Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

‘রুদ্র ‘ছাত্রলীগকে দেখে নিব’ এমন শব্দ ব্যবহার করতে শুনিনি’

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ৩১, ২০২৩, ০৩:১০ পিএম


‘রুদ্র ‘ছাত্রলীগকে দেখে নিব’ এমন শব্দ ব্যবহার করতে শুনিনি’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারির জেরে এক শিক্ষার্থীকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনার কারণ জানতে চাওয়ায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দৈনিক যায়যায়দিনের প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল। 

তিনি ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সোমবার (২৯ মে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই দফায় হেনস্তার শিকার হন তিনি।

তবে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবী করেন, রুদ্র ইকবাল শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেককে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকির এক পর্যায়ে "এই বিচার মানি না। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যুতে ছাত্রলীগ কীভাবে আসে দেখে নিবো।" বলে মন্তব্য করেন এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানারকম হুমকি দেন।

যদিও রুদ্র ইকবাল জানান, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ‘দেখে নিব’ এমন কোন শব্দ ব্যবহার কিরিনি। তারা বিনা উস্কানিতেই আমার ওপর হামলে পড়ে।’

এ ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী, সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বনানী বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হায়াত, প্রভাষক কাজী ফখেরা নওশীন।

এদিকে রুদ্র ইকবালের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রুদ্র ইকবাল রাগান্বিত হয়ে দুই ঠোঁট এক করে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলেছেন, এমন মন্তব্য করেন ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড. বনানি বিশ্বাস। এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তাকে (রুদ্র ইকবাল) আমি চুপ করতে বলতে শুনিছি।’ এসময় তার অঙ্গিভঙ্গি কেমন ছিলো জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঘটনায় বাক্য বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান জানান, ‍‍`আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি, রুদ্র বলেছিল ওকে (আরমানকে) ত দুইবার মারা হয়েছে। তাহলে এখানে মিটমাট কিভাবে হয়? এই বিচার মানি না। তবে ছাত্রলীগকে হুমকি দেয়ার মত কোন বিষয় আমি শুনিনি। মুখে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলেছেন। আমি এরকম কিছু শুনিনি।‍‍`

ঘটনায় উপস্থিত ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হায়াত বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ইকবাল ‘ছাত্রলীগকে দেখে নিব’ এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করেনি। বরং প্রক্টরসহ উপস্থিত শিক্ষকরা মিটমাটের কথা বললে সে প্রশ্ন তুলেছিল আরমান কে বাহিরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এটা কিভাবে মিটমাট হয়? এরপর উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার উপর চড়াও হন।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।

এসময় উপস্থিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। সাংবাদিকদের কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা। তারই ধারাবাহিতায় রুদ্র ইকবাল সংবাদ তুলে আনতে গেলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসার ভয়ে ছাত্রলীগ তার উপর হামলে পড়েন। বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মানববন্ধনে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল আমাদের এ সংক্রান্ত একটি মিটিং রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোমবার (২৯ মে) দুপুর ১২ টার দিকে ইংরেজি বিভাগে ১৫ তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী হীরা ও আরমানের মধ্যে বিভাগেই মারামারির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে আরমান কুমিল্লা শহরে থাকেন আর হীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে থাকেন। মারামারির এক পর্যায়ে হীরা আহত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

এদিকে হীরার পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিচে জড়ো হন। একই বিভাগ হওয়ায় দুপুর ১ টার দিকে রুদ্র ইকবাল পরীক্ষা শেষ করে বের হলে বিভাগটির ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাকে ও তার বন্ধুদের বিষয়টি জানান। মারধরের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১৫ তম ব্যাচের ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫জন নেতাকর্মী অনুষদের নিচে অবস্থান নেন।

এরই মধ্যে বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ আরমানকে মূল ফটক থেকে শহরের গাড়িতে তুলে দেন। গাড়িটি আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত গেলে বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের ঐ নেতা-কর্মীরা আরমানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। এসময় গুরুতর আহত আরমানকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডিসহ বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ হীরাকে দেখতে এবং বিষয়টি মীমাংসা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যান।

ইকবাল মনোয়ারও সংবাদ সংগ্রহের জন্য বঙ্গবন্ধু হলে যান। সেখানে শিক্ষকরা তাদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার এক পর্যায়ে ইকবাল মনোয়ার প্রশ্ন তোলেন, ‍‍`বিভাগের মারামারির বিষয়ে কেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীকে মারধর করলো?‍‍` এতে উপস্থিত ছাত্রলীগের কর্মী অমিত সরকার, আসিফ ইনতাজ রাব্বিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা গায়ে হাত তোলার উদ্দেশ্যে ইকবালের দিকে তেড়ে আসেন। পরে ইকবাল সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসেন।

এ ঘটনায় হীরা মিয়া বলেন, শিক্ষকরা যখন মিচ্যুয়াল করার কথা বলছিলো তখন রুদ্র ইকবাল বলেন মিটমাট কিসের? ওকে (আরমান) তো আবার পেটানো হয়েছে। এসময় তিনি আমার বন্ধুদের দেখিয়ে বলেন, এরা এরা পিটিয়েছিলো। তবে রুদ্র ইকবাল ছাত্রলীগকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। এই মুহুর্তে কথা বলতে পারছি না।

একই ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই ফের সাংবাদিকদের সাথে উচ্চবাচ্য করেন রেজা-ই-এলাহি, মাহি হাসনাইন, আমিনুর বিশ্বাস, ওয়াসিফ, আসিফ এন্তাজ রাব্বি, নূরউদ্দিন হোসাইন, রাকিব হোসাইন, রাকেশ দাস, সাদ্দাম, মাহাবুব, মাসুম, নওশীন, রাফিসহ অন্যান্যরা। এসময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে তেড়ে আসতেও দেখা যায় তাঁদেরকে। এদের মধ্যে রেজা-ই-এলাহি ও তার অনুসারী হেনস্তাকারীদের অনেকেরই নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই।

এসময় ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিক্ষার্থী রেজা-ই ইলাহির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মীরা সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন। এবং উচ্চবাচ্য করেন। এসময় তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখনও আমাকে চিনে না, আমি কে। এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না। সাংবাদিকরা আমাদের কী করবে, দেখে নেব। গুন্ডামির কী দেখছে।’

পদ প্রত্যাশীর কথা বলে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদেরকে পদে আনার কোনো প্রশ্নই আসে না দাবি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘এই মুহুর্তে কুবি ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কমিটি নেই। কেউ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্ম করলে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার দায়ভার নেবে না।

ইনান আরও বলেন, সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।

এইচআর

Link copied!