Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

‘ষড়যন্ত্র রুখে মুক্তির জয়গান প্রতিষ্ঠা হোক শোকাবহ আগস্টের শপথ’

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ১৩, ২০২৩, ০৬:১৭ পিএম


‘ষড়যন্ত্র রুখে মুক্তির জয়গান প্রতিষ্ঠা হোক শোকাবহ আগস্টের শপথ’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘ঘাতকেরা পঁচাত্তরের পনের আগস্ট আমাদের অস্তিত্ত্ব, সত্তা, স্বকীয়তা, আইডেনটিটি এবং সকল দুঃখ মোচনের প্রধান আশ্রয় প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।

তাদের সংকীর্ণ ও লোলুপ দৃষ্টি সেদিন শুধু এইটুকুন বুঝতে পারেনি, বাংলাদেশের বুক জুড়ে বঙ্গবন্ধুর নাম যেভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে, বুলেটে তা মোছা যায় না। বরং গোটা বাংলাদেশ চিরকাল পিতা হত্যাকারীকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেই চলবে। আর বঙ্গবন্ধু চেতনায় চিরভাস্বর হয়ে রইবেন বাংলাদেশ ও বিশ্ববুকে।’

রোববার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘ষড়যন্ত্রের উৎপাটনই শোকাবহ আগস্টের অঙ্গীকার’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে এসব কথা বলেন উপাচার্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০২৩ উপলক্ষে সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মশিউর রহমান।

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘এই শোকাবহ আগস্টে আমাদের অঙ্গীকার হোক- মুজিবকে ভালোবেসে, তাঁর চেতনাকে ধারণ করে উন্নয়নের পথে ধাবিত হওয়া। মানব মুক্তির সকল সোপানে উন্নীত হওয়া আর সমতা, মমতা ও ভালোবাসার একটি অপূর্ব বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, অগণতান্ত্রিক চর্চা, সামরিক শাসনের আস্ফালন আর সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে মানব মুক্তির জয়গান প্রতিষ্ঠা হোক শোকাবহ আগস্টে আমাদের শক্তি সৃষ্টির সম্মিলিত শপথ।

বঙ্গবন্ধু কন্যার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হবার স্বপ্ন শপথে আসুন সকলে সম্মিলিত হই, আসুন সংঘবদ্ধ হই। অশুভকে প্রতিহত করি, গড়ে তুলি দুর্বার ঐক্যে অপূর্ব  সৃজনশীল স্নোতধারা। যেন ধুয়ে মুছে নির্বংশ হয় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘ মুজিবের লড়াই ছিল বিশ্ব মানবতা ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায়। সে দর্শনে তিনি বিশ্বনেতা ও রাজনৈতিক দর্শনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক মহামানব। বঙ্গবন্ধু আমাদের ভালবাসার নাম; আমাদের চেতনার আঁধার, আর বাঙালির সর্বকালের আশ্রয়। বাংলাদেশের আগামীর পথ চলার অনুপ্রেরণা, অনুরণন আর ক্যারিশমার অনুসন্ধানের একমাত্র আশ্রয়- মুজিব আদর্শ। আমরা যতই আধুনিক, অগ্রসর এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ধাবিত হবো বঙ্গবন্ধু ততবেশি আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও অত্যাবশ্যক হয়ে রইবেন।’

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রবন্ধকার ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সমাজকে বঙ্গবন্ধু চিনেছিলেন নির্মোহভাবে। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তায় বস্তুনিষ্ঠতা, স্বচ্ছতা, গভীর বিশ্লেষণ আর সাহসী পদক্ষেপ ছিল এক অপার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাস্তবতা। বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসকে তিনি নিজ হাতে গড়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯৫২’র ভাষার দাবী থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক বিপ্লব-এর প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন অগ্রভাগে থেকে। মানুষকে সম্মিলিত করার সম্মোহনী শক্তি, প্রবল ব্যক্তিত্বে অপরকে প্রভাবিত করার দুর্লভ গুণে বঙ্গবন্ধু নিজেকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠা করেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘তাঁর মতো করে বাঙালিকে ভালোবাসার, দায়িত্ব নেয়ার, কারাভোগ, নির্যাতন ও অত্যাচার সহ্য করার মতো ক্ষমতা আর কোন রাজনৈতিক নেতার জীবনে সমরূপভাবে ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু এক যুগেরও বেশি সময়কাল কাটিয়েছেন কারাগারে। মানচিত্র এঁকেছেন বাংলাদেশের। ধারণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দ, লালন দর্শনকে। রাজনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় কি করণীয়- সে বিষয়ে তাঁর প্রজ্ঞা ছিল অতুলনীয়।

সে কারণেই ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি, হয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কারণ ছিল তাঁর প্রণীত ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচি। যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু লড়াই করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি এর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির স্ব-শাসন নিশ্চিত করা। প্রতিটি নাগরিকের ভেতরে আইডেনটিটি’র নিগুড় বাস্তবতা ও বোধ প্রতিষ্ঠা করা।’

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রথম বিপ্লবে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ অর্জনের পর দ্বিতীয় বিপ্লবে ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যদি প্রতিষ্ঠা পেতো তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বে হয়ে উঠতো নবধারার অর্থনীতি, সমাজদর্শনের এক গণমানুষনন্দিত নতুন ব্যবস্থা। আর এ সব হলে সংকট হতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, সংকট মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থার, সংকট পাকিস্তান নামক উদ্ভট রাষ্ট্রের।

আর সংকট দেশে সুবিধালিপ্সু ক্ষমতালোভী একটি চক্রের। তারা সমস্বার্থের বেড়াজাল গড়ে তুললো। ছক আঁকলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার। বাংলাদেশের স্বপ্ন ও অস্তিত্বকে হত্যার। ১৫ই আগস্ট মূলত: হত্যার নকশা হলো আমাদের লাল সবুজের অর্জনের অনুভুতিকে। প্রতিটি বুলেট এসে একে একে বঙ্গবন্ধুর বুক চিড়ে হত্যা করলো বাংলাদেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে। এক কথায় বাংলাদেশ বিদীর্ণ, বিবর্ণ এবং বুলেটবিদ্ধ হলো ১৯৭৫-এ।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জিয়া রহমান প্রমুখ।

এইচআর

Link copied!