চালু ১১টি হলের ৪ হাজার ৯২৫ আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৭৮০টি।

হলের প্রতি এমন অনাগ্রহের কারণ ছাত্ররাজনীতি। দীর্ঘদিন হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় না বলে হলগুলোতে রয়েছে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। হলে থাকতে চাইলে ছাত্রলীগ করতে হবে- এটা এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতামত, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত না হলে চবির হলগুলোতে থাকা যাবে না। আছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংকট। তাছাড়া হলের ডাইনিংগুলোতে দাম অনুযায়ী মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের রয়েছে অপ্রতুলতা। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের হলের প্রতি আপাদমস্তক অনাস্থা, অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

এনিয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আসন বরাদ্দ না দেওয়ার কারণে হলের পরিস্থিতি ভালো নেই। গণরুমে অনেকেই গাদাগাদি করে থাকে। হলের খাবার খুব নিম্নমানের।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলেন, প্রশাসনিকভাবে হলের শিট দিবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও আমি আবেদনের করিনি। কারণ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হলে শিট পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হলের যে অবস্থা তাতে পড়ালেখার সুবিধা খুব কম।

এবিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমরা হলের শূন্যে আসন বরাদ্দ দিতে নোটিশ দিয়েছিলাম। কাজ চলছে বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে। যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়াও ইউজিসি থেকে লোকবল পেলে আমরা নতুন হলগুলোও চালু করতে পারবো।

এসএম

Link copied!